প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৫
মিশরে অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রবাসীর মৃত্যু
চাঁদপুরের ফাইজুল দেখতে পেলেন না অনাগত সন্তানের মুখ
মিশরের ইসমায়েলিয়া শহরে নিজ বাসায় রাতের খাবার রান্না করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন চাঁদপুরের মো. ফাইজুল ইসলাম (৩৫) নামের এক প্রবাসী। আহত হয়ে ইসমায়েলিয়ার আবু খালিফা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন আরো দুজন। তারা হলেন কিশোরগঞ্জের মো. হানিফ (৪২) ও ফরিদপুরের লুৎফর রহমান (২৬)।
জানা যায়, অনাগত সন্তানের স্বপ্ন পূরণ আর পরিবারে স্বচ্ছতা আনতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে মিশর এসেছিলেন চাঁদপুরের ফাইজুল ইসলাম নামের এই প্রবাসী। কিন্তু অনাগত সন্তানের মুখ আর দেখা হলো না। মিশর পৌঁছে কাজে যোগ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই অগ্নিদগ্ধ হন তিনি সহ দুজন।
নিহত ফাইজুল ইসলামের ভাই, কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের শিক্ষার্থী সুজন সরদার জানান, গত ২৩ অক্টোবর আল- আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এয়াহিয়া তানভিরের মাধ্যমে মিশর আসেন আমার ভাই। কায়রো পৌঁছার পর পোশাক শিল্পে কাজ দেওয়ার কথা বলে ইসমায়েলিয়া শহরের কানতারায় এলাকায় পাঠিয়ে দেন। তার পর থেকে আমার সাথে ভাইয়ের কোনো যোগাযোগ ছিল না বা করতেও পারিনি।
সম্প্রতি জনৈক ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারি, সে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ইসমায়েলিয়ার আবু খালিফা নামক একটি হাসপাতালে তাকে পাই। রুগির অবস্থার অবনতি দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ পাহারায় তাকে পার্শ্ববর্তী শহর জাকজিকের বার্ন স্পেশাল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। চার দিন হাসপাতালের লাইফ সাপোর্ট থাকার পর জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আমার ভাই।
তিনি আরো জানান, দুর্ঘটনার পর থেকে এয়াহিয়া তানভিরের কোনো সহযোগিতা পাইনি, এমনকি তার সাথে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারিনি।
বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর জনাব মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন স্যার এসেছিলেন, ভাইকে দেখে কিছু আর্থিক সহায়তা করে গেছেন। পরে পরিবারের ইচ্ছায় দূতাবাসের সহযোগিতা ও আমাদের ব্যক্তিগত খরচে ভাইয়ের লাশ দেশে পাঠিয়েছি। লাশ দেশে পৌঁছার ১ সপ্তাহ পর তার অনাগত সন্তানের জন্ম হয়।
বাংলাদেশ সরকার ও মিশরে বাংলাদেশ দূতাবাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুজন আরো বলেন, আমি আর্থিক কোনো সহযোগিতা চাই না, ছাত্র নামধারী তানভিরের মত দালালদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হোক, যাতে মিষ্টি কথার প্রলোভনে পড়ে অবৈধভাবে মিশর এসে আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।
ইসমায়েলিয়ার আবু খালিফা হাসপাতাল থেকে আহত আবু হানিফ এই প্রতিনিধিকে জানান, ঐ দিন সন্ধ্যায় রান্না করার সময় বৈদ্যুতিক লাইনে আগুন লেগে মুহূর্তের মধ্যে পাক ঘরে থাকা গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে তাড়াহুড়ো করে বাহির হতে গিয়েও আমরা আগুনে দগ্ধ হই। পরে স্থানীয়রা আমাদের ইসমায়েলিয়ার আবু খালিফা নামক একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। তিনজনের মধ্যে ফাইজুল ইসলাম জাগজিগ হাসপাতালে মারা গিয়েছেন বলে শুনেছি। আমি ও লুৎফর এই হাসপাতালেই ভর্তি আছি। আমাদের শরীরে অনেক অংশই ঝলসে গেছে।
আবু হানিফ আরো জানান, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এয়াহিয়া তানভির আমাদের প্রত্যেককে ৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মিশর আনেন অন-এরাইভ্যাল ভিসা দিয়ে। আসার পর তাদের কাজ দিতে নিয়ে যান ইসমায়েলিয়ার এক পোশাক শিল্প কারখানায়। কিন্তু তাদের কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় কারখানা কর্তৃপক্ষ বলেন কাজ শিখে আসতে। তার কথা মতো এহিয়া লুৎফর তাদেরকে শিক্ষানবিস হিসেবে কাজ দেন ছোট্ট একটি কারখানায়। কাজ শেষে ঘরে এসে নিজেদের রান্না করার সময় ঘটে এই দুর্ঘটনা।
এদিকে তানভির এয়াহিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই তিনজনকে আমি ভ্রমণ ভিসায় মিশর এনে কাজ দিয়েছিলাম ইসমায়েলিয়ার কান্তা এলাকার একটি ছোট কারখানায়। পরে শুনতে পারলাম, ওরা নিজেদের বাসায় রান্না করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ব্যস্ততার জন্যে আমি তাদের দেখতে যেতে পারিনি। তবে লোক পাঠিয়ে তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। 'মিশরে বাংলাদেশিদের জন্যে ওয়ার্ক পারমিট বন্ধ জেনেও আপনি কেন অবৈধভাবে দেশ থেকে লোক আনেন' এমন প্রশ্নের জবাবে তানভির বলেন, মিশরের শ্রম মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে আছে ভিজিট ভিসায় এসেও এদেশে কাজ করতে পারবে ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া। সেই ওয়েবসাইটের লিংক চাইলে পাঠাবে বলেও তিনি জানান।