প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২২, ১২:০৪
চাঁদপুর কণ্ঠের শ্রদ্ধাভাজন প্রতিষ্ঠাতার আজ শুভ জন্মদিন
চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশারের বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। আজ ৬৮ বছরে পা দিয়েছেন তিনি। ৩৭ বছর পূর্বে ১৯৮৫ সাল থেকে আমি তাঁকে চিনি। তাঁকে চেনার পাঁচ বছর পূর্বে ১৯৮০ সালের শেষ দিকে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে টিসি নিয়ে চাঁদপুর সরকারি কলেজে আসি। তখন প্রায় প্রতি বছরই চাঁদপুর সরকারি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো। এ নির্বাচনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল থেকে ভিপি ও জিএস পদে মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে যে ক’জন মুখ্য ভূমিকা পালন করতেন, তাঁদের মধ্যে জনাব ইকবাল-বিন-বাশার ছিলেন অন্যতম।
|আরো খবর
১৯৮৫ সালে তিনি সদ্য উকালতি পেশাতে আসা টগবগে এক যুবক। ক্লিন শেভড্ স্লিম বডির এই যুবকের চোখে মুখে দেখেছি সদা-তারুণ্যের উজ্জ্বল আভায় সৃষ্টিশীলতার ছাপ। কৃষ্ণ বর্ণের অবয়ব থেকে সব সময় ঠিকরে পড়তো সম্ভাবনার ঝিলিক।
আইন পেশায় শনৈঃ শনৈঃ অগ্রগতির সাথে সাথে ইকবাল-বিন-বাশারকে দেখলাম রাজনীতির পাশাপাশি ক্রীড়া, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনে সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট হতে। ১৯৮৭ সালে আমি যখন সাপ্তাহিক চাঁদপুরের বার্তা সম্পাদক, তখন থেকে চাঁদপুর শহরের রাজনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াভিত্তিক সকল কর্মকাণ্ডের সংবাদে ইকবাল-বিন-বাশারের সক্রিয় সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেতাম। মোটেও বাড়িয়ে বলা নয়, আশির দশকের শেষ পর্বে ইকবাল-বিন-বাশার চাঁদপুরে নিজের অবস্থান এমন উচ্চতায় তুলতে সক্ষম হন যে, এ শহরের তরুণ-যুবকসহ সর্বস্তরের মানুষ তাঁকে কিছু ক্ষেত্রে অবিকল্প আইকন ভাবতে লাগলো।
নব্বইর দশক শুরুর প্রাক্কালে রাজনীতির হিসেব-নিকেশে সাময়িক হোঁচট খেয়েও ইকবাল-বিন-বাশার ২-১ বছরের মধ্যেই নিজেকে সামলে নিলেন। সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হয়ে নব্বইর দশকের প্রথম পর্বে তিনি সৃষ্টির নেশায় উন্মাদ হয়ে গড়লেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, করলেন ব্যাপক সামাজিক কর্মকাণ্ড। তাঁর জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি স্বরূপ ১৯৯৪ সালে জন্ম হয় চাঁদপুর কণ্ঠের। যেটিকে তিনি ৪ বছর পর ১৯৯৮ সালে দৈনিকে উন্নীত করে গড়লেন এমন এক অনন্য রেকর্ড, যে রেকর্ড কেয়ামত পর্যন্ত ভাঙ্গার কোনো সম্ভাবনা নেই। চাঁদপুর কণ্ঠকে তিনি চাঁদপুর জেলার প্রথম দৈনিক মুখপত্র করে এর নিরবচ্ছিন্ন প্রকাশনা অব্যাহত রাখতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করলেন।
সাপ্তাহিক ও দৈনিক মিলিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের বয়স ২৮ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে আগামী ১৭ জুন ২০২২। সাবেক চাঁদপুর মহকুমা ও বর্তমান চাঁদপুর জেলায় কোনো সংবাদপত্র ২৮ বছর টিকে থাকার রেকর্ড নেই। এই ২৮ বছরে চাঁদপুর কণ্ঠের সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইকবাল-বিন-বাশার তাঁর জীবনের গৌরবজনক অধ্যায় অতিক্রম করেছেন। এ সময়েই তিনি চাঁদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক (২ বার) ও সভাপতি (৩ বার), চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি (৩ মেয়াদ) এবং চাঁদপুর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া চাঁদপুর শহরের অভিজাত সকল সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে তিনি নিজের অপরিসীম সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে চলতি শতাব্দীর প্রথম দশকে চাঁদপুরে জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মেলনের যে রাজসিক আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে, তেমন আয়োজনের রেকর্ড এখন পর্যন্ত কেউ করতে পেরেছে বলে জানা যায় নি। তিনি চাঁদপুরের ইতিহাসে প্রথম জাতীয় বিতর্ক উৎসব আয়োজনে সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সর্বাত্মক সমর্থন, সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৯ সালে যে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, চলতি ২০২২ সালে সেটি ১৪ বছরে পা রেখেছে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর জীবদ্দশায় তো বটেই, তাঁর মৃত্যুর পরও চলবে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা।
শ্রদ্ধেয় ইকবাল-বিন-বাশার চাঁদপুর জেলার ইতিহাসে এমন একটি নাম, যাঁর কথা লিখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। বর্তমানে তিনি রাজনৈতিক সকল কর্মকাণ্ড থেকে অনেক দূরে। এখন সময় কাটে পেশাগত ব্যস্ততা, পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় কাজে। টগবগে কালো চেহারার এ মানুষটিতে এখন সাদা পক্ক কেশ (চুল-দাড়ি)-এর প্রাধান্য থাকলেও চলনে-বলনে নেই বার্ধক্যের লেশ। সেটা তাঁর সাহচর্য পাওয়া প্রতিটি মানুষই বিশেষভাবে অনুভব করেন। সদা হাস্যোজ্জ্বল ও রসিক এ মানুষটি যে কোনো পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেন এবং সুন্দর আলাপচারিতায় যে কোনো ধরনের আড্ডা জমিয়ে ফেলতে পারেন।
অসংখ্য গুণগ্রাহীসহ তাঁর শুভাকাক্সক্ষীদের প্রত্যাশা : স্বাভাবিক নিয়মে ইকবাল-বিন-বাশারের বয়স বাড়ুক, জীবন-বৃক্ষ থেকে পুরানো পাতা ঝরে নূতন পাতা গজাক, তবুও বার্ধক্য তাঁকে স্পর্শ না করুক। সুস্থতার সাথে তিনি বেঁচে থাকুন অনেক অনেক দিন চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারসহ অন্যান্য সকলের এটাই আল্লাহর দরবারে বিনম্র প্রার্থনা।
ছবি-১৫
মৌলিক সংশপ্তক
বিমল কান্তি দাশ
ধর্ম হলো বিশ^াস নির্ভর আর বিজ্ঞান হলো যুক্তি ও প্রমাণ নির্ভর। বিজ্ঞান বলে এই বিশ^ ব্রহ্মাণ্ডের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর। পৃথিবীর বয়স ৪৫০ কোটি বছর। পৃথিবীতে পূর্ণাঙ্গ অবয়বের মানুষের আবির্ভাবের বয়স দুই লক্ষ বছর। তাহলে বিশ^াস ভিত্তিক ধর্মীয় উপাচারগুলো যুগ-যুগান্তরব্যাপী চলমান আছে। আর বিজ্ঞান যুক্তি-প্রমাণ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠিত আছে, যা প্রত্যক্ষ করা যায়।
এক সময় চীন ছিল অতি দুর্গম স্থান। ধর্মীয় নির্দেশ ছিল, প্রয়োজনে জ্ঞানার্জনের জন্য দুর্গম চীনে যেতে হলেও যেতে হবে। তবু জ্ঞান অর্জন করে জ্ঞানী হতে হবে। কারণ দার্শনিকের উক্তি হলো “ঊাবৎু বারষ পড়সবং ড়ঁঃ ড়ভ রমহড়ৎধহপব” অর্থাৎ সকল অপকর্ম অজ্ঞতা থেকে উদ্ভব। আবার এও কথিত আছে খরঃঃষব ষবধৎহরহম রং ধ ফধহমবৎড়ঁং ঃযরহম. অর্থাৎ অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী। অধীত বিদ্যার যথাযথ বিশ্লেষণ নিজে না বুঝে যখন অন্যকে বুঝাতে যায় তখনই সে মন-গড়া ব্যাখ্যা প্রদান করে, যা প্রকৃত অর্থের প্রতিপাদ বিন্দু। অধীত কোনো প্রসঙ্গের সঠিক তত্ত্বই হলো বিদ্যা। যথাযথভাবে আত্মস্থ বিদ্যাই হলো জ্ঞান। আর জ্ঞান, গবেষণায় বিশেষায়িত হয়ে বি-উপসর্গ যোগে হয়ে যায় বিজ্ঞান। ধর্মের গবেষণাগার হলো উপাসনালয়, যেখান থেকে সৃষ্টির কল্যাণকর তথ্য বেরিয়ে আসে, যা মানুষকে ধর্মচর্চায় উৎসাহিত করে। আর বিজ্ঞানের গবেষণাগার হলো ল্যাবরেটরী। সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে যত মিরাকেল অব মডার্ন এডভেনচার, যা সততই নির্বিশেষে মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
কোনো প্রাসঙ্গিক তথ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব উদ্ঘাটন না করেই কেউ ধর্ম অবমাননার উছিলাটা স্বকপোলকল্পিতভাবে পেয়ে যায়। যা অনাকাক্সিক্ষত দাঙ্গা সৃষ্টি করে। এটি সকল স্তরেই বিদিত আছে যে, স্রষ্টা মহান, সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং শেষ বিচারের দিনের বিচারক।
এই মর্ত্যলোকের সকলেরই বিশ^াস যে, ধর্ম এতোই পবিত্র যে, কোনো ধর্মেরই অবমাননা করা নরলোকে কারো দ্বারাই সম্ভব নয়। শেষ বিচারের আসরে কোনো অপরাধই বিচার বহির্ভূত থাকবে না। এটুকু বিশ^াস সকল ধর্মীর থাকা উচিত।
মানব দেহের একাদশ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে তিনটি অদৃশ্য হলো মন, বুদ্ধি এবং অহঙ্কার। তন্মধ্যে মন একটি চঞ্চল ইন্দ্রিয়। এখানেই ধর্ম বিশ^াসের অবস্থান। মনের প্রতিবেশী হলো বুদ্ধি, যা ধর্ম বিশ^াসকে অটুট রাখে। মনের চঞ্চলতার কারণে ধর্ম বিশ^াসে ফাটল ধরে অনাহুত ধর্মের অবমাননা বোধ করে। অহঙ্কার ধর্ম বিশ^াসকে অটুট রেখে ধর্ম বিশ^াসের প্রতি গর্ববোধ জন্মায়।
স্রষ্টার সৃষ্টির মধ্যে যিনি ধর্ম নিয়ে গবেষণা করেন তিনি ধর্মী, আবার যিনি ল্যাবরেটরীতে গবেষণা করেন তিনি বিজ্ঞানী। ধরা যাক একটি ফুলের বিশ্লেষণ : -
ধর্মী একটি ফুল হাতে পেলে তিনি দেখবেন আল্লাহর দানীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নয়নাভিরাম ফুলটি। এর সার্বিক সৌন্দর্যে তিনি মোহিত হবেন। আর একজন বিজ্ঞানী ফুলটি গবেষণাগারে দেখবেন, এর ক’টি পাপড়ি আছে, এর ফলন কিভাবে বাড়ায়ে মানুষের মনস্তুষ্টি বাড়ানো যায় ইত্যাদি।
এখানে দেখা যাচ্ছে, বিজ্ঞান দাঁড়িয়ে আছে বিবর্তনবাদের ওপর, আর ধর্ম দাঁড়িয়ে আছে সৃষ্টি তত্ত্বের বিশ^াসের উপর। বিবর্তনবাদ প্রমাণিত আর সৃষ্টিতত্ত্ব মননশীলতার সাথে বিশ^াস করতে হয়। এ দুইয়ের পার্থক্য পাঠকের বিবেচ্য। একজন ধর্মান্ধের অভিমত আর একজন বিজ্ঞান মনস্কের অভিমত অত সহজে অনুমেয় হতেও পারে, আবার না ও হতে পারে।
প্রসঙ্গান্তরে উল্লেখ্য যে, এখানে অনেকের কণ্ঠে একটি অনর্থক শব্দ উচ্চারিত হয় ‘বি-ধর্মী’। ‘বি’ উপসর্গটি যে যে অর্থে শব্দের পূর্বে ব্যবহৃত হয় তন্মধ্যে বিশেষায়িত অথবা নাই অর্থে দ্যোতক। অর্থগুলো হলো একটা বিশেষ ধর্মের ধর্মী অথবা অধর্মী। এই শব্দটির প্রযোজ্যতা কতটুকু অর্থবহ তা পাঠকের বিবেচ্য।
কোনো মানব সন্তান কখনো প্রত্যক্ষ করতে পারে না জন্মদাতাকে। স্রষ্টার অপার ক্যারিশমায় শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই তার পিতা-মাতাকে চিনে ফেলে। কিন্তু বিজ্ঞান তার গবেষণায় ‘জিন’ আবিষ্কার করে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, শিশুর ধারণাটা ‘ইউনিভার্সাল ট্রুথ’। ধর্ম যে অয়োময় সদৃশ্য দৃঢ় বিশ^াসের উপর প্রতিষ্ঠিত তাকে যুক্তি এবং প্রমাণ দ্বারা বিজ্ঞান তার বাস্তবতা প্রমাণ করে দিয়েছে এবং দিবে। কাজেই ধর্ম এবং বিজ্ঞান সংশপ্তক।
বিমল কান্তি দাশ : কবি ও লেখক; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।