প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২২, ০০:০০
সাংবাদিকদের সাথে মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপির মতবিনিময়
অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি এবার সম-উন্নয়ন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে জোর দেবো
যে চিন্তা-চেতনা থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, একই চিন্তা-চেতনায় উন্নয়ন করে যাচ্ছি

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমাদের লক্ষ্য তখন একটাই ছিল- মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করা, স্বাধীন করা। মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং দেশপ্রেম ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। তখন যেমন কোনো কিছু পাওয়ার জন্য, কোনো কিছু হওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করি নি, এখনো যে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, তা কোনো বিনিময় পাওয়ার জন্য নয়। দেশপ্রেম এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। যে চিন্তা-চেতনা থেকে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, একই চিন্তা-চেতনা চেতনায় এলাকার উন্নয়ন করে যাচ্ছি। আর এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করতে গিয়ে কখনো দলীয় দৃষ্টিকোণে দেখি নি। এলাকার আপামর জনসাধারণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছি।
কথাগুলো বলেছেন মহান মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টর কমান্ডার, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম। তিনি গতকাল রোববার চাঁদপুরের বেশ ক’জন সিনিয়র সাংবাদিকের সাথে মতবিনিময় সভায় তাঁর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরতে গিয়ে এ বক্তব্য রাখেন। দীর্ঘ প্রায় দুই ঘণ্টার এই মতবিনিময় সভায় মহান মুক্তিযুদ্ধের এই বীর সেনানী ১৯৯৬ সাল থেকে চার মেয়াদে তাঁর নির্বাচনী এলাকা হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তির ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন। একই সাথে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন।
মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম বলেন, ১৯৯৫ সাল থেকে আমি আমার এলাকার জনগণের সাথে রয়েছি। এলাকার জনগণের কল্যাণে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছি। আমি চাই সবাই শান্তিতে বসবাস করুক। আমার বিশ্বাস আমার নির্বাচনী এলাকায় এ পরিবেশটা বজায় রাখতে পেরেছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় কোনো রাজনৈতিক হানাহানি নেই। তিনি বলেন, আমি যখন প্রথম নির্বাচিত হই, তখন দু’ উপজেলায় মাত্র ৬ কিলোমিটার রাস্তা পাকা ছিলো। আর বর্তমানে সাড়ে ৬শ’ কিলোমিটার রাস্তা পাকা হয়েছে। ডাকাতিয়া নদীর উপর হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি অংশে ৭টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে, আরও দুটি ব্রিজের কাজ চলমান রয়েছে। সাড়ে ৭শ’ থেকে ৮শ’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে এ এলাকার মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পেয়েছে। আর এখন শতভাগ বিদ্যুতের আওতায়। এছাড়াও ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রধান সড়ক নির্মাণ, ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ডাকাতিয়ার পাড়ে ওয়াকওয়ে, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, পৌরসভার উন্নয়নসহ অসংখ্য উন্নয়ন হয়েছে। ডাকাতিয়া নদী ড্রেজিং চলছে। এর ফলে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে, মাছের অবাধ বিচরণ ঘটবে, পরিস্কার পানি পাওয়া যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চাঁদপুর আধুনিক নৌ বন্দরের টেন্ডার প্রক্রিয়া আগামী মাসের মধ্যেই শেষ হবে। এছাড়াও যানজট নিরসনে হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তিতে বাইপাস সড়ক নির্মাণের আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া হয়েছে, অচিরেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি তাঁর বক্তব্যে বার বার বলেন, আমার হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি সংসদীয় এলাকায় অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এবার সম-উন্নয়ন ও মানব সম্পদ উন্নয়নে জোর দেবো। দেশের যে পাঁচটি সংসদীয় এলাকাকে পরীক্ষামূলকভাবে সম-উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে, তার মধ্যে হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি রয়েছে।
শাহরাস্তি পৌরসভার মেয়র হাজী আঃ লতিফ মিয়ার বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। অত্যন্ত প্রাণবন্ত এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ এ মতবিনিময় সভায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশপ্রেম আমাকে কাজ করতে অনুপ্রেরণা যোগায়। আমি আমার এলাকার জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছি। তিনি জানান, আমার মেয়াদে দুই উপজেলায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে কাঁচা রাস্তাগুলো পাকা হবে বলে তিনি জানান।
এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন রশীদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান চৌধুরী সেফালী, পৌর মেয়র হাজী আঃ লতিফ, বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমজাদ হোসেন, চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দোহা, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, শহীদ পাটোয়ারী, শরীফ চৌধুরী, ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সিনিয়র সহ-সভাপতি রহিম বাদশা, সহ-সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলম পলাশ, একাত্তর কণ্ঠের সম্পাদক ও প্রকাশক জিয়াউর রহমান বেলাল, সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার ফারুক আহাম্মদ, ইল্শেপাড়ের প্রধান সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন, সুদীপ্ত চাঁদপুরের ভারপ্রাপ্ত সম্পদাক এমআর ইসলাম বাবু, একাত্তর কণ্ঠের সাংবাদিক ডাঃ মাসুদ হাসান, শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মোঃ আবুল কালাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল ইসলাম কাজল, হাজীগঞ্জের সাংবাদিক মহিউদ্দিন আজাদ প্রমুখ।
এছাড়া শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল মজুমদারসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।