প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২১, ১৩:১৩
প্রীবণ জনগোষ্ঠীর জীবন মানোন্নয়নে এক আলোকবর্তিকা
বার্ধক্য বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত একদল ছাত্র ছাত্রী ২০১৩ সালে প্রবীণদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে "এজিং সাপোর্ট ফোরাম " নামে একটি সংগঠন তৈরি করে। এজিং সাপোর্ট ফোরাম প্রবীণদের জন্য কাজ করা সংগঠন গুলোর সাথে গবেষণা, প্রকাশনা, মানববন্ধন, সেমিনার, সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা, নাটক,চিত্রাঙ্কন সহ বিভিন্ন কাজে অংশ গ্রহণ করে।
|আরো খবর
২০১৫ সালে এজিং সাপোর্ট ফোরাম বার্ধক্য বিষয়ক যুব সম্মেলনের (youth summit on agieng)আয়োজন করে । সমাজসেবা অধিদপ্তরের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অতিথি হিসেবে যোগদেন সরকারের উপদেষ্টা, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান, সরকারের সচিব,বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান/শিক্ষক, বিভিন্ন এনজিও প্রধান সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান জনাব ড.কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। প্রায় চার শতাধিক তরুন তরুনীর সামনে একটি দিকনির্দেশনা মূলক বক্তব্য রাখলেন।
তিনি বললেন,একটি মানবিক সমাজ গঠনে আমরা এখনো জোর প্রচেস্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দারিদ্র্য বহুমাত্রিক শুধুমাত্র অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে পারেনা।টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সবার অংশ গ্রহণ এবং অন্তর্ভুক্তি।
আগামী দিন গুলিতে বার্ধক্য আমাদের সামনে বড় ধরনের একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াবে।সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য তোমাদের উদ্যোগ কার্যক্রম আমাদের আশান্বিত করে। আমরা সবাই কে সাথে নিয়ে একটি মানবিক সমাজ গঠনে ভূমিকা পালন করতে পারবো।
২০১৭ সালে দ্বিতীয় বার বার্ধক্য বিষয়ক যুব সম্মেলনে স্যার কে আমরা প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানাই। বিদেশে জরুরি কাজ থাকায় তিনি উপস্থিত থাকতে পারেন নি।
২০১৮ সালে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে তৃতীয় বার্ধক্য বিষয়ক যুব সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে।বিপুল সংখ্যক প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কথা আমাদের ভাবতে হবে। কারণ মানুষ বৃদ্ধ হয়ে গেলে অসহায় হয়ে পড়ে।আর্থিক সংকট, অসুখ বিসুখ,একাকিত্ব এরকম নানা কারনে তাঁরা অসহায় হয়ে পড়ে।এসময় তাঁদের পাশে দাঁড়ানো তরুনদের দায়িত্ব। উন্নত দেশ গুলিতে সামাজিক সুরক্ষা বিষয়টি যেভাবে কার্যকর আমাদের দেশে তা নেই। এজন্যই সর্বস্তরের মানুষ কে এগিয়ে আসতে হবে সামাজিক সুরক্ষা তৈরি করার জন্য। তোমাদের হাত এমন একটা সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে যেখানে প্রতিটি সন্তান তাঁর পরিবারের প্রবীণ ব্যক্তির দায়িত্ব নিবে।এমন কি যে প্রবীণ ব্যক্তির কোন সন্তান নেই তিনি ও যেনো সন্তানের অভাব অনুভব না করেন।এমন একটি প্রবীণ বান্ধব নৈতিক সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। তোমরা আমাদের সেই স্বপ্ন পূরন করবে বলে বিশ্বাস রাখি।
আমরা এজিং সাপোর্ট ফোরামের পক্ষ থেকে যখনই স্যারের পরামর্শ, সমর্থন, সহযোগিতা চেয়েছি তখনই তিনি হাসিমুখে আনন্দ চিত্তে দিয়েছেন।স্যারের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল।
২০১৮ সালে চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর টেলিভিশন "দাদা নাতির আলাপন" নামে একটি ধারাবাহিক অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্যার আমাদের আন্তঃ প্রজন্ম সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। শিশু কিশোর দের কেমন করে জাতীয় সংগ্রাম,ঐতিহ্য , সংস্কৃতি, জীবন বোধ সম্পর্কে ধারণা দিতে হয় তা হাতেকলমে করে দেখান।
