প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
শবে মেরাজ : মহানবী (সাঃ)-এর ঊর্ধ্বজগৎ ভ্রমণ
বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাামের নবুওয়তী জিন্দেগীতে যে সকল অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিলো তন্মধ্যে মেরাজের ঘটনা অন্যতম। যা পবিত্র কুরআনুল কারীম এবং মাশহুর, মুতাওয়াতীর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। মহানবী (সাঃ)-এর ঐতিহাসিক মেরাজ আমাদের লক্ষ্য ও গন্তব্যের সন্ধান দেয়। মেরাজ আল্লাহর সাথে মানুষের সর্ম্পক গভীর করে তোলে। কুরআন-হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে মেরাজ প্রমাণিত। তা অস্বীকার করা কুফরি। মেরাজের তাৎপর্য অনস্বীকার্য। মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআন কারীমের দু’টি সূরায় পবিত্র মেরাজের আলোচনা করেছেন। একটি হলো সূরায়ে ‘ইসরা’ অপরটি হলো সূরায়ে ‘নাজম’। এ প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি। যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (সুরা বনি ইসরাইল-১) ‘ইসরা’ অর্থ রাতে নিয়ে যাওয়া। আয়াতে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত সফরকে ইসরা বলা হয়। আর সেখান থেকে আসমান পর্যন্ত যে সফর, তা-ই মিরাজ। এ আয়াতে ‘ইসরা’ আর মিরাজ সুরা নাজমে এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
কুরআনের পরিভাষায় ‘ইসরা’ শব্দ দ্বারা মেরাজের ঘটনার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। হাদিসের পরিভাষায় ‘উরজুন’ শব্দ দ্বারা মেরাজের ঘটনার বর্ণনা করা হয়েছে। ‘ইসরা’ ধাতু থেকে ‘আসরা’ শব্দটি উৎসারিত। আভিধানিক অর্থে রাত্রে নিয়ে যাওয়া। সফরটি রাত্রের একাংশে সম্পাদিত হয়েছে বিধায় ঘটনাকে ইসরা বলা হয়। ‘উরজুন’ ধাতু থেকে মে'রাজ শব্দ উদ্গত হয়েছে। তার শাব্দিক অর্থ সিঁড়ি। যেহেতু রাসুল (সাঃ)-মসজিদে আকসা থেকে সিঁড়ির মাধ্যমে (রফরফ বা বোরাকের মাধ্যমে) আরোহন করে, বায়তুল মামুর এবং সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছে ছিলেন বিধায় উপরিউক্ত সফরকে মেরাজ বলা হয়। আরবি মাস ‘রজবের’ ২৭ তারিখ নবুওতের দশম বর্ষে নবী করীম (সাঃ)-এর ৫০ বৎসর বয়সে পবিত্র মেরাজ সংঘটিত হয়। (সূত্র : সীরাতে মোস্তফা : আশেকে এলাহি মিরাঠি, ও তারিখুল ইসলাম : মাওলানা হিফজুর রহমান সীহারভী) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘তাঁর দৃষ্টিভ্রম হয়নি এবং তিনি সীমালঙ্গনও করেননি। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছেন’। (সূরা আন নাজম : ১৭-১৮)
