রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৫

২৬১ অভিযানে ২০ লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল, ২ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ আহরণে মেঘনায় নামছে লক্ষ্মীপুরের লক্ষাধিক জেলে

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ আহরণে মেঘনায় নামছে লক্ষ্মীপুরের লক্ষাধিক জেলে
তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)

মা ইলিশের প্রজনন রক্ষায় লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে (৪ থেকে ২৫ অক্টোবর) ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ শুরু হবে।

জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্সের অভিযানে (৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত) ২২ দিন নদীতে ইলিশ আহরণ বন্ধ রাখেন জেলেরা।

গত ২২ দিনে মোট-২৬১টি অভিযানে ২০ দশমিক ৪০৫ লক্ষ মিটার কারেন্ট জাল, ২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন ইলিশ, ৩৫টি মামলা, এক লক্ষ ৩২ হাজার টাকা জরিমানা, ১৯জনকে জেল, ২২ টি নৌকা আটক করা হয়েছে। এই অভিযানে প্রশাসন, কোস্ট গার্ড, নৌপুলিশ ও সেনাবাহিনী সহায়তা করে।

লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরের মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয় শনিবার (২৫ অক্টোবর ২০২৫) রাত ১২টায়। সেজন্যে নদীতে মাছ আহরণের জন্যে জেলেরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রামগতি থেকে রায়পুর হয়ে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকা পর্যন্ত মেঘনা নদীতে লক্ষাধিক জেলে শনিবার মধ্যরাতে (২৫ অক্টোবর ২০২৫) মাছ আহরণ করতে নদীতে নেমেছে। মা ইলিশ রক্ষায় সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে অধিকাংশ জেলেরা তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন। জেলা টাস্কফোর্সের দাবি, এ বছর মা ইলিশ রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিলো।

জেলা মৎস্য অফিস জানায়, অভিযানকালে অসাধু জেলেদের আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা আদায় করা হয়। এছাড়া অভিযানকালে কারেন্ট জাল জব্দ করে পোড়ানো হয়, আটককৃত নৌকা নিলামে বিক্রি করা হয় এবং উদ্ধারকৃত ইলিশ মাছ গরিব-দুঃস্থ ও এতিমদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর উপকূল এলাকায় অধিকাংশ মানুষ মৎস্য আহরণ ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। জেলেরা অধিকাংশই গুল্টিজাল ব্যবহার করে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করেন। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মা ইলিশ নিধন করায় তাদের আটক করে মামলা ও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়। ২২ দিন বেকার থাকার পর নৌকা ও জাল মেরামত করে জেলেরা মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রায়পুরের পুরাণ বেড়ি, হাজিমারা স্লুসগেট, মাস্টারঘাট ও সদরের মজুচৌধুরী ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জাল ও নৌকা মেরামতের কাজে জেলেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

জেলে আবু তাহের ও সোবহান হাওলাদার বলেন, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় যে অভিযান দেয় তা আমরা মানি। তবে কিছু অসাধু জেলে নদীতে নেমে মাছ ধরে নিয়ে যায়। যে কারণে অভিযান শেষে নদীতে নেমে আমরা মাছ পাই না। আমারা ঋণ করে নতুন জাল ও নৌকা মেরামত করে নদীতে নামতে হয়। নদীতে নেমে মাছ না পেলে খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আর নিষেধাজ্ঞা সময়কালে সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিমাণ খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়, তা দিয়ে কিছুই হয় না। বর্তমান বাজারের যে অবস্থা, কাঁচাবাজারের দাম অনেক বেশি, সন্তানদের পড়ালেখার খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্যে সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এবার তা অনেকটাই সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকায় কোনো জেলেই নদীতে নামতে পারে নি। আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বসে আছি। দেখা যাক অভিযান শেষে কী পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায়।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকার দেয়া নিষেধাজ্ঞার ২২ দিন জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স তা সর্বাত্মক সফলভাবে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেছে। এ সময় জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে জনপ্রতি ২৫ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও জেলা টাস্কফোর্সের যৌথ অভিযানে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান সফল হওয়ায় এ বছর ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে বিশ্বাস করছি।

প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর জেলায় নিবন্ধিত জেলে ৫৫ হাজার। এর মধ্যে কার্ডধারী জেলে রয়েছে ৪৪ হাজার। তবে বেসরকারি হিসেবে জেলায় প্রায় লক্ষাধিক জেলে রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়