শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৪৭

দাউ দাউ আগুনে ঘর ভস্মীভূত, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কিশোরের অবিশ্বাস্য উদ্ধার

মো. জাকির হোসেন
দাউ দাউ আগুনে ঘর ভস্মীভূত, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কিশোরের অবিশ্বাস্য উদ্ধার
ছবি : সংগৃহীত

স্থানীয়দের বীরত্বে রক্ষা পেলো প্রাণ: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নিলু শেখের পাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে চারটি ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সৃষ্ট এই আগুন মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখায় চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, দগ্ধ হন তিনজন, যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

জ্বলন্ত ঘরের ভেতর আটকে পড়া কিশোরের বাঁচার লড়াই: অগ্নিকাণ্ডের সময় ১৪ বছর বয়সী কিশোর নিত্যুন সরকার ঘরের একপাশে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে নিজেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালান। আগুন যখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন বাইরে থেকে চিৎকার শুনে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধারে ছুটে আসেন।

প্রথমে কোনো উপায় না পেয়ে স্থানীয়রা বাঁশ দিয়ে জানালা ভাঙার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। সময় কম, আগুনের প্রচণ্ড তাপে মুহূর্তের মধ্যে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে একজন সাহসী যুবক কুড়াল দিয়ে জানালার পাশে কাঠের অংশ ভেঙে ফেলে। সেখান দিয়ে বের করে আনা হয় দগ্ধ কিশোর নিত্যুনকে।

এই উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তের একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দেখা গেছে, ধোঁয়ার কুণ্ডলী আর জ্বলন্ত কাঠের স্তূপের মধ্যে থেকে নিত্যুনকে উদ্ধারের হৃদয়বিদারক দৃশ্য।

আগুনের ভয়াল থাবা ও উদ্ধার অভিযান: স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাড়ির ভাড়াটিয়া দীনবন্ধুর ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়, যা মুহূর্তের মধ্যেই আশপাশের ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী বালতি দিয়ে পানি ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়। তবে আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই চারটি ঘর পুড়ে যায়। প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার মো. সাবেকুল ইসলাম বলেন,"প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ভবনটি সেমি-পাকা হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমরা এলাকাবাসীর সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছি।"

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার অভিযানে ছাত্রনেতা: এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে উদ্ধার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন গোয়ালন্দ উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সবুজ সরদার। শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার পরও তিনি ঝুঁকি নিয়ে নিজেই উদ্ধার অভিযানে অংশ নেন। তার সহায়তাতেই আটকে পড়া কিশোর নিত্যুনকে বের করে আনা সম্ভব হয়।

স্থানীয়রা জানান, সবুজ সরদারের নেতৃত্বে এলাকার যুবকরা তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং দগ্ধদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তাদের সময়োপযোগী পদক্ষেপে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও সহায়তা: এ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাথার ছাদ হারানোর পাশাপাশি নগদ অর্থ, আসবাবপত্র ও মূল্যবান জিনিসপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণের কাজ চলছে।

এদিকে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। আগুনে আহতদের চিকিৎসার জন্য গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নিত্যুন সরকারের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

একটি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট কীভাবে মুহূর্তের মধ্যে কয়েকটি পরিবারের সর্বস্ব হারিয়ে দিতে পারে, তার করুণ উদাহরণ হয়ে থাকল গোয়ালন্দের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। তবে বিপদের সময় স্থানীয় যুবকদের সাহসিকতা ও দ্রুত উদ্যোগের কারণে একটি তাজা প্রাণ মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছে। প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়