বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৩৭

সাউন্ড গ্রেনেডের আঘাতের পর এবার রাজপথে ব্যারিকেড ভাঙলেন শিক্ষকরা; শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি তুঙ্গে।

ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগে শিক্ষকরা, রাজধানীজুড়ে যান চলাচল স্থবির

বিশেষ প্রতিবেদক: মো. জাকির হোসেন

Screenshot-20251015-160125

রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে তিন দফা দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের অংশ হিসেবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। দুপুরের দিকে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে তারা শাহবাগ চত্বর দখল করে নেয়। ফলে শাহবাগ হয়ে বাংলামোটর, পল্টন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রমনা এলাকাজুড়ে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়ে।

আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, তাদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—

  • মূল বেতনের ওপর ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা প্রদান
  • চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকায় উন্নীতকরণ
  • কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশে উন্নীতকরণ

তারা বলেন, “বছরের পর বছর ধরে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ভাতা সামান্য হারে বৃদ্ধি করা হলেও তা বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ে আমরা আজ ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত।”

এর আগে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। সেখানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা হাতে জাতীয় পতাকা ও দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশ নেন। দুপুর পৌনে ২টার দিকে তারা শাহবাগ অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন। পথে পুলিশ তাদের থামানোর চেষ্টা করলেও বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিতে দিতে ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ চত্বরে অবস্থান নেন।

তাদের স্লোগান ছিল—

  • “শিক্ষকের প্রাপ্য দিতে হবে”
  • “ন্যায্য দাবির জবাব চাই”
  • “শিক্ষা বাঁচাও, শিক্ষক বাঁচাও”

অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো শাহবাগ এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। অবরোধে আটকে পড়ে শত শত যানবাহন।

“আমরা সরকারের কোনো বিরোধিতা করছি না। আমরা শুধু ন্যায্য প্রাপ্যের জন্য রাজপথে এসেছি। বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষা জাতীয়করণের রূপরেখা না পাওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।” – অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী, সদস্যসচিব, এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট

“আমরা শিক্ষার আলো জ্বালাই, অথচ নিজের ঘরেই অন্ধকারে বেঁচে আছি। এখন সময় এসেছে আমাদের কণ্ঠস্বর রাষ্ট্রের কানে পৌঁছানোর।” – এক শিক্ষক নেতা

গত রোববার (১২ অক্টোবর) প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারীদের ধস্তাধস্তি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ১০ জন শিক্ষক আহত হন। ঘটনার পর থেকেই সারাদেশে পাঠদান বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

শিক্ষক-কর্মচারীরা টানা চতুর্থ দিনের মতো রাজপথে রয়েছেন। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে শাহবাগ ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা দেন অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সমাধানমূলক প্রস্তাব না আসায় শিক্ষকদের ক্ষোভ আরও বাড়ছে।

“শিক্ষকদের আন্দোলন আমরা সহনশীলতার সঙ্গে দেখছি। তারা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছেন। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিকল্প রুটে যানবাহন সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।” – শাহবাগ থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা

“অবস্থার কারণে ভোগান্তি হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু শিক্ষকদের দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। তারা সমাজ গড়েন, অথচ নিজেরাই ন্যায্য মর্যাদা পান না।” – এক অফিসগামী

“আমাদের সন্তানদের ক্লাস বন্ধ, শিক্ষকরাও রাস্তায়— এটা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অশুভ সংকেত।” – এক অভিভাবক

শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি, সরকারের পক্ষ থেকে যদি দ্রুত বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন না আসে এবং শিক্ষা জাতীয়করণের স্পষ্ট রূপরেখা প্রকাশ না করা হয়, তাহলে তারা শাহবাগসহ সারা দেশে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। তাদের ঘোষণা— “দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছেড়ে যাব না।”

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়