শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২২, ০০:০০

অবৈধ ড্রেজিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নদী রক্ষা কমিশনের কঠোর হুঁশিয়ারি

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে : জেলা প্রশাসক

অবৈধ ড্রেজিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নদী রক্ষা কমিশনের কঠোর হুঁশিয়ারি
চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥

চাঁদপুর জেলাজুড়ে এখন ব্যাপক আলোচিত বিষয় হচ্ছে নদী থেকে বালু উত্তোলন। এই বালু উত্তোলন বৈধ কি অবৈধ সেটিই আলোচনার বিষয়বস্তু। যদিও চাঁদপুরের নদ-নদীতে এই বালু উত্তোলন ২০০২ সাল থেকে হয়ে আসছে। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামাত জোট সরকার। সেই তখন থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা ১৯ বছর চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠি বালু উত্তোলন করলেও প্রশাসন বা কোনো মহল থেকে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে এই সময় তথা গত দুই-আড়াই মাস এটা নিয়ে বেশ সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে প্রশাসনকে। প্রশাসনের এই সোচ্চার হওয়াকে জনগণ স্বাগত জানাচ্ছে যে, এর ফলে নদীতে অবৈধ এবং অপরিকল্পিত ড্রেজিং অন্তত বন্ধ হবে। তাছাড়া অবৈধ এবং নির্দিষ্ট এরিয়ার বাইরে ড্রেজিং হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন স্বউদ্যোগী হয়েই অভিযান চালাতে পারে, এ ক্ষেত্রে কোনো সংস্থার অনুমতি লাগে না বলে মনে করেন সচেতন মহল।

চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বালু উত্তোলন বিষয়ে ঢাকায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উচ্চ পর্যায়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হয় গত সোমবার। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই সভা আহ্বান করা হয়। সভায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকও উপস্থিত ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ এ সভায় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা থেকে বালু উত্তোলন সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বিষয়সহ সকল কিছু যাচাই ও বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়।

সভার বিষয়ে কথা হয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর সাথে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে। তিনি জানান, সভার রেজুলেশন ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসককে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বলছি, চাঁদপুরের নদীতে যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতেছিলেন তা বন্ধের জন্যে এবং অ্যাকশানে যেতে আমি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছি। নদীতে বর্তমানে যে ড্রেজিং করা হচ্ছে তা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী করা হচ্ছে না। ড্রেজিং বলতে যা বুঝায় সেভাবে করা হচ্ছে না। ড্রেজিং প্রতিষ্ঠানকে যেসব মৌজায় ড্রেজিং করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, সেসব মৌজার অনেকগুলোই ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অতএব এখন যেসব ড্রেজিং চলছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব অবৈধ ড্রেজিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে চাঁদপুরের প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি। অবৈধ সব ড্রেজার এমনকি বালুবাহী বাল্কহেড আটক করারও নির্দেশ দিয়েছি। কারণ, আদালত এবং কর্তৃপক্ষ নদীর নাব্যতা রক্ষার্থে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ডুবোচর অপসারণের অনুমতি ও আদেশ দিয়েছে। বালু বিক্রি করতে বলে নি। তাই অধৈবভাবে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি বালু বিক্রিও অবৈধ।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সভার রেজুলেশন আজকে পেয়েছি। আমরা বসবো। বসে রেজুলেশন অনুযায়ী করণীয় নির্ধারণ করবো। এরপর আমরা কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যা যা করণীয় তা-ই করবো।

যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে এবং নিয়ম মেনেই নদীতে ড্রেজিং করা হচ্ছে : সেলিম খান

এদিকে গত সোমবার নদী রক্ষা কমিশনের সভার সূত্র ধরে কথা হয় মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোঃ সেলিম খানের সাথে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি যে নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন তার বৈধতা কী এবং কোন্ সময় থেকে তিনি বালু উত্তোলনের কাজটি করছেন। এর জবাবে সেলিম খান বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, আমার প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেলিম এন্ট্রারপ্রাইজ ২০১৯ সাল থেকে চাঁদপুর সদর ও হাইমচর এলাকায় মেঘনা নদীতে ড্রেজিং করছে। বিআইডব্লিউটিএ হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে করে যে এরিয়া নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে এরিয়াতেই আমার প্রতিষ্ঠান ড্রেজিং করছে। আমিও চাই নদীতে কোনো ধরনের অবৈধ ড্রেজিং না চলুক। অবৈধভাবে এবং নিয়ম না মেনে ড্রেজিং কার্যক্রম চললে তা বন্ধ করতে আমি প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

সেলিম খান জানান, ১৬/৯/২০১৫ তারিখে ৮৪/(২) নং স্মারকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক নূরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আবেদন সচিব ভূমি মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়। সে আবেদনের বিষয়বস্তু ছিলো-চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলাধীন মেঘনা নদীর নাব্যতা রক্ষার্থে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ডুবোচর অপসারণের অনুমতি প্রসঙ্গে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে অফিসিয়াল কার্যক্রম চলতে থাকে। এরই প্রেক্ষিতে ৩০/১০/২০১৬ তারিখে ১৩৪৯/১/৪ নং স্মারকে তৎকালীন জেলা প্রশাসক চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলাধীন মেঘনা নদীর নাব্যতা রক্ষাকল্পে মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজকে ড্রেজিং কার্যক্রম পরি চালনার জন্যে বিআইডব্লিউটিএকে অনুমতি প্রদানের অনুরোধপত্র দেন। জেলা প্রশাসকের এ পত্রে চাঁদপুর সদর ও হাইমচরের মৌজাও উল্লেখ করা হয় বলে সেলিম খান জানান। যে মৌজায় ড্রেজিং কার্যক্রম চলবে। মৌজাগুলো হলো- হাইমচর উপজেলাধীন চরশোলাদী, পশ্চিম চরকৃষ্ণপুর, চরজহিরউদ্দিন, নীলকমল, মনিপুর, কুতুবপুর, বাজাপ্তি, গাজীপুর, চরভৈরবী, মিয়ারচর, চরফখরদিয়া এবং চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন রাজরাজেশ্বর, নীলারচর, ইব্রাহিমপুর, জাফরাবাদ, সফরমালী, চালতাতলী, গুনানন্দী, গোরাপিয়া, ইন্দুলী ও সাখুয়া মৌজা। এসব মৌজা থেকে বিআইডব্লিউটিএ'র হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের মাধ্যমে মেঘনা নদীর তলদেশ থেকে ডুবোচর অপসারণের অনুমতি প্রদানের অনুরোধ জানান তৎকালীন জেলা প্রশাসক। এরপর দীর্ঘ সময় নিয়ে চিঠি চালাচালি এবং নানা জরিপের পর ২০/৩/২০১৯ তারিখে ৩৪১নং স্মারকে তৎকালীন জেলা প্রশাসক উপ-পরিচালক বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরকে চিঠি দেন। সে চিঠিতে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রীট পিটিশন (নং৭৫৪৫/২০১৫)-এর ১৪/০২/২০১৮ তারিখের আদেশ অনুযায়ী মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজকে উল্লেখিত মৌজা থেকে ৩০ কোটি ৮৪ লাখ ১০ হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উপ-পরিচালক বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরকে অনুরোধ জানান। এই চিঠির আলোকে ৩/৪/২০১৯ তারিখে ৪০৬নং স্মারকে উপ-পরিচালক বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুর মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজকে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আদেশ প্রদান করেন এবং একই তারিখে একই স্মারকের চিঠিতে বিআইডব্লিউটিএ মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজকে ড্রেজিংয়ের জন্যে নির্ধারিত মৌজার দখল বুঝিয়ে দেন। এরপর তার প্রতিষ্ঠান ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করে বলে জানান সেলিম খান।

সেলিম খান আরো জানান, বিগত ৪/১০/২০২১ তারিখে বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) ৭৬৭নং স্মারকে হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করে জেলা প্রশাসক চাঁদপুরকে প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৩০ কোটি ৮৪ লক্ষ ১০ হাজার ঘনফুটের মধ্যে বর্তমানে ২৬ কোটি ৯১ লক্ষ ঘনফুট (প্রায়) বালু জমা আছে বিধায় মহামান্য হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী অবশিষ্ট মাটি/বালু উত্তোলন করতে পারবে। এছাড়া নদীর তলদেশের প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য প্রতি বছর অন্তরে আবার হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ করা প্রয়োজন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সেলিম খান জানান, প্রতি বছর বিআইডব্লিউটিএর হাইড্রোগ্রাফিক জরিপের ফি দেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ রিপোর্ট দেয়। সে রিপোর্ট এবং হাইকোর্টের আদেশের আলোকে নিয়ম মেনে আমার প্রতিষ্ঠানের ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে মাঝখানে করোনার কারণে দীর্ঘদিন ড্রেজিং কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

সেলিম খান বলেন, নদীতে অবৈধ ড্রেজিং যদি চলে তাহলে তা বন্ধ করতে আমি প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। বিআইডব্লিউটিএ’র অনুমোদন এবং মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের বাইরে গিয়ে যে কেউ অবৈধ কাজ করুক তার বিরুদ্ধে প্রশাসন যেনো অ্যাকশনে যায়। ‘হাইকোর্ট তো বালু উত্তোলনের আদেশ দিয়েছে, