প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২১, ১৬:৪৭
অমরি'র বেঁচে যাওয়া
গল্পে'র মূখ্য চরিত্রে'র এক-টা নাম দেয়া- দরকার । চরিত্র যার সে- এক-টা কুকুর । নাম দিলাম- অমরি' । দেখতে সে- নিরীহ যথেষ্ট, অন্য হতে । সুন্দর'- এর লুকে, মানানসই'- এর ঘরে'র সদস্য নয়- সে । দেখলে- ম্যামোথ্যামো লাগে, এমন । না তুচ্ছ, না স্বচ্ছ । মেদ-হীন দেহে'র গড়ন । কিছু-টা সাইক্লোন ঝড় যে- ওর শরীর বেয়ে- ছায়াবর্ত করে গেছে, তার ছাপ- স্পষ্ট । তার কিছু হয়-তো অ-ভূক্ত থাকা'র নিয়ত ডোর । আর- কিছু হয়-তো বার বার- সন্তান জন্ম-দানে, নিবার্য-তা'র জের । রং'- এর বিবরণ কী- দরকার ? কুকুর-তো আর- মানবীয় রমনী নয়, যে- বিচারে সাদা, কালো কাঠি হবে- সমাজ তুতলে ।
|আরো খবর
আমার স্বভাবে মায়া'র ভাগীদার সব- প্রাণী-কূলে'র মধ্যে'ই গোছানো । বাদ যায়-না দুই, চার, আট পা বিশিষ্ট তার অতি ক্ষুদ্র, বৃহৎ কোনো প্রাণী । সব মাখলুকাতে'ই আমার অতীব- দয়াদ্র মন । কেনো জানি-না । কেনো জানি- হিংসা'ই মনে ধরে-না । অথচ- অস্ত-গামী সূর্যে'র মতো'ই আমার জীবন-বিচরণ । না আয়, না ব্যয় । ব্যয় ধরে এগোলে, আয়ে'র কথা- মনে পড়ে যায় । দয়াদ্রে'র আকাশে তখন- মেঘ জমে । আমি অন্ধকারে ঢাকা পড়ি । নিজস্ব আলোয়- বেরিয়ে আসি । চারপাশে'র আলোয়- বিকশিত হবার প্রয়াস এখানে, বান-ভাসি মানুষে'র চুরমার আর্তনাদে'র মতো'ই ।
এখান-কার মানুষ-দের আমি দেখেছি, পলি-পূর্ণ জমিন-কেও কিভাবে তারা- অনায়াসে অনুর্বর করে । পর্বতে'র চূড়া লোকন করে, বলে- এ আর- এমন কী ? নল দিয়ে, খল করলে'ই নেমে আসবে- ক্ষুদিরাম । নদী'র বিকশিত স্রোত দেখে, বলে- এ জন্মে কতো... দেখেছি । হাওয়া'র টাল সারলে'ই পরে যাবে- সিলসিলা । কোনো এক-টা নিরিহ প্রাণী চোখে'র সামনে পরলে'ই তারে দেয়- দৌড়ানি । হাতে'র কাছে যা'ই থাকুক তা'ই নিয়ে, তেড়ে যাবে মারতে, শত্রু-তা'র ঔরশ কাঁপিয়ে । এমন-কি কখনো কখনো- সবিস্তারে মৃত্যু'র ঘাট পর্যন্ত পৌঁছে দেয় । যেনো- মানুষ ব্যতীত আর- অন্য কোনো প্রাণী'র বেঁচে থাকা'র অধিকার নেই, এই ধরণী-তে ! কি আশ্চর্য বিড়ম্বনা ! দেখে- মুমূর্ষু-তা লাভ করি । খণ্ড, বি-খণ্ড হই !