বিখ্যাত সাহাবী হজরত ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেন, রজবের সাতাইশ তারিখ রাতে হঠাৎ আমার কাছে জিবরাইল (আঃ)-একটি সাদা রঙের ‘বোরাক’ নিয়ে উপস্থিত হলেন। (বোরাক হচ্ছে সাদা রঙের এক প্রকার আরোহনের যন্ত্র, সে প্রতিটি কদম ফেলে দৃষ্টির শেষ সীমানায়) রাসুল বলেন, আমি এতে আরোহন করলাম, অতপর মসজিদে প্রবেশ করলাম এবং সেখানে দুরাকাত নামাজ আদায় করলাম। এরপর আমি মসজিদ থেকে বের হলাম। তখন জিবরাঈল (আঃ)-একটি শরাব এবং একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার সামনে উপস্থিত হলেন। তখন আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। জিবরাঈল (আঃ) বললেন, আপনি ফিতরাতকেই গ্রহণ করেছেন। (মুসলিম শরীফ ১ম. পৃ.৯১)
আল্লামা ইবনে কাসীর (রাহঃ) ঘটনার বর্ণনা এভাবে বর্ণনা করেন, একদা রাত্রিবেলা রাসুল (সাঃ) হজরত উম্মে হানী (রাঃ) নিঝুম নিলয়ে নিভৃতে আরাম নিচ্ছিলেন। রাসূল (সাঃ) তখন তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলেন। এমন সময় বিস্ময়করভাবে ঘরের ছাদ ফেটে যায় এবং ছাদপথে ফিরিশতা জিবরাঈল (আঃ) অন্তকুঠরিতে অনুপ্রবেশ করেন। জিবরাঈল (আঃ)-এর সাথে অন্য ফিরিশতারাও ছিলেন। জিবরাঈল রাসুল (সাঃ)কে ঘুম থেকে জাগিয়ে হারাম শরিফে নিয়ে আসেন। রাসুল এখানে এসে হাতীমে কাবায় ঘুমিয়ে যান, জিবরাঈল ও মিকাঈল (আঃ) পুনরায় রাসুলকে জাগিয়ে দেন এবং ‘জমযম’ কূপের পাশে তাকে নিয়ে আসেন। সেখানে রাসুলের (সাঃ) বক্ষবিদারণ করে পবিত্র জমযম পানি দ্বারা তার বক্ষ মোবারক ধৌত করেন। অতপর একটি আরোহণের যন্ত্র বোরাক আনা হয়। রাসুল (সাঃ) সে যানবাহনে আরোহন করেন। রহমতে আলমের কুদরতি বাহন বোরাক বায়ূগতিতে চলছে। যাত্রাপথে রাসুল (সাঃ) ইয়াসরীব নগরীতে উপস্থিত হন। জিবরাঈল (আঃ) রাসুলকে পরিচয় করিয়ে দেন এটা ‘ইয়াসরিব’ উপত্যকা। আপনার হিজরতের স্থান। রাসুল (সাঃ) সেখানে অবতরণ করে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন। বোরাক চলতে থাকে দ্রুতগতিতে। ‘তুর’ পর্বতের পাদদেশে সানাই প্রান্তরে উপস্থিত হয়। জিবরাঈল রাসুলকে পরিচয় করিয়ে দেন এটা ‘তুর’ পর্বত। এখানে আল্লাহপাক হজরত মুসা (আঃ) নবীর সাথে কথা বলেছিলেন। এখানেই মুসা (আঃ) নবুওয়াত লাভ করেছিলেন। রাসুল সেখানে অবতরণ করে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন। এভাবে টর্নেডু গতিতে চলছে বোরাক। ক্রমেই ঈসা (আঃ)-এর জন্মস্থান ‘বায়তু লাহাম’ ফিলিস্তিনে উপস্থিত হন। জিবরাঈল (আঃ) নবীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন তাঁর জন্মস্থান। তখন সেখানে দু’রাকাত নামাজ পড়েন। এভাবে বিভিন্ন পয়গাম্বরদের স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমুহ অতিক্রম করে করে ‘বায়তুল মোকাদ্দাসে’ পৌঁছেন। বায়তুল মোকাদ্দিসে পৌঁছে পূর্ববর্তী সকল নবী রাসুলগণকে নিয়ে মসজিদে দু’ রাকাত নামাজ পড়েন এবং তিনি নামাজের ইমামতি করেন।
বায়তুল মোকাদ্দাসে ইমামতির পর জিবরাঈল (আঃ)-কে নিয়ে বোরাকের মাধ্যমে ঊর্ধ্বাকাশে যাত্রা করলেন। মুহূর্তের মধ্যেই প্রথম আসমানের প্রবেশ দ্বারে এসে উপস্থিত হন। সেখানে প্রথম নবী হজরত আদম (আঃ)-এর সাথে সালাম কুশল বিনিময় করেন। এভাবে সাত আসমানে অবস্থানকারী অন্যান্য নবীগণের সাথে সাক্ষাৎ করে সালাম বিনিময় করেন এ সময় প্রত্যেক নবীই বিশ্বনবীকে অভ্যর্থনা জানান। সপ্তম আকাশের পর রাসুল (সাঃ) ‘সিদরাদুল মুনতাহা’ পর্যন্ত পৌঁছেন। তখন রাসুলে আকরাম (সাঃ)-এমন ঊর্ধ্বে গমন করেন, এমনকি ‘লাওহে মাহফুজে’র কলম চালনার আওয়াজ শুনতে পান। তখন জিবরাঈল (আঃ) বলেন, আমার যাত্রাপথ এখানেই শেষ। এতোদপেক্ষা আপনার সংঙ্গ দেয়ার সাধ্য আর আমার নেই। অতপর রাসুল (সাঃ) আল্লাহর এতে াকাছে চলে যান যে, আল্লাহপাক তাঁর বন্ধুকে নিবিড় সান্নিধ্য দান করেন এবং এখানেই আল্লাহর দিদার লাভ করেন। একটি পর্দার আড়াল টেনে আল্লাহ তাঁর আত্মরূপ দর্শন করান তাঁর হাবীব ‘মোহাম্মদ মোস্তফা’ (সাঃ)কে। সেখানে বিশ্বনবীকে মহান আল্লাহপাক আপ্যায়ন করান। সেখানেই রাসুল (সাঃ)-মহান রাব্বুল আলামিনের সাথে একান্ত আলাপের সৌভাগ্য লাভ করেন। এখান থেকে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের পরিবর্তে উম্মতে মোহাম্মদির জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উপহার নিয়ে আসেন। (সূত্র : সীরাতে মোস্তফা : ইদ্রীস কান্দলবী (রহঃ))।
মিরাজ আত্মিক নয়, স্বশরীরেই হয়েছিলো
ইসরা ও মিরাজের সফর আত্মিক ছিল না; বরং সাধারণ মানুষের সফরের মতো স্বশরীরেই ছিলো-এ কথা কোরআন ও হাদিসে প্রমাণিত। আলোচ্য আয়াতের প্রথমে ‘সুবহানা’ শব্দের মধ্যে এদিকেই ইঙ্গিত রয়েছে। কেননা এ শব্দটি আশ্চর্যজনক ও বিরাট বিষয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। মেরাজ যদি শুধু আত্মিক, অর্থাৎ স্বপ্নজগতে সংঘটিত হয়, তবে তাতে আশ্চর্যের কী আছে। স্বপ্নে তো প্রত্যেকের মুসলমান; বরং প্রত্যেক মানুষ দেখতে পারে যে সে আকাশে উঠেছে, অবিশ্বাস্য বহু কাজ করেছে। ‘আবদ’ শব্দে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ শুধু আত্মাকে আবদ বলে না; বরং আত্মা ও দেহ উভয়ের সমষ্টিকেই আবদ বলা হয়। এ ছাড়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন মেরাজের ঘটনা হজরত উম্মে হানী (রাঃ)-এর কাছে বর্ণনা করলেন, তখন তিনি পরামর্শ দিলেন এ কথা প্রকাশ করবেন না, তাহলে কাফেররা আপনার প্রতি মিথ্যারোপ করবে। ব্যাপারটি যদি নিছক স্বপ্নই হতো, তবে মিথ্যারোপ করার কী কারণ ছিলো। