প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:২৪
চাঁদপুরে ভরা মৌসুমে ইলিশের ঘাটতি, দামও চড়া
ইলিশের ভরা মৌসুমেও চাঁদপুরের বাজারে নেই প্রত্যাশিত সংখ্যক ইলিশ। যা মিলছে, তার দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইলিশ অবতরন কেন্দ্র হিসেবে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটের বেশ সুনাম দেশজুড়ে। কিন্তু এবার আড়তগুলোতে চাহিদার তুলনায় ইলিশের আমদানি খুবই কম। এই সময় চাঁদপুরের পদ্মা মেঘনা ছাড়াও সাগর ও নদী উপকূলীয় এলাকার নদ নদীতে জেলেদের আহরিত প্রচুর ইলিশ আমদানি ও সরবরাহ হতো। এবার মাছের আমদানি তেমন একটা নেই।
|আরো খবর
ইলিশ ঘাট বলে পরিচিত চাঁদপুর মাছঘাটের ইলিশ ব্যবসায়ীদের কাছেও ইলিশের মজুদ খুবই কম। এই ঘাট এলাকার ইলিশ ব্যবসায়ী ও আড়তদার সুমন খান বলেন, ‘এবারের মতো ইলিশের আকাল আর কখনো হয়নি। আগে যেখানে তার ভাণ্ডারে প্রতিদিন লোকাল নদ নদীসহ সাগর ও ভোলা হাতিয়া লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে দুই-তিনশ মণ ইলিশ আসত, এবার সেখানে তিন থেকে চার মণের মতো ইলিশ আসছে। আর যেগুলো আসছে, সেগুলোর সাইজ বড়, আবার দামও বেশি।
সরজমিন ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে
এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ১ হাজার ৭০০টাকা। ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য প্রজাতির মাছ বিক্রি করে আড়তগুলো সরগরম।তবে ইলিশের চেয়ে অন্যান্য মাছের সরবরাহ বেশি দেখা গেছে।
ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম আড়তগুলো। দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর জন্য বক্স করা হচ্ছে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ। নোয়াখালী হাতিয়া থেকে আসা ইলিশ ট্রাক থেকে নামিয়ে স্তুপ করা হচ্ছে। তাৎক্ষনিক হাকডাক দিয়ে বিক্রি হচ্ছে আড়তে।
ঘাটের ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে এসে ভিড়ছে জেলে নৌকা। তারা স্থানীয় পদ্মা-মেঘনা থেকে ধরে আনা ইলিশ বিক্রি করছেন আড়তে।
জেলে মুছা পাটওয়ারী ও সোলায়মান বলেন, ঋণ করে কেনা জাল এবং নৌকা মেরামত করে নেমেছি নদীতে। নদীতে ইলিশ কম। তাবে দাম ভাল পাচ্ছি। আর একমাস পরে মা ইলিশ রক্ষায় আসবে নিষেধাজ্ঞা। তাই আমাদে চিন্তা এখন কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবো।
চাঁদপুর শহরের বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমার স্বজনদের জন্য ঢাকায় পাঠাতে ৭৮ কেজি ইলিশ কিনেছি। স্থানীয় প্রতিকেজি ইলিশ এখনো ১ হাজার ৬শ’ থেকে ১ হাজার ৭শ’ টাকা। আরও বেশি ইলিশ ক্রয় করার ইচ্ছা থাকলেও বেশি দামের কারণে কিনতে পারিনি।
নরসিংদী থেকে ইলিশ কিনতে এসেছেন এসএম শাহীন। তিনি বলেন, ইলিশের বাড়ি খ্যাত চাঁদপুর মাছঘাটে এসেছি কম দামে ইলিশ কিনতে। কিন্তু এখানে এসে দেখি ভিন্ন চিত্র। ইলিশের দাম অনেক বেশী। ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১৭০০টাকা। কি কারণে ইলিশের দাম এত বেশী বুঝতে পারছি না।
ভাই ভাই মৎস্য আড়তের দেলোয়ার হোসেন ব্যাপারী বলেন, স্থানীয় ইলিমের আমদানি কিছুটা বেড়েছে। তমে দাম কমেনি। ইলিশের পাশাপাশি পোয়া, চিংড়ি ও দেশীয় চাষের মাছও ঘাটে বিক্রি হচ্ছে।
মেসার্স মিজানুর রহমান ভুঁইয়া আড়তের ম্যানেজার ওমর ফারুক বলেন, গত বছর এই সময় দেড় থেকে দুই হাজার মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে। এবার কমেছে। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৭০০মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। ছোট সাইজের ইলিশ প্রতিমণ ৩০-৩৫ হাজার টাকা। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ইলিশ প্রতিকেজি ১১শ’ থেকে ১২শ’ টাকা। ১ কেজি ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি ১৬০০ থেকে ১৭০০টাকা। আর ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ প্রতিকেজি ২০০০ থেকে ২১০০টাকা। তবে দক্ষিণাঞ্চলের হাতিয়া থেকে আসা ইলিশ প্রতিকেজি ১০০ থেকে ২০০টাকা কম।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক হাজী শবে বরাত সরকার বলেন, মাছঘাট এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ঘুরতে আসেন। আবার ইলিশ মাছও ক্রয় করেন। ক্রেতাদের চাহিদার আলোকে সরবরাহ কম। যে কারণে দামও কিছুটা বেশী। এখন প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৭শ’ মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি আড়তগুলোতে বিক্রি হচ্ছে চিংড়ি, পোয়া ও চাষকৃত মাছ।