পল্লী কর্ম -সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)
২০১৬ সাল থেকে ১০৬ টি সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে
২১৮টি ইউনিয়নে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। ২১৮ টি ইউনিয়নের চার লখের অধিক প্রবীণ কে সংগঠিত করে তাঁদের বিভিন্ন সুবিধা ও সেবা প্রধানের মাধ্যমে সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
প্রবীণদের স্বাস্থ্য সেবা, বিশেষ ঋন,আয় বৃদ্ধি মূলক প্রশিক্ষণ সহ সাতটি বিশেষ কার্যক্রমের মাধ্যমে তাঁদের জীবন মান আরো সহজ ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করছে।
প্রবীণদের বিনোদনের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবা,বয়স্ক ভাতা,জীবন সহায়ক সামগ্রী প্রদান,বয়োজ্যেষ্ঠ প্রবীণ ও শ্রেষ্ঠ সন্তান সম্মাননা প্রদান এবং নিঃস্ব প্রবীণ কে নিজ এলাকায় থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা, সক্ষম প্রবীণদের আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
স্যার এই বিপুল কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
কমিউনিটিতে সংগঠিত প্রবীণ,প্রবীণ কার্যক্রমে যুক্ত বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠন এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি সহ সকল পক্ষের স্বপ্ন পূরনে জাতীয় পর্যায়ে ১৪ মে ২০১৮ প্রবীণ অধিকার মঞ্চ গঠিত হয়। স্যার এটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
স্যারের পরিকল্পনা এবং নির্দেশনায় স্মৃতি ক্ষয় জনিত রোগ ডিমেনশিয়া সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি, আক্রান্ত ব্যক্তি ও পরিবারকে সহায়তা করতে গঠিত হয়েছে 'বাংলাদেশ ডিমেনশিয়া ফ্রেন্ডস্ কমিটি '।
প্রবীণ বিষয়ে আমি দুই শতাধিক প্রবন্ধ লিখেছিলাম। সেই প্রবন্ধ গুলি থেকে বাছাই করা প্রবন্ধ নিয়ে সাড়ে তিনশো পৃষ্ঠার 'প্রবীণ কথা 'বইটি প্রকাশ করে স্যার উইলিয়াম বেভারিজ ফাউন্ডেশন। বইটির মুখ বন্ধ লিখে দিলেন স্যার এবং মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।
স্যারের সাথে প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র পরিদর্শনে পিরোজপুর জেলায় যাবার সুযোগ হয়েছিল আমার।
স্যার তিনটি প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
সেখানে তিনি প্রবীণদের সাথে আন্তরিক ভাবে কথা বলেছেন,গান - গল্প শুনেছেন,ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানলেন। গ্রামের প্রবীণ মানুষের মধ্যে তিনি এতটা মিশে যেতেন যে তাঁকে বাইরের কোন লোক মনে হতোনা।
অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের আর্থিক সহায়তায় এবং রিকের মাধ্যমে পিরোজপুর শহরে প্রবীণদের জন্য ' প্রবীণ সামাজিক কেন্দ্র ' স্যার উদ্বোধন করেন। প্রায় তিন শতাধিক প্রবীণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সেদিন প্রবীণরা তাঁদের সুখ দুঃখ সবার সামনে তুলে ধরেছেন।
সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসে নেক্সাস টেলিভিশনে আমার উপস্থাপনায় প্রবীণদের জন্য বিশেষ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান 'রাঙিয়ে দিয়ে যাও' একটি পর্বে তিনি আমার অনুরোধে বাসায় শুটিং করতে অনুমতি দিয়েছেন।
আমার সৌভাগ্য যে,স্যারের প্রবীণ বিষয়ক সকল কাজ আমি খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম।
একজন নির্লোভ,নিরহংকারী, সমাজ বিজ্ঞানী, হাসিমুখের দরদী মানুষের সান্নিধ্য পেয়ে আমি ধন্য।
স্যারের সাথে প্রবীণ বিষয়ক কাজের স্মৃতি আমাকে আনন্দিত এবং সাহসী করে তোলে।
লেখক - সভাপতি, এজিং সাপোর্ট ফোরাম।