প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:২২
সারকোপেনিয়া : বার্ধক্য শুরু হয় পা দিয়ে
![সারকোপেনিয়া : বার্ধক্য শুরু হয় পা দিয়ে](/assets/news_photos/2025/02/09/image-58778-1739103765bdjournal.jpg)
সারকোপেনিয়া হলো এক ধরনের পেশি ক্ষয়, যা সাধারণত বার্ধক্যে ঘটে। বার্ধক্য হলো ষাটোর্ধ্ব জীবন। পা হলো এক ধরনের স্তম্ভ, যার ওপর মানবদেহের সমগ্র ওজন স্থির থাকে।
|আরো খবর
সারকোপেনিয়া সাধারণত বয়স্ক বা পরিশ্রম না করা বসে থাকা জনগণ এবং রোগীদেরকে প্রভাবিত করে, যাদের অন্যান্য অসুস্থতা রয়েছে। এটা মানবদেহের পেশীর সিস্টেমকে প্রভাবিত করে বা শারীরিক কার্যকলাপকে ব্যাহত করে। গভীরভাবে তাকালে আমাদের আশপাশে কিংবা পরিবার পরিজনের মধ্যে এমন লোকজনের দেখা পাবো, যাদের শরীর হাড়ের ওপর শুধু চামড়া দিয়ে মোড়ানো। এদের পেশি নেই বললেই চলে। আবার কারো কারো অল্প পরিমাণে পেশী রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
সারকোপেনিয়ায় আক্রান্ত প্রবীণদের জীবন সীমিত হয়ে যায়। উঠতে বসতে কষ্ট হয়, কিছু ধরার শক্তি কমে যায়, ধীর গতিতে হাঁটেন, চেয়ারে বসা-ওঠা কিছুটা কঠিন, পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে, দাঁড়ানোর সমস্যা, স্বাভাবিক দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে অসুবিধা বোধ করা।
মানুষের ক্রিয়াকলাপ এবং শক্তির ৭০% পায়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। প্রথমেই আমাদের পা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি কেমন সে বিষয় নিয়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই। আমাদের সমাজ পা কে তেমন একটা গুরুত্ব দেয় বলে মনে হয় না। পা কে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, তা হলো-- লাথি মার শালাকে, লাথি মারতে ইচ্ছে করছিল, মুখে লাথি মার, আমার পায়ের যোগ্য না, ওদিকে পা মাড়াবো না, গায়ে পা লাগলো কেন?, পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া বিবাদ চলছে, আপনার পায়ে পড়ি আমাকে মাফ করে দিন, পা ধরে মাফ চাইতে হবে, পা ধরে মাফ না চাইলে মাফ হবে না, পায়ে ধরে টাকা ধার নিয়ে এখন দেবার নাম নেই, আপনি তো আমাদের এলাকায় কখনো পা রাখেন নি, এই এলাকায় যেন আপনার পা না পড়ে।
মোট কথা পা কে তেমন মর্যাদার অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। অথচ পা আমাদের শরীর সারা দিন বয়ে বেড়ায়। আমাদের সমাজটা এমন ভাবে গড়ে উঠেছে যে, সবচেয়ে বেশি কষ্ট যে করবে সেই সবচেয়ে কম ভোগ করবে। যে কৃষক খাদ্য উৎপাদন করে তার ঘরে খাবার না পেয়ে শিশু কাঁদে! যে ট্রাক দূরদূরান্ত থেকে মালামাল বয়ে আনে তার সেবা-যত্ন তেমন একটা হয় না।তুলনামূলক কম পরিশ্রমের প্রাইভেট কার ধুয়েমুছে চকচকে করে রাখা হয়। রাতে বাসায় ফিরে খুব কম মানুষই পায়ের যত্ন নেয়।কোনোরকমে পা দুটো ধুয়ে বিছানায় উঠে যায়। সপ্তাহে নিয়ম করে একদিন পায়ে ম্যাসেজ কিংবা ময়লা পরিষ্কার করেন এমন লোকের সংখ্যা অনেক কম। উচিত হতো প্রত্যেক মানুষ প্রতিদিন অন্তত কুড়ি মিনিট পায়ের যত্ন নিলে।
