প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫২
যেখানে ডাকাতিয়াকে ঠেকাতেই হবে-

চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের উত্তর নানুপুর গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে ফসলি জমি, বসতভিটা ও কবরস্থান বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে প্রায় ২০০ পরিবার। ভাঙ্গন থেকে রক্ষায় বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল ২০২৫) সকালে নদীর তীরবর্তী ভাঙ্গন স্থানে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী। এ সময় তারা ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গন থেকে পৈত্রিক ভিটা রক্ষায় সরকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। সরজমিনে দেখা যায়, জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। দীর্ঘ বছর ধরে নানুপুর এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে বহু ফসলি জমি ও বসতবাড়ি।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা বিএনপির শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আলমগীর আলম জুয়েল, বাগাদী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মহসিন আলম মিয়াজী, ৬ নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন পাটোয়ারী, নিজ গাছতলা গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী ডি এম হাবিব খান বলেন, উত্তর নানুপুর ও গাছতলা গ্রাম ডাকাতিয়া নদীতে ভেঙ্গে যাচ্ছে। ভাঙ্গন রক্ষায় কারো মাথা ব্যথা নেই। দুটি গ্রামকে বর্ষার পূর্বে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করা না হলে গ্রাম দুটি ডাকাতিয়া নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। নদীর তীরে বসবাসকারী মো. শাহজাহান পাটোয়ারী ও শাহাদাত তালুকদার বলেন, নদীর পাশে এই ফসলি জমিগুলো অনেক বড়ো ছিলো। কৃষকরা ফসল ফলাতেন। বর্তমানে প্রত্যেকটা ফসলি জমি এমন অবস্থায় আছে যে, আগামী বছর আর একটাও ফসলি জমি থাকবে না। আমরা গরীব মানুষ, যদি এই ফসলি জমিগুলো ভেঙ্গে যায় তাহলে কীভাবে চলবো ও কীভাবে খাবো? আমাদের দাবি, যদি একটু ব্লক দিয়ে নদীর পাড়গুলো বেঁধে দেওয়া হয়, তাহলে জমিগুলো রক্ষা পাবে। আমরাও চাষাবাদ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে পারবো।
ভাঙ্গন এলাকায় বসবাসকারী মাজেদা বেগম, হনুফা বেগম ও রওশন আর বেগম বলেন, গত ২০-২৫ বছর ধরে আমাদের ঘরবাড়ি, বাগান, ফসলি জমি ডাকাতিয়া নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কত মানুষরে জানাইছি, দেখার মতো কোনো মানুষ আসে না। এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে আমরা কোথায় যাবো, কী করবো? নদী এখন ঘরের মধ্যে বললেই চলে। বর্তমান সরকার যদি নদী ভাঙ্গন থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে তাহলে আমরা বাঁচতে পারবো। নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে মানববন্ধনে এলাকাবাসী নদীর ভাঙ্গন রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানান।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, ডাকাতিয়া নদীর বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন প্রবণতা রয়েছে। ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী কাজ বাস্তবায়নের জন্যে ডিটেল ফিজিবিলিটি স্টাডি করে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা বর্তমানে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এটি পাস হলেই ভাঙ্গন রক্ষায় কাজ করা হবে।
আমরা চাই, এ প্রকল্পটি দ্রুত পাস হোক। পাস না হলে স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত চাঁদপুর সেচ প্রকল্প (সিআইপি) বেড়িবাঁধ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এবং এই বাঁধ ভেঙ্গে গেলে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার এলাকার রঘুনাথপুর থেকে শুরু করে বাগাদী ইউনিয়নের গাছতলা, নানুপুর, হাজরা ইত্যাদি গ্রামে দীর্ঘ দিন ধরে ডাকাতিয়ার ভাঙ্গন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এই প্রবণতা না ঠেকালে শুধু সিআইপি বেড়িবাঁধ নয়, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সহ আরো কিছু প্রকল্প অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবার সম্ভাবনা তৈরি হবে, যেটা চাঁদপুরের জন্যে অনেক বড়ো ক্ষতির কারণ হবে। আমরা সেজন্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙ্গন রোধের প্রকল্প পাস করাতে মরিয়া হয়ে তৎপরতা চালাতে হবে। এ ব্যাপারে এমপি-মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে জেলা প্রশাসক ও বিএনপি-জামাতসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তদবির করাটা অনিবার্য বলে আমরা মনে করছি।