শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৫

শিশুদের এমন সাঁতার প্রশিক্ষণ হোক সর্বত্র

অনলাইন ডেস্ক
শিশুদের এমন সাঁতার প্রশিক্ষণ হোক সর্বত্র

চলছে বর্ষা। চারদিকে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই মৃত্যুর প্রধান কারণ দুটি। একটি শিশুদের সঁাতার না জানা, আরেকটি পরিবারের অসচেতনতা। জন্মের পরপরই তো আর শিশুকে সঁাতার শেখানো যায় না। কারণ, তাকে কথা বলতে ও হঁাটতে শিখতে হয়, জীবনাচরণ শিখতে হয়। এতে ২-৩ বছর সময় তো দেখতে দেখতেই চলে যায়। এ সময়টা শিশুর জন্যে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। মা-বাবা সহ পরিবারের সদস্যদের বাড়ন্ত শিশুকে চোখে চোখে রাখতে হয়। চোখের আড়াল হলেই সে আগুনে হাত দেবে, পানির প্রতি আকর্ষিত হবে, বিপজ্জনক খেলাধুলায় লিপ্ত হবে কিংবা হেঁটে হেঁটে সড়কে চলে যাবে। এমনটি ডেকে আনে শিশুর জন্যে বিপদ। এই বিপদে শিশুর হতাহত হওয়াটা স্বাভাবিক। চার/ পঁাচ বছর বয়স হলে তো শিশুকে শেখাতে হয় লেখাপড়া ও জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার কৌশলগুলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সঁাতার। এই সঁাতার না জানার জন্যে দেশে প্রতিদিন পানিতে ডুবে অন্তত ৪০ জন শিশুর মৃত্যু হয়। সন্তানের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে শিশুকে সঁাতার শেখায় নগণ্যসংখ্যক অভিভাবক। কারণ, সঁাতার শেখানোর মতো পরিবেশ এখন শহরে তো নেই-ই, গ্রামেও অনেক কমে গেছে। ব্যবহারযোগ্য পুকুর-দিঘির সংখ্যা হ্রাসের কারণে এমনটি হয়েছে। এমতাবস্থায় অবস্থাপন্ন তথা আর্থিকভাবে সচ্ছল লোকেরা তাদের সন্তানদের সঁাতার প্রশিক্ষণ দিতে অর্থের বিনিময়ে সঁাতার প্রশিক্ষকের দ্বারস্থ হয়। এমন প্রশিক্ষক সর্বত্র সহজলভ্য নয়। এমন বাস্তবতায় শিশুর সচ্ছল-অসচ্ছল বাবা/মা/ অভিভাবক নিরুৎসাহিত হন এবং শিশুকে সঁাতার শেখাতে আর পারেন না। ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে গেছে অনেক। এটা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। এই উদ্বেগের প্রেক্ষিতে অভিভাবকদের সচেতন করাসহ পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুরোধে বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) বিদেশী অনুদানে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষামূলক কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে এবং সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়। এটি দেখে ও প্রেসার গ্রুপের তদবিরে সরকার এই কার্যক্রমে অর্থায়নে সম্মত হয়। সেমতে গৃহীত প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ চলছে। চঁাদপুরে এ প্রকল্পের সাথে সরকারের পক্ষে সম্পৃক্ত করা হয়েছে শিশু একাডেমিকে। গত বুধবার দেখা গেলো এই প্রকল্পের দৃশ্যমান একটি কর্মকাণ্ড। সেটি হচ্ছে সঁাতার প্রশিক্ষণ।

চঁাদপুর কণ্ঠে এই সঁাতার প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে লিখা হয়েছে, চঁাদপুরে ৬ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুদের সঁাতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কর্তৃক সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সঁাতার সুবিধা প্রদান (আইসিসিবি) প্রকল্পের আওয়তায় মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র ‘পদক্ষেপ’-এর আয়োজনে গ্রুপভিত্তিক শিশুকে সঁাতার প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করেছে। বুধবার (১৬ জুলাই ২০২৫) চঁাদপুর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের পুকুরে এর উদ্বোধন করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত। চঁাদপুর জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. কাউসার আহমেদের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন চঁাদপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল এমরান খান, সঁাতার প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান পদক্ষেপ-এর প্রধান সমন্বয়কারী নুরুন্নাহার রিপাসহ অন্যান্য অতিথি। নুরুন্নাহার রিপা জানান, আমরা গত বছর থেকে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঁাতার না জানা শিশুদের নিয়ে এই সঁাতার কার্যক্রম শুরু করেছি। এ বছরও চঁাদপুর সদরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ থেকে ৬ হাজার শিশুকে বিনামূল্য সঁাতার প্রশিক্ষণ দেবো। এ জন্যে ৫০ জন করে গ্রুপভিত্তিক ছেলে ও মেয়েদের পৃথক সঁাতার প্রশিক্ষক রাখা হয়েছে। প্রতিটি শিশু সবের্বাচ্চ ১২দিনের মধ্যে সঁাতার শিখতে পারবে।

আমরা শিশু একাডেমি ও এনজিও’র মাধ্যমে সঁাতার প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি পর্যায়ক্রমে চঁাদপুর জেলার সকল উপজেলাসহ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের দেশের আনাচেকানাচে অনেক শিশু ও সামাজিক সংগঠন রয়েছে। এমনকি সঁাতার সংগঠনও রয়েছে। যেমন-চঁাদপুরে রয়েছে চঁাদপুর সঁাতার পরিষদ, অরুন নন্দী সুইমিং ক্লাব ও চঁাদপুর সুইমিং ক্লাবসহ আরো কিছু সংগঠন। এ সংগঠনগুলো নিজস্ব উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে কিংবা সুলভে শিশুদের সঁাতার শেখানোর কার্যক্রম হাতে নিতে পারে। এ রকম আগ্রহী সংগঠনকে কোনোরূপ প্রণোদনা দেয়া যায় কিনা সেটা নিয়েও সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে ভাবতে হবে। প্রণোদনা পেয়ে এমন সংগঠনগুলো সঁাতার প্রশিক্ষণের ব্যাপ্তি বাড়াতে পারবে। শুধু শিশু একাডেমি ও পদক্ষেপ (এনজিও)-এর মাধ্যমে সঁাতার প্রশিক্ষণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম দেশের সর্বত্র বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়