প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ০১:২৯
৩ কিলোমিটার সড়ক ৫ গ্রামবাসীর বিষফোঁড়া
হয়নি দেড় দশকেও সংস্কার!

ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের মুন্সিরহাট থেকে উভারামপুর গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘ ১৬ বছর সংস্কার না হওয়ায় এলাকাবাসীর জন্যে বিষ ফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। যানবাহন চলতে গিয়ে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা।
|আরো খবর
বালুর ট্রাক চলাচল করে তৈরি হয়েছে বড়ো বড়ো গর্ত। পায়ে হেঁটে চলাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। যার ফলে এলাকার পাঁচ গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, খুব শিগগিরই এই সড়ক মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে।
সড়কটির মুন্সিরহাট ব্রিজ থেকে উভারামপুর গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ি মাজার পর্যন্ত গিয়ে দেখা গেছে স্থানীয় লোকদের দুর্ভোগের চিত্র। স্থানীয় বিভিন্ন পেশা-শ্রেণির লোকজন জানালেন তাদের দুর্ভোগের কথা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ এই সড়কটির নির্মাণ কাজ হয় ২০০৯ সালে। এরপর আর এই সড়কের কোনো ধরনের সংস্কার কাজ হয়নি। সড়কের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রয়েছে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, বেশ ক'টি কাওমী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং মাজার শরীফ।
এছাড়াও স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী মুন্সিরহাট বাজার, ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদর, জেলা সদরের যোগাযোগের জন্যে এই সড়ক গুরুত্বপূর্ণ। সড়কটি বহু বছর ধরে স্থানীয় কাইতাড়া, উভারামপুর, সমাসপুর, বাশারা ও সুরঙ্গচাইল গ্রামের লোকজন ব্যবহার করে আসছে।
সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক জাহাঙ্গীর বলেন, এই সড়কে যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে খুবই কষ্ট হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এই সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে কোনো রোগী যাত্রী নিয়ে যেতে সমস্যায় পড়তে হয়। সড়কটি দ্রুত পাকা করার দাবি জানাই।
কাইতাড়া গ্রামের বাসিন্দা মামুন হায়দার বলেন, এই সড়ক নির্মাণের পর সংস্কার হয়নি। কিন্তু চলাচলের যোগ্য ছিলো। কিন্তু গত ৮ থেকে ১০ বছর স্থানীয় একাধিক বালু ব্যবসায়ীর ট্রাক চলাচল করতে গিয়ে সড়কে বড়ো বড়ো গর্ত তৈরি হয়েছে।
সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়।
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম বলেন, সড়কের সংস্কার কাজের টেন্ডার হলে ঠিকাদার এসে দেখেন পাকা সড়কের চিহ্নও নেই। যে কারণে আর কাজ হয়নি। বিগত আওয়ামী লীগের সময়ে অনেক জনপ্রতিনিধি এসে কাজ করার ওয়াদা দিলেও পরে আর খোঁজ খবর নেননি।
উভারামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, প্রশাসনকে সর্বপ্রথম বালুর ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে হবে। কারণ সড়কের বেহাল অবস্থার জন্যে ট্রাকই দায়ী। এখন নতুন করে পাকা করা হলে তাদের কারণে সড়কের অবস্থা আগের মতো হবে।
বর্ষা মৌসুমে এই সড়কে দূরের শিক্ষার্থীরা খুবই কষ্ট করে চলাচল করে।
উটতলী নূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, এই সড়কটি বৃষ্টির মৌসুমে চলাচলের অযোগ্য। শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালির কারণে শিশু শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে ময়লা ঢুকে পড়ে। তারা নানা রোগে আক্রান্ত হয়।
এছাড়া বিভিন্ন বয়সী লোকজন এই সড়কে চলাচলের কারণে এলাার্জি জাতীয় রোগে আক্রান্ত হয়। স্থানীয়দের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে সড়ক সংস্কার খুবই জরুরি।
মুন্সিরহাট বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মো. কাইয়ুম বলেন, প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। গত দেড় দশকে এই সড়কের সংস্কার হয়নি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা খুবই কষ্ট করে যাতায়াত করে। এখান দিয়ে কোনো অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে পারে না। একজন জরুরি রোগী নিয়ে চলতেও কষ্ট হয়। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি পাকা করার দাবি জানাই।
উভারামপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, মুন্সিরহাট বেইলি ব্রিজ থেকে উভারামপুর পর্যন্ত সড়কের এই বেহাল অবস্থার কারণে দুর্ভোগ হয় রোগীদের নিয়ে। এখানকার লোকজনের সাথে আত্মীয়তা করতে রাজি হয় না বাইরের লোকজন।
একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা ইসমাইল তালুকদার খোকন বলেন, আমাদের গ্রামসহ আশেপাশের গ্রামের লোকজন বহুবছর অবহেলিত। আমাদের বহু দাবির প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে সড়কের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সড়কটি নির্মাণ কাজে কেউ এগিয়ে আসেনি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে আমাদের এই করুণ অবস্থার কথা জানিয়েছি। আমাদের অঞ্চলের লোকদের দাবি, দুর্ভোগ লাঘবে সড়কটি দ্রুত পাকাকরণ চাই।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান কবির বলেন, অর্থ সঙ্কটের কারণে অনেক সময় সড়ক সংস্কার হয় না। ইউনিয়ন সড়কের পরে গ্রামীণ সড়কের নির্মাণ কাজ হয়। তবে এই সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রাক্কলন তৈরি করে পাঠাবো। অনুমোদন এলে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করা হবে।
ডিসিকে/এমজেডএইচ