এই যেমন- মাছ ধরা'র নিমিত্তে জাল পেতে, জাল টেনে এনে, মাছ-গুলো নিয়ে, মাছে'র সাথে ভাই ভাই উঠে আসা- নিরিহ কাঁকড়া আর- নির্বিষ ডোরা সাপ-গুলো মারা পরে, তাদের হাতে'র নিকটে পাওয়া যে- কোনো দন্ড, অ-দন্ড কিছু'র প্রহারে প্রহারে ।
আরেক যেমন- বাড়ি'র আশেপাশে, কিংবা- চলতি হাঁটোয়া পথে, দৃষ্টি'র নৈকট্যে এক-টা কুকুর বা- বিড়াল পরলো । ব্যস্ হুশহাশ করে, অথবা- নলখাগড়া জাতীয় কিছু মিললে'ই হলো । দিবে চপান্তর করে । যেনো- কতো জনমে'র শত্রু-তা ঐ পক্ষান্তর-হীন প্রাণী-গুলো'র বরবাদে ! যা- আরেক মানবে'র সাথে, চরম শত্রু-তায়ও এমন মনস্খলন আচরণ লক্ষিত হয়ে, ওঠে-না ! কেননা- শত্রু-তা'রও এক-টা বেলা থাকে, এক-টা ভূমি থাকে । সময় অ-সময় থাকে । কিন্ত- দেখা'র আড়ে দেখেছি, ঐ অ-সহায় প্রাণী-গুলো প্রায়- সব হাড়ে'ই নি-গৃহীত হয় । এ কেমন মানসিক-তা মনুষ্য-জীবি-দের ? গল্গে'র গায়ে প্রশ্ন ।
কুকুর এমন এক জাতীয় প্রাণী । যারা যৎ-সামান্য আহার, আর- এক-টু উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলে, সকলে'র খাতে পরম উপকারী । মেল-বন্ধনে'র এক বিরল উদাহরণ- সম্মত । যা- আমরা নানান ঘটনা'র উৎকর্ষে, তার- সাক্ষী । পার্থক্য কেবল এই যে- কেউ উপলব্ধি'র চাবি দিয়ে, তার- সহানুভূতি'র তীর-টা উন্মোচন করি । আর- কেউ করি-না, বা- করতে পারি-না, বোধে'র অ-সামাজিক দৈন্যতা'র কারণে । সোশ্যাল মিডিয়া'র কল্যাণে, আমরা এখন- সু-দূর-কেও কাছে টানি । পর-কেও করি- আপনে'র আহব্বায়ক । বহুল কনটেন্টে'র মাধ্যমে দেখতে পাই, কুকুর কিভাবে- মানুষে'র জীবনে'র উত্তম সহায়কে'র ভূমিকা পালন করে থাকে । একাকীত্ব ঘুচাতে, আরেক মানব সহকারী'র বিকল্প রোল প্লে করে, সর্বোপরি- জীবন বাঁচাতে, তড়িৎ পদক্ষেপে'র মধ্য দিয়ে । অথচ- তাদের মানুষে'র কাছে, কোনো- চাওয়া পাওয়া নেই । জবর-দস্তি নেই । বাড়ি'র যে কোনো- এক প্রান্তে, পড়ে থাকা । সারা-দিন এ-বাড়ি, ও-বাড়ি, অলি-গলি ঘুরে-ফিরে খাবারন্ত কিছু মিললে, আর- মানুষে'র ফেলে দেয়া- উচ্ছিষ্ট ঠুকরে বেঁচে থাকা ।
অমরি'র দেখা মিলে এক-রকম আচমকা'ই বলা চলে । আচমকা এই অর্থে- জন্ম-সূত্র ধরে এক-টু এক-টু করে- বেড়ে উঠতে, দেখা- এক । আর- চার-পাঁচ-টা বাচ্চা বিয়ানো ক্ষয়, মানুষে'র ছিঃ ছিঃ প্রবৃত্তি'র ফলাফলে'র জের- খাদ্য ঘাটতি, ও পৃষ্ঠ-দেশে'র রোম ঝরে পরে অনাবৃত অংশ-সমূহে'র বৈকল্য দেখে- মনুষ্য অর্জিত যে কোনো মানবে'র হৃদয়ে, হাহাকার করে ওঠা- আরেক । অমরি'র আরেক' দেখায় আমি- মর্মাহত । জীর্ণ-শীর্ণ অমরি'র আপদমস্তক প্রাণ গেলো গেলো- পৃথিবী'র রচনা-কালে, আমি- মামু হয়ে উঠি । কিন্তু- হলে, কী- হবে ? আমিও ছিলাম- আর্থিক রুগ্ন-তায় পলেস্তরা-হীন দিন-যাপনে'র রাও-হীন । কী করে, পারি- অমরি'র পেটে'র খাবারে'র চাহিদা পূরণে- সক্ষম হতে ?
