প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২১, ২৩:১৪
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন যারা বিনষ্ট করতে চায় তারা ইসলাম ও দেশের শত্রু
সংবাদ সম্মেলনে চাঁদপুর জেলা ইসলামী আন্দোলন
কুমিল্লার পূজামণ্ডপে কুরআন অবমাননা ও হাজীগঞ্জে উক্ত ঘটনার প্রতিবাদকারী জনতার ওপর পুলিশের গুলি ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চাঁদপুর জেলা শাখা চাঁদপুর শহরস্থ বিপণীবাগ কার্যালয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সংসাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে সংগঠনের সভাপতি শেখ মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। সাধারণ সম্পাদক কে.এম. ইয়াসিন রাশেদ সানির সঞ্চালনায় আয়োজিত এ সম্মেলনে সহ-সভাপতি মাওলানা গাজী মুহাম্মদ হানিফ, কোষাধ্যক্ষ আলহাজ¦ মামুনুর রহমান বেলালসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের মধ্যে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত, ইলশেপাড়ের প্রধান সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন, ডিবিসি টিভির জেলা প্রতিনিধি তালহা জোবায়েরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
|আরো খবর
সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলনের লিখিত বক্তব্য
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সম্প্রীতির এ বন্ধন যারা বিনষ্ট করতে চায় তারা ইসলাম ও দেশের শত্রু।
কুমিল্লার নানুয়ার দিঘিরপাড় পূজামণ্ডপে মূর্তির পায়ের নিচে পবিত্র কুরআন রেখে অবমাননা ও হাজীগঞ্জে উক্ত ঘটনার প্রতিবাদকারী জনতার উপর গুলি ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজকের এই সংবাদ সম্মলেন।
এই সম্মলেনে উপস্থতি ইলকেট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়ার সকল সাংবাদিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
জাতির বিবেক সাংবাদিক ভাইয়েরা! বর্তমান আধুনিকতার এই যুগে সাংবাদিকরা শুধুমাত্র সংবাদ সংগ্রহ পরিবেশনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সরকার ও দেশ গঠনে নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের ন্যায় সংবাদ মাধ্যমটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক যুগে আমরা কম-বেশি সবাই মিডিয়া নির্ভর। তাই সংবাদ পরিবেশনের ধরনের ওপর একটি জাতির কল্যাণও হতে পারে আবার ক্ষতিও হতে পারে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!
আপনারা নিশ্চয় জানেন, ইসলাম শান্তি, মানবতা ও নিরাপত্তার ধর্ম। ইসলাম অন্য কোনো ধর্মের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে নিষেধ করেছে।
এমনকি ইসলামের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো ব্যক্তির অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে জোর করে ইসলামে দীক্ষিত করার ব্যাপারে নিষেধ করেছেন।
ইসলাম সহনশীল, সহানুভূতি ও নিরাপত্তার ধর্ম। যার কারণে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নেতৃত্বে মদিনায় ইসলামী শাসন কায়েম হওয়ার পর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ধর্ম ও গোত্রের লোকজন শুধুমাত্র তাদের জান-মাল, ইজ্জত ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় ইসলামী ভূখণ্ডে আশ্রয় নিয়েছিলো।
সাংবাদিক ভাইয়েরা, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, প্রত্যকে ধার্মিকের মাঝে কিছু কিছু বিষয় আবেগপূর্ণ এবং ঈমান সংশ্লিষ্টও। যেমন ধর্মগ্রন্থ, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ইত্যাদি।
মুসলমানদের কাছে মহান আল্লাহ তা’আলা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, পবিত্র কোরআন, মসজিদ, মাদ্রাসা ইত্যাদি বিষয় ভালোবাসা এবং ঈমান সংশ্লিষ্ট। এসব বিষয়ে কেউ কটুক্তি, বিদ্রƒপ, অবমাননা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলে মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। আমরা লক্ষ্য করছি, এই স্পর্শকাতর জায়গাগুলোতে বারবার আঘাত করে মুসলমানদের সাথে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি করতে চায় একটি চক্রবদ্ধ গোষ্ঠী। ভোলা, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী প্রকৃত দোষীরা থেকে গেছে অধরা। বরং অবমাননার প্রতিবাদে নামা ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উপর নেমে এসেছে হামলা-মামলার পরোয়ানা। এতে ধর্ম বিদ্বেষীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!
গত পরশু কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননা ও হাজীগঞ্জে বিক্ষুব্ধ জনতার উপর নির্বিচারে গুলি ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ বিশাল সমাবেশ ও বিক্ষোভের ডাক দিতে পারতাম, কিন্তু ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল গণমানুষের রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কোনো ঘটনা ঘটার পর তার সত্যতা ও বাস্তবতা নিবিড় পর্যবেক্ষণ ব্যতীত কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করাকে যুক্তিযুক্ত মনে করে না।
গত পরশু হাজীগঞ্জে যে ঘটনা ঘটেছে স্থানীয় ও মিডিয়ার তথ্যমতে, তাতে চারজন নিহত এবং অসংখ্য মুসল্লি আহত হয়েেছ। নিহত চার জনের নাম মোঃ শামীম (১৯), হৃদয় হোসেন (১৫), আল-আমিন (১৮) ও বাবুল (৩৮)।
আমরা লক্ষ্য করছি যে, হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা এখনো শেষ হয়নি। তাই এই মুহূর্তে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিঘ্ন ঘটতে পারে, তৈরি হতে পারে বিশৃঙ্খলাও। ফলে পূজার আনুষ্ঠানিকতায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
তাই আমরা এ সংবাদ সম্মলেন থেকে আপনাদের মাধ্যমে সরকারকে আমাদের দাবিসমূহ জানিয়ে দিতে চাই
১. কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে কুরআন অবমাননাকারী প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করে অনতিবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। নিরীহ কোনো ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
২. হাজীগঞ্জে বিক্ষুব্ধ জনতার উপর গুলবর্ষণের হুকুমদাতাসহ প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৩. কোরআনের ইজ্জত রক্ষার আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছে তাদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং যারা আহত হয়েছে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে ইসলাম ও দেশবিরোধী সকল অপশক্তিকে দ্রুততম সময়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।
৫. আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল, কোরআন ও ইসলাম এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে সংসদে আইন পাস করতে হবে।
যত দ্রুত সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে ততই দেশ ও দশের জন্য মঙ্গল হবে, নচেৎ উদ্ভূত পরস্থিতিরি জন্য সরকারকেই সকল দায় বহন করতে হবে।
আমাদের দাবি পূরণে সরকার আন্তরিকতার পরচিয় দিতে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের আলোকে কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে ইনশাআল্লাহ।