প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২২, ১৭:৪২
বাংলাদেশের সাথে দৃঢ় অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ইতালির বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ
বাংলাদেশের সাথে দৃঢ় অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে ইতালির উচ্চ পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরা গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী বাংলাদেশ সফরও করেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘প্রথম অর্থনৈতিক কূটনীতি’ সপ্তাহ পালনের অংশ হিসেবে গত ৩০ জুন রোম বাংলাদেশ দূতাবাস ও ইতালির মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য প্রসারের জন্য এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। স্থানীয় একটি হোটেলে ম্যাপিং এক্সারসাইজ, বাংলাদেশ - ইতালি ট্রেড এন্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটি শীর্ষকনামক এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
|আরো খবর
দূতাবাস আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইতালি, মন্টেনিগ্রো ও সার্বিয়াতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ শামীম আহসান স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী ২৫ জুন সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের সুসংবাদ উপস্থিত সবাইকে তিনি জানান।
দূতাবাস আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ইতালি ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্রদূত, বলেন এক্ষেত্রে দু’দেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগিয়ে দু’দেশের বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিশীলতা আনয়নে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীর কথা উল্লেখ করেন। তিনি আশাবাদী ইতালির বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশে অধিকতর বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।পররাষ্ট্র মন্ত্রণলায়ের সচিব (পশ্চিম) রাষ্ট্রদূত, সাব্বির আহমেদ চৌধুরী অর্থনৈতিক মুক্তিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মুল লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। ফুড প্রসেসিং, কৃষি, প্রযুক্তি, ব্লু ইকোনমি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র বের করে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি। ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান জিয়ানপাওলো নেরি বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ়তর করতে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্র, সম্ভাবনা ও সুযোগ সুবিধাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে দু’দেশের মধ্যে একটি “বিজনেস কাউন্সিল” গঠনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
এছাড়া দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে ইতালির বিনিয়োগকারি ও ব্যবসায়ীদের নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক, বানিজ্যক সম্পর্ক উন্নয়নে একযোগে কাজ করবেন বলে জানান। অন্যদিকে টেক্সটাইল, চামড়া শিল্প, নবায়নযোগ্য শক্তি, কৃষি এবং ফুড প্রসেসিং, ফুড রিটেলিং এবং বেকারি, আইসিটি, সিরামিকস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট এবং পাটজাত পণ্য, সোলার মডিউল, সুনীল অর্থনীতি, রোবোটিকস, স্বাস্থ্য সেবা খাতের যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতকে দু’দেশের সহযোগিতার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিভাগের মহাপরিচালক, ইপিবির মহাপরিচালক, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বেসিস (BASIS), এলএফএমইএবি, এপেক্স (Apex) ফুটওয়্যার এর প্রেসিডেন্ট এবং ওয়ালটন, ই-ক্যাবের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং ইতালির পক্ষে নিউ দিল্লিতে অবস্থিত ইতালির দূতাবাসের ট্রেড কমিশনার, ইটা, কনফিন্ডাস্ট্রিয়া, এআইসিই, রিফলাইন, এনি, মাগালদি পাওয়ার, ডিএম ইটালিয়া, এর প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন। এছাড়াও নেপোলি ও ফ্লোরেন্সে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেলগণও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এসময় দুই দেশের বিনিয়োগকারি ও ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা আলোচনায় তুলে ধরেন যা একটি নতুন মাত্রা যোগ করে। ইতালির পক্ষে এনি, লিওনার্দো, মাগালধি পাওয়ার, রিফলাইন, ব্রাচি, ইডিওজি, ডিএম ইটালিয়া এসআরএল এবং বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিজিএমইএ, এপেক্স, ওয়ালটনের প্রতিনিধিরা তাদের আশাবাদ এবং নতুন দিগন্ত উন্মোচনে সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। হাইব্রিড ফরমেটে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সবাই একমত পোষন করেন। এটি দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা পরে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশগ্রহণ করেন। পরে দূতাবাস ১ জুলাই অনুষ্ঠানটির উপরে একটি ‘মিট দ্যা প্রেস’এর আয়োজন করে যেখানে ইতালি ও ঢাকা থেকে অনেক সাংবাদিক যোগদান করেন।
উল্লেখ্য, ইতালি-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ইতালি বাংলাদেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। বাংলাদেশ দূতাবাস সরকারের অনুসৃত “অর্থনৈতিক কূটনীতি”র ধারাবাহিকতায় সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম চালিয় যাচ্ছে।