বেশ কয়েক বছর আগেকার কথা । গোনে নিলে- বছর দশেকে'র কম হবে-না । হলে, বেশি হবে । আমাদের ঘরে'র লাগোয়া সামনে দিয়ে, যে- গলি পথ গিয়ে, বাকিলা বাজারে আসা-যাওয়া'র রাস্তায়- গা জুড়েছে, সেই পথ ধরে'ই অমরি'র নিরর্থক যাওয়া-আসা হতো । আগ-দরজা বা- সদর-দরজায় গিয়ে দাঁড়ালে, এই-বেলা না ঐ-বেলা অমরি-কে দেখতে হতো । এই দেখা'র সিঁড়ি বেয়ে'ই মমতা'র আলোড়ন ঘটলো- হৃদয়ে'র এ-পাশে, ও-পাশে । এক-দিন আলোড়ন ভরে, কি যেনো- এক-প্রকারে'র খাদ্য- কণা ছিটিয়ে দিই, অমরি'র অ-ভূক্ত দৃষ্টি'র সামনে । সে লুফে নেয়- বদান্য নয়নে ।
কোথায় যেনো তার- আস্তানা, জানা নেই । তার নিজস্ব বেলা করে, সে- আসতো । কখনো নিয়মিত, কখনো অ-নিয়মিত । আমার খাবারে'র অংশ হতে'ই তার- ভাগ্যে'র দানা । মাঝে মাঝে উধাও হয়ে যেতো- অমরি' কয়েক মাস, বছরে'র জন্য । লম্বা বিরতি নিয়ে ফিরে, আমাকে বিষ্ময়ে'র জানান দিয়ে চলেছে, অমরি । এই-তো গেলো তিন মাসে'র বিরতি শেষে আসলো- লাগাতার ছয়-দিন । তার-পর আজ ধরে সাত-দিন উধাও ।
অমরি ভাত খায়-না, খায়-না রুটিও । খাওয়া'র মধ্যে সে শুধু- বিস্কুট-টা'ই খায় । খুব রসালো আস্বাদন তার- বিস্কুট-কে জীব্য করে । যদিও বিস্কুটে তার ভোগে'র দাবি- অচল, অ-পূর্ণ থাকে, আমার অ-সামর্থ্যে'র কারণে । যোগান দিতে পারি- হয়-তো তিন-সংখ্যা । তার হয়-তো নয়-সংখ্যাও কম হয় । আর- এই অ-মিলে'র কারণে, ভেতরে ভেতরে অমরি রেগে-মেগে, নিয়মে'র উধাও হয়ে যাওয়া'র চাল-টা হয়-তো চালে । যাতে পরে'র বার এলে, তার- ভাগ্যোন্নয়ন ঘটে । কিন্তু- দিন যায়, বছর যায়, আমার- ভাগ্যে'র চাকা সেই অনুপাতে ঘুরে-না। যেই অনুপাতে, অমরি ঘুচাতে পারতো, তার- ক্ষুধা'র বিজ্ঞান ।
মাঝে মাঝে উল্টো স্রোতে'র দাঁড় টেনে মনে হয়- অমরি এখন আর- ক্ষুধা'র টানে এখানে আসে-না । তার হয়-তো এখন আর- তেমন ক্ষুধা নেই । সে হয়-তো আসে- ঋণে'র টানে । ঐ যে তার- জীর্ণ সময়ে'র কালে, বাঁচা'র সামান্য-তম খোরাক হয়েছিলাম, সে জন্যে । মাঝে মাঝে হারিয়ে গিয়ে, পুণরায় এসে- নত মস্তকে, লেজে'র নম্র হেলুনি-তে, সে তার- ঋণে'র প্রতি শ্রদ্ধা- জানিয়ে যায় । খাওয়া'র মুখ-রোচক স্বাদ-টা তার কাছে, হয়-তো এখন- গৌণ ।
দীর্ঘ হায়াতে'র অমরি' তার পরবর্তী আগমনে'র জের কখন টানবে, সে-টা শুধু- অমরি'র একা'র খণ্ডন । এক-টা অপেক্ষা তার- মোলহেড ।।
লেখক : মনিরুজ্জামান প্রমউখ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর; পরিচালক- সাহিত্যে'র বাস্তু-ডাক-ঘর । উদ্যোক্তা- প্রমউখ' ব্যবসা ঘর । মোবাইল- ০১৯১-৮৪৩-৭০৭৮, ০১৭২-৯৮৪-৭২০৪ ।