প্রকাশ : ২৮ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৯
চাঁদপুর পৌরসভার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

বকেয়া বেতন, ঈদ ও বৈশাখী বোনাসের দাবিতে চাঁদপুর পৌরসভার বিভিন্ন শাখার ২১০ কর্মচারী পৌর হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় সকল বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সেবা নিতে আসা নাগরিকগণ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ ২০২৫) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পৌরসভার কর্মচারীরা পৌর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে এ বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা বকেয়া বেতন ও বৈশাখী বোনাস না পাওয়া পর্যন্ত পৌরসভার সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এতে পৌরসভায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরে চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. গোলাম জাকারিয়া দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বেতন বোনাসের দাবিতে ক্ষুব্ধ পৌর কর্মচারীগণ পৌর হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সৈয়দ মো. মুশিউর রহমানকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি স্বেচ্ছায় বদলির জন্যে পৌর প্রশাসকের নিকট লিখিত আবেদন করেন। পরে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম ভূঁইয়া, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন হাওলাদারসহ কয়েকজন এসে তাকে তার কক্ষ থেকে উদ্ধার করে হিসাবরক্ষক মো. মনিরুজ্জামান মানিকের কক্ষে নিয়ে বসিয়ে রাখেন। পৌরসভায় উত্তেজনার খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার এএসআই মিজান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। চাঁদপুর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম ভূঁইয়া জানান, পৌরসভার অন্য খাত থেকে কর্মচারীদের বকেয়া রানিং মাসের বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে। এর আগে ঈদ বোনাসও দেয়া হয়ে গেছে। এখন আর বেতন বকেয়া এবং বোনাসেরও সমস্যা নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর পৌরসভার স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে চারশ’র মত কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। পৌরসভার নিজস্ব আয় দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হচ্ছে না। ফান্ডের অভাবে উন্নয়ন কাজও থমকে আছে। জুলাই-আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চরম অর্থ সংকটে ভুগছে চাঁদপুর পৌরসভা। কথা হচ্ছে, এই আর্থিক সঙ্কটের জন্যে কি শুধুমাত্র পৌরসভার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাই দায়ী?
স্মরণকালে চাঁদপুর পৌরসভার কর্মচারীদের বেতন-বোনাস সংক্রান্ত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ গত মঙ্গলবারের মতো দেখা যায়নি। ফেসবুকের মাধ্যমে এই ক্ষোভের ব্যাপক সঞ্চার হয়েছে সাধারণ্যেও, যতোটা না গণমাধ্যমের কারণে হয়েছে। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ উদ্বেগও ছড়িয়েছে বিভিন্ন মহলে।
আর্থিক সঙ্কটসহ নানা কারণে সামগ্রিকভাবে চাঁদপুর পৌরসভার অবস্থা ভালো নয়। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে অতীতের চেয়ারম্যান-মেয়রগণ তদবিরের বশবর্তী হয়ে পৌরসভায় এতোটা নিয়োগ দিয়েছেন, যাদের বেতন-বোনাস দিতেই পৌর কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। পৌরসভায় এমন নিয়োগে অনিয়মের আশ্রয়ও নেয়া হয়েছে বলে কথিত আছে। নিয়োজিত কর্মকর্তাদের, এমনকি কর্মচারীদের কেউ কেউ তো আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছেন। এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতির কারণে চাঁদপুর পৌরসভার রাজস্ব আয়ে ঘাটতি হচ্ছে বলে কথিত আছে। পৌর প্রশাসক একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বের আওতায় চাঁদপুর পৌরসভার হাল ধরে নিশ্চয় সুখে নেই। তারপরও এ পৌরসভার আয় বাড়াতে, অনিয়ম দূর করে স্বচ্ছতা বাড়াতে তাঁকে উল্লেখযোগ্য কিছু না কিছু করতেই হবে, কেননা এর বিকল্প নেই।