প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪১
চাঁদপুরে ২শ’ ২১টি পূজো মন্ডপে হবে শারদীয়া দূর্গোৎসব
সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হবে
সনাতন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে
শারদীয় দুর্গোৎসব- ২০২৪। মহালয়া থেকে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠনিকতা। এরপর ষষ্ঠী থেকে শুরু করে দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয় পূজার আনুষ্ঠনিকতা। ম-পে ম-পে প্রতিমা দেখা, ঘোরাঘুরি, ঢাকের বোল, লুচি-পায়েস, নাড়ু খাওয়া এসবের মধ্য দিয়ে ভীষণ আনন্দে কেটে যায় এই ক’দিন। প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন রূপে নিজেকে ফুটিয়ে তুলতে চান উৎসবপ্রেমীরা। এ সময়ে প্রকৃতিও সাজে নান্দনিক রূপে। নদীর ধারে কাশফুল, নীল আকাশ সবকিছুই যেন শারদীয় দুর্গাপূজার বার্তা দেয়।
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে
আরমাত্র একদিন পরই পুজা।তাই শেষ সময়ে মাটির প্রলেপ, রং তুলির আঁচর এবং সাজস্বজ্জায় ব্যাস্ত প্রতীমা শিল্পীরা।
এদিকে ভালোভাবে পূজো শেষ করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় মাঠে থাকছে পূজা পরিষদ ও ঐক্য পরিষদের নেতারা। দূর্গোৎসবকে ঘিরে জেলায় সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কত অবস্থান নিয়েছে চাঁদপুরের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল বিভাগসহ প্রশাসন। বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকেও নেয়া হয়েছে সহযোগিতা করার উদ্যোগ।
৭ অক্টোবর সোমবার শহরের পুরাণবাজার ব্যবসায়িক এলাকার মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায় স্বর্গীয় পরেশ সাহার গদি ঘরের ভিতর প্রতিবারের মত এবারও দুর্গাপূজার জন্য প্রতিমা প্রস্তুত করা হচ্ছে।
প্রতীমা ও বিগ্রহে রং তুলির আঁচর দিচ্ছেন প্রতীমা শিল্পীরা।
চাঁদপুর সদরের আশিকাটির শ্রী শ্রী স্বচ্চিদানন্দ শ্যাম সুন্দর হরিসভার সভাপতি হারাধণ চন্দ্র দত্ত বলেন, আকাশে সাদা মেঘের ভেলা এবং শুভ্র কাশফুল জানান দিচ্ছে শরতের শারদীয়া দূর্গোৎসবের। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম দিন পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজা করে সনাতন ধর্মালম্বীরা। ইতিমধ্যেই
চাঁদপুরের ২শ’ ২১টি পূজো মন্ডপে প্রতীমা ও অন্যান্য দেবতার বিগ্রহ তৈরিতে মাটির প্রলেপ ও রং তুলির আঁচরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কারিগররা। কোথাও কোথাও প্রতিমায় শাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার পড়াচ্ছেন শিল্পীরা। পূজো মন্ডপ গুলোর আলোকসজ্জ্বা ও সুন্দর্য বর্ধনসহ নিরাপত্তাজনিত কাজকর্মেও সনাতনীদের ব্যস্ততা সকলের নজর কেড়েছে।
চাঁদপুর জেলা যুব ঐক্য পরিষদের আহবায়ক অমরেশ দত্ত জয় বলেন, দূর্গতি বা সংকট থেকে রক্ষা করেন দেবী দূর্গা। এবার ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হয় এবং ১২ অক্টোবর মহাদশমীর বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে সন্ধ্যায় বিসর্জনের মাধ্যমে শারদীয়া দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। পৃথিবীতে এবছর দেবী দূর্গার আগমন হচ্ছে দোলায় চড়ে এবং তিনি কৈলাশে ফিরবেন ঘোড়ায় চড়ে।
প্রতীমা শিল্পী কমল পাল, অভিজিৎ কুমার অমিত, শ্যামল পালসহ অন্যরা বলছেন, বৃষ্টি ও বন্যায় খড় ও মাটি পেতে অনেকটা বেগ পেতে হয়েছে। তার ওপর এবার মন্ডপে রেখেই প্রতীমা ও অন্যান্য দেবতার বিগ্রহ তৈরি করতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে সময় পুষিয়ে নিতে ঘাম ঝড়াতে হচ্ছে। রংসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়ায় মজুরি ভালো পাবো কিনা দুশ্চিন্তায় রয়েছি।
নিতাইগঞ্জ পূহা মন্ডপের সভাপতি আশিষ দেবনাথ বলেন, দেবী দূর্গার অন্যান্য অস্ত্রের মধ্যে প্রধান অস্ত্র ত্রীশূল। আর বাহন সিংহ। তাই দেবীর আগমনিতে প্রত্যেক সনাতনীর মনেই উৎসবের আমেজ। আর এই দূর্গোৎসবকে ঘিরে দোকান ও
মার্কেটগুলোতে পূজোর নতুন শাড়ি,পাঞ্জাবিসহ জামাকাপড় ও অন্যান্য কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন হিন্দু ধর্মাম্বলীরা।
চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও ব্যবসায়ি নেতা সুভাষ চন্দ্র রায় বলেন, সুন্দর ও যথাযথ সনাতন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে শারদীয় দূর্গোৎসব করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে চাঁদপুরে প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের সাথেও সমন্বয় রেখেছি। আশা করছি সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতীর জেলা হিসেবে এখানে দারুনভাবেই পূজো করা সম্ভব হবে।
চাঁদপুর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিনয় ভূষণ মজুমদার বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের নিজেদের যুবকরা ও ছাত্রছাত্রীরাও এবার পূজোতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে মাঠে থাকবে। আশা করছি যেকোন শঙ্কা উপেক্ষা করে ভালোভাবেই আমরা পূজো শুরু থেকে শেষ করতে পারবো।
পূজোর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, সনাতন ধর্মালম্বীদের শঙ্কিত হবার কারন নেই। ইতিমধ্যেই সনাতন ধর্মালম্বী নেতৃবৃন্দসহ সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে ২শ’ ২০টি পূজো মন্ডপকে ঘিরে শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য বজায় রাখতে প্রস্তুতি ও সর্বোচ্চ সতর্কতা নেয়া হয়েছে। আশা করছি সনাতন ধর্মালম্বীরা দারুনভাবেই এই শারদীয়া দূর্গোৎসব উদযাপন করতে পারবে।