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন ঘটনা প্রকাশ করলেন, তখন কাফেররা মিথ্যারোপ করলো এবং ঠাট্টা-বিদ্রুপ করলো। এমনকি কত নও-মুসলিম এ সংবাদ শুনে ধর্মত্যাগী হয়ে গেলো। ব্যাপারটি স্বপ্নের হলেও এতো সব তুলকালাম কা-ঘটার সম্ভাবনা ছিলো কি? তবে এ ঘটনার আগে এবং স্বপ্নের আকারে কোনো আত্মিক মেরাজ হয়ে থাকলে তা এর পরিপন্থী নয়। ইসরা সম্পর্কে সব মুসলমানের ঐকমত্য রয়েছে। শুধু ধর্মদ্রোহী যিন্দীকরা একে মানেনি। মেরাজ থেকে ফিরে এসে ভোরবেলা যখন নবীজি (সাঃ) রাতের সফরের ঘটনা শোনালেন, তখন কোরাইশ নেতারা তা অস্বীকার করতে লাগল। এত অল্প সময়ে মক্কা শরিফ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে গমন তাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলো। তাদের মধ্যে যে এর আগে মসজিদে আকসা ভ্রমণ করেছে সে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা বায়তুল মুকাদ্দাসের কিছু বিবরণ শোনান দেখি। অমনি আল্লাহ তা’য়ালা মসজিদের বাস্তব চিত্র নবীজি (সাঃ)-এর সামনে হাজির করে দিলেন আর তিনি দেখে দেখে সব বলে দিলেন। (বুখারি-৪৭১০)
মেরাজের ঘটনা সম্পর্কে একজন অমুসলিমের সাক্ষ্য
তাফসিরে ইবনে কাসিরে রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রোম স¤্রাট হিরাক্লিয়াসের কাছে পত্র লিখে, হজরত দাহইয়া ইবনে খলিফাকে পাঠান। রোম স¤্রাট হিরাক্লিয়াস পত্র পাঠ করার পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর অবস্থা জানতে আরবের কিছু লোককে দরবারে ডাকেন। আবু সুফিয়ান ইবনে হরব ও তার সঙ্গীরা সে সময় বাণিজ্যিক কাফেলা নিয়ে সে দেশে ছিলো। তারা দরবারে হাজির হলো। হিরাক্লিয়াস তাদের যেসব প্রশ্ন করেন, সেগুলোর বিবরণ বুখারি ও মুসলিমে রয়েছে। আবু সুফিয়ানের আন্তরিক বাসনা ছিলো, এ সুযোগে সে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সম্পর্কে এমন কিছু বলবে, যাতে স¤্রাটের কাছে তার ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আবু সুফিয়ান নিজেই বলে, আমার এ কাজে একটি অন্তরায় ছিলো, তা হলো আমার মুখ দিয়ে কোনো সুস্পষ্ট মিথ্যা বের হলে স¤্রাটের দৃষ্টিতে হেয়প্রতিপন্ন হবো। এবং আমার সঙ্গীরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে র্ভৎসনা করবে। তখন আমার ইচ্ছা জাগে মেরাজের ঘটনাটি বলতে। এটা যে মিথ্যা ঘটনা, তা স¤্রাট নিজেই বুঝে নেবেন। আমি বললাম, একটি ঘটনা বর্ণনা করছি, আপনি নিজেই বুঝবেন যে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করলেন, ঘটনাটি কী? আবু সুফিয়ান বলল, নবুওয়াতের এই দাবিদারের উক্তি এই যে সে এক রাতে মক্কা মুকাররমা থেকে বের হয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত পৌঁছে এবং প্রত্যুষের আগে মক্কায় আমাদের কাছে ফিরে আসে।
