প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২১, ২১:১৬
চাঁদপুরের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম
এক্সপার্টদের রিপোর্ট ছাড়া বড় কোনো উন্নয়ন প্রকল্প আর নয়
চাঁদপুরের সন্তান হিসেবে এ জেলার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তো অগ্রাধিকার পাবেই
‘হুটহাট বা তড়িঘড়ি করে বড় ধরনের কোনো উন্নয়ন প্রকল্প আর নেয়া হবে না। পঞ্চাশ কোটি টাকার উপরে কোনো উন্নয়ন কাজ হলেই সেখানে আগে এক্সপার্ট দ্বারা বিভিন্ন সার্ভে করা হবে। সে সার্ভে রিপোর্ট ছাড়া প্রকল্প অনুমোদন হবে না। এক কথায় এক্সপার্টদের রিপোর্ট ছাড়া বড় কোনো উন্নয়ন প্রকল্প আর হবে না। পেছনে যা হয়েছে তো হয়েছেই। সেগুলো নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। আগামী ৫০-১০০ বছরে কী হতে পারে সে বিষয় মাথায় রেখে মেগা প্রকল্পগুলো নেয়া হবে।’ চাঁদপুরসহ সারাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে এভাবেই নিজের চিন্তা-ভাবনা এবং অবস্থান তুলে ধরলেন বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের নবনিযুক্ত প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
|আরো খবর
২৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত চাঁদপুরের সাংবাদিকদের সাথে প্রতিমন্ত্রীর মতবিনিময় সভায় চাঁদপুরের বিভিন্ন সমস্যা, অতীব প্রয়োজনীয় উন্নয়ন এবং সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের আলোকে দেয়া তাঁর বক্তব্যের মূল কথাই ছিল এটি। তিনি বেশ কয়েকবার জোর দিয়ে এও বলেন, চাঁদপুরের একজন সিনিয়র মন্ত্রী রয়েছেন ডাঃ দীপু মনি। তিনি মন্ত্রীর দিক দিয়েও আমার বড়, আবার রাজনৈতিক দিক থেকেও তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। তাই তাঁর সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই চাঁদপুরের উন্নয়ন কাজগুলো হবে। আমরা দুজনে বসে পরামর্শ করেই উন্নয়ন কাজগুলো করবো।
সাংবাদিকরা পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর কাছে চাঁদপুরের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু উন্নয়ন কাজের বিষয়ে জানতে চান এবং এই কাজগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এ সবের মধ্যে গুরুত্ব পায় আধুনিক চাঁদপুর নৌ বন্দর নির্মাণ, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস, চাঁদপুর শহর রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ, চাঁদপুর-শরীয়তপুর সেতু বা টানেল, ভাটিয়ালপুর-হরিণা সড়ক দুইলেনে টেকসইভাবে করা, চাঁদপুর স্টেডিয়ামকে জাতীয় মানের করা, ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী ও বিশ্ব রেকর্ড করা সাঁতারু আঃ মালেক এবং অরুণ নন্দীর স্মৃতি রক্ষায় চাঁদপুরের সুইমিংপুলকে আধুনিক মানের করা, একটি আধুনিক মানের পর্যটন স্পট, শিশু পার্ক করা এবং চাঁদপুর-ঢাকা দ্রুততম সময়ে যাতায়াতে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। এছাড়াও আরো কিছু সমস্যার বিষয় সাংবাদিকরা তুলে ধরেন। সাংবাদিকরা তাঁদের বক্তব্যে চাঁদপুরে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির বিগত সময়ের এবং বর্তমান মেয়াদকালে যে উল্লেখযোগ্য বড় বড় উন্নয়ন কাজ হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণও তুলে ধরেন।
প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমাকে যে জায়গা থেকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, এর দৃষ্টান্ত খুব কমই আছে। আমলা থেকে সরাসরি মন্ত্রী করার রেকর্ড তেমন একটা নেই বললেই চলে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমার ওপর আস্থা আছে বলেই তাঁর সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব আমাকে তিনি দিয়েছেন। আমি তাঁর সেই আস্থা এবং বিশ্বাসের মর্যাদা শতভাগ রক্ষা করার চেষ্টা করবো। চাঁদপুর শহর রক্ষায় স্থায়ী বাঁধের বিষয়ে তিনি বলেন, নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ নদী তীরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু ফল তেমন কিছুই হয় নি। সামনে আর এভাবে হবে না। নদীর প্রবাহ, নদীর গতিপথ আগে বুঝতে হবে। কারণ, নদীকে বাধা দিয়ে রাখা যায় না। তাকে বাধা দিলে সে পাল্টা আঘাত করবে। তার গতিপ্রবাহকে আগে নির্বিঘ্ন করতে হবে। চাঁদপুর শহর রক্ষার ক্ষেত্রে আগে এ বিষয়টি মাথায় আনতে হবে যে, মেঘনার পানি স্বাভাবিক প্রবাহে কোথায় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। সেই বাধা আগে দূর করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিনি কক্সবাজার নামে মেঘনার বুকে যে চর জেগেছে, সে চরটি কেটে ফেলতে হবে। কারণ, মেঘনার বুকে জেগে ওঠা এই চরের কারণে মেঘনার পানি তার স্বাভাবিক গতিপ্রবাহে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। আর সেই পানি এসেই চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধে আঘাত হানছে। তাছাড়া এটা নিয়ে স্টাডি চলছে। ২০২২ সালের জুন নাগাদ স্টাডির রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তখন সে অনুযায়ী চাঁদপুর শহরকে স্থায়ীভাবে রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আধুনিক নদী বন্দর নির্মাণ এবং মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাসের বিষয়ে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সাথে সহসা বসবেন এবং এ বিষয়ে জেনে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। চাঁদপুর-শরীয়তপুর সেতু নির্মাণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ টিমের কাজ চলছে বলে তিনি সাংবাদিকদের অবহিত করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে টানেল হওয়ার বিষয়ে বলা হলেও এটি অনেক ব্যয়বহুল। তবে পরিবেশের জন্যে টানেল হওয়াই ভালো। কিন্তু ব্যয়ের বিষয়টি বিবেচনায় এনে এখানে সেতু নির্মাণ করারই পরিকল্পনা। এছাড়া অন্যান্য উন্নয়নের বিষয় তিনি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির সাথে আলাপ-পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তবে তিনি বার বার জোর দিয়ে বলেন, যে কোনো উন্নয়ন করার আগে এর সম্ভাব্যতা এবং যথার্থতা আগে যাচাই করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, আমি সারাদেশের মন্ত্রী হলেও চাঁদপুর যেহেতু আমার নিজ জেলা, সে বিবেচনায় চাঁদপুরের উন্নয়ন তো অগ্রাধিকার পাবেই। তিনি গজারিয়া-মতলব আঞ্চলিক হাইওয়ে করার বিষয়টি সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভায়ও পুনর্ব্যক্ত করেন।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ, পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বিপিএম (বার) ও এনএসআই’র ডিডি শেখ মোঃ আরমান। সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, অধ্যক্ষ জালাল চৌধুরী, শহীদ পাটোয়ারী, শরীফ চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মিলন, সিনিয়র সাংবাদিক অধ্যাপক দেলোয়ার আহমেদ, সহ-সভাপতি সোহেল রুশদী, এএইচএম আহসান উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল ইমরান শোভন, রিয়াদ ফেরদৌস, ক্রীড়া সম্পাদক ফারুক আহমেদ, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক তালহা জোবায়ের প্রমুখ। এছাড়া প্রেসক্লাবের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিসহ অর্ধশতাধিক সাংবাদিক এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভার শুরুতে পরিচয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ প্রতিমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান এবং প্রেসক্লাবের ৫০বছর পূর্তির উত্তরীয় ও কোট পিন পরিয়ে দেন। এছাড়া প্রেসক্লাবের উন্নয়ন বিষয়ে একটি লিখিত আবেদন প্রতিমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা।
মতবিনিময় সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।
উল্লেখ্য, প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমের গ্রামের বাড়ি মতলব উত্তর উপজেলায়। তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর এটাই প্রথম তাঁর নিজ জেলা চাঁদপুরে সফর। তিনি ২৫ আগস্ট মতলব উত্তর দিয়ে তাঁর দু’দিনের সফর কর্মসূচি শুরু করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সফরের শেষদিন সকালে তিনি প্রথমে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। এর পরপরই তিনি সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। এ মতবিনিময় শেষে তিনি সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন করেন। বিকেলে তিনি সার্কিট হাউজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেন। এরপর তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে চাঁদপুর ত্যাগ করেন।