প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত ‘বই উৎসব’: অপচয়ের প্রতিরোধে নতুন উদ্যোগ
বই উৎসবের নামে অপচয়?
অপচয় রোধে সরকারের নতুন পদক্ষেপ কতটা যুক্তিযুক্ত?
বছরের শুরুতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বই বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে একসময় উদযাপিত 'বই উৎসব' আজ এক বিতর্কিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে এ উৎসব বন্ধ করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে, যার পেছনে রয়েছে প্রায় ৭৭ কোটি টাকার আর্থিক লোপাটের অভিযোগ।
|আরো খবর
সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এই উৎসবের নামে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ড ও জেলা প্রশাসক পর্যায়ে অর্থ অপচয় ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল। এ ছাড়া বই ছাপার ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগও উঠে আসে। তাই, বই উৎসবের পরিবর্তে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণের নতুন পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে এ অপচয় বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানায়, এবার ৪০ কোটির বেশি বই ছাপানো হচ্ছে এবং শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনেই তা বিতরণ করা হবে। এর পাশাপাশি অনলাইন ভার্সন চালুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আরো সহজে বই পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
বই উৎসব: উৎসব নাকি অপচয়?
২০১১ সালে প্রথমবার বই উৎসব চালু করা হয়। শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে এটি বড় ধরনের প্রচারণা হিসেবে কাজ করে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়। তদন্তে দেখা গেছে, গত এক দশকে শুধু এনসিটিবি ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থা থেকে চেকের মাধ্যমে ২৭ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অভিভাবকদের ক্ষোভ ও অভিযোগ
অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, বিনামূল্যের বই বিতরণের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি বা সেশন ফি’র অজুহাতে টাকা নেওয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের কথা বলা যায়, যেখানে শিক্ষার্থীদের নতুন বই পেতে তিনশ টাকার বিনিময়ে বাধ্য করা হয়।
শিক্ষাবিদদের প্রশংসা
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, "বই বিতরণ কার্যক্রম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নেতৃত্বে পরিচালিত হলে অপচয় ও দুর্নীতি কমে আসবে।"
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মতে, বই উৎসব ছিল আওয়ামী লীগের সময় এক ‘লুটপাটের উৎসব’। সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেন, “আমাদের সময়ে বই বিতরণ কার্যক্রম ছিল সহজ, খরচবিহীন এবং সময়-সাশ্রয়ী। বর্তমানে এটি পুরোপুরি চাঁদাবাজি ও লুটপাটের মঞ্চে পরিণত হয়েছে।”
নতুন পথের প্রত্যাশা
নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা যেন সময়মতো বই হাতে পায়, সে জন্য সরকার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। প্রিন্টার্সদের অবহেলায় বিলম্ব হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান, শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রত্যাশা, এই পরিবর্তন প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করবে এবং পূর্বের অনিয়ম ও অপচয়ের ধারা চিরতরে বন্ধ হবে।