বায়তুল মুকাদ্দাসের সর্বপ্রধান যাজক ও প-িত তখন রোম স¤্রাটের পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বললেন, আমি সে রাত সম্পর্কে জানি। রোম স¤্রাট তাঁর দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এ সম্পর্কে কী জানেন? তিনি বললেন, আমার কাজ ছিলো বায়তুল মুকাদ্দাসের সব দরজা বন্ধ করার আগে আমি ঘুমাতাম না। সে রাতে আমি সব দরজাই বন্ধ করে দিলাম, কিন্তু একটি দরজা আমি বন্ধ করতে পারছিলাম না। অগত্যা কর্মচারীদের ডাকলাম। তারা সবাই চেষ্টা চালাল। কিন্তু তারাও বন্ধ করতে পারেনি। দরজার কপাট মোটেই নড়ছিল না। যেনো আমরা কোনো পাহাড়ের গায়ে ধাক্কা লাগাচ্ছি। আমি অপারগ হয়ে কর্মকার ও মিস্ত্রিদের ডাকলাম। তারা পরীক্ষা করে বলল, কপাটের ওপর দরজার প্রাচীরের বোঝা চেপে বসেছে। এখন ভোর না হওয়া পর্যন্ত দরজা বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। সকালে আমরা চেষ্টা করে দেখব, কী করা যায়। অবশেষে তা খোলা রেখেই ফিরে এলাম। সকাল হওয়ামাত্র আমি সে দরজার কাছে গিয়ে দেখি মসজিদের দরজার কাছে ছিদ্র করা একটি প্রস্তর খ-পড়ে আছে। মনে হচ্ছিল ওখানে কোনো জন্তু বাঁধা হয়েছিল। তখন আমি সঙ্গীদের বলেছিলাম, আল্লাহ তা’য়ালা এ দরজাটি সম্ভবত এ কারণে বন্ধ হতে দেননি যে হয়তোবা আল্লাহর কোনো প্রিয় বান্দা এসেছিলেন। এরপর তিনি বলেন, ওই রাতে তিনি আমাদের মসজিদে নামাজ পড়েন। এরপর তিনি আরো বিশদ বর্ণনা দিলেন (ইবনে কাসির ৩/২৪)
মেরাজ সফরে যাঁদের সঙ্গে দেখা হলো
প্রথম আসমানে হজরত আদম (আঃ), দ্বিতীয় আসমানে হজরত ইয়াহইয়া (আঃ) ও হজরত ঈসা (আঃ), তৃতীয় আসমানে হজরত ইউসুফ (আঃ), চতুর্থ আসমানে হজরত ইদ্রিস (আঃ), পঞ্চম আসমানে হজরত হারুন (আঃ), ষষ্ঠ আসমানে হজরত মুসা (আঃ), সপ্তম আসমানে হজরত ইবরাহিম (আঃ)। প্রত্যেকের সঙ্গে সালাম, কালাম ও কুশল বিনিময় হয়েছে। তিনি বায়তুল মামুর গেলেন, যেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা আসেন ও প্রস্থান করেন; তাঁরা দ্বিতীয়বার আসার সুযোগ পান না। অতঃপর সিদরাতুল মুনতাহার কাছে গেলেন। সেখানে চারটি নদী দেখলেন; দুটি প্রকাশ্য ও দুটি অপ্রকাশ্য। অপ্রকাশ্য দুটি নদী জান্নাতের আর প্রকাশ্য নদী দুটি হলো নীল ও ফোরাত। তারপর বায়তুল মামুরে পৌঁছালে এক পেয়ালা শরাব, এক পেয়ালা দুধ ও এক পেয়ালা মধু পেশ করা হলো। তিনি রাসূল (সাঃ) দুধ পান করলেন, এটাই স্বভাবসুলভ (ইসলাম)। (বুখারি শরিফ : ৩৬৭৪, খ- : ১, পৃষ্ঠা ৫৪৮-৫৫০)।
লেখক : খতিব, চাঁদপুর কালেক্টরেট জামে মসজিদ, আরবি প্রভাষক, মান্দারী আলিম মাদ্রাসা, চাঁদপুর।