পায়ের যত্ন নিয়ে আমাদের মধ্যে খানিকটা অনীহা থাকলেও মুখমণ্ডলের যত্ন নিয়ে কোনো অনীহা নেই। বয়স বাড়তে থাকলে মুখে, চোখে বলি রেখা চলে আসে। বলি রেখা আড়াল করতে কিংবা সারিয়ে তুলতে আমাদের মনোযোগ রয়েছে। মনোযোগের অভাব হয় পায়ের যত্ন নেবার ক্ষেত্রে।
সারকোপেনিয়া রোগের চিকিৎসা রিউমেটোলজিস্ট বা জেরিয়েট্রেশনরা দিয়ে থাকেন। এ রোগ নিরাময়ের চাইতে প্রতিরোধই গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন-ডি গ্রহণ করলে সারকোপেনিয়া প্রতিরোধে ভূমিকা রাখা সম্ভব। স্থূলতা এবং সারকোপেনিয়া একে অপরকে শক্তিশালী করতে পারে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, বিপাকীয় ব্যাধি এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
সারকোপেনিয়া সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাবে মানুষকে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
একজন প্রবীণ ব্যক্তি তার পেশী পুনঃ নির্মাণ করতে পারে না। একবার পেশীর সক্ষমতা চলে গেলে তা একেবারেই চলে যায়। সাধারণত যেসব প্রবীণ নাগরিক ব্যক্তিগত সেবা- যত্ন ও পরিচর্যা করার জন্যে সেবা কর্মী বা সাহায্যকারী নিয়োগ দেন তারা দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়েন।
একজন সমাজকর্মী হিসেবে সারকোপেনিয়া প্রতিরোধে নিচের পরামর্শগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে পারি--১. যতোটা সম্ভব দাঁড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
২. সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা, হাল্কা দৌঁড়ানো, সাইকেল চালানো, নিয়মিত হাঁটা সবই দুর্দান্ত ব্যায়াম এবং পেশীর সক্ষমতা রক্ষা করতে সহায়তা করে।
৩. অসুস্থ কিংবা হাসপাতালে ভর্তি প্রবীণকে শুয়ে বসে থাকার পরামর্শ দিবেন না।
৪. বিছানা থেকে না ওঠার পরামর্শ দিবেন না। এক সপ্তাহ শুয়ে থাকলে পেশীর ভর ৫℅ কমে যায়।
৫. সারকোপেনিয়া অস্টিওপরোসিসের চেয়ে বেশি বিপজ্জনক। অস্টিও থেকে সতর্ক থাকতে হবে যেন পড়ে না যায়।
৬. পেশীর দ্রুততম ক্ষতি পায়ের পেশীতে ঘটে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ একজন ব্যক্তি বসে কিংবা শুয়ে থাকলে পা নড়াচড়া করে না।এতে পায়ের পেশীগুলো প্রভাবিত হয়।
৬. বৃদ্ধ বয়সে জীবনযাপনের মান উন্নত করতে আপনজন, প্রিয়জনকে যতোটা সম্ভব হাঁটতে বলুন, যাতে করে তার পেশী নষ্ট হওয়া রোধ করা যায়।
৭. আপনার পা সক্রিয় এবং শক্তিশালী রাখুন। বয়সের সাথে সাথে আমাদের পা সবসময়ই শক্তিশালী এবং সক্রিয় রাখা উচিত।
৮. দুই সপ্তাহ পা নড়াচড়া না করলে আপনার প্রকৃত পায়ের শক্তি ১০ বছর কমে যেতে পারে।
৯. মানব দেহের সবচেয়ে বড়ো এবং শক্তিশালী জয়েন্ট এবং হাড় পায়ে আছে।
১০. প্রতিদিন হাঁটুন যতোটুকু পারেন।সত্তুর বছর বয়সের পরও পায়ের ব্যায়াম করা উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটার অভ্যাস জারি রাখুন।
লেখক : প্রবীণ বিশেষজ্ঞ ; প্রবীণ বিষয়ে লেখক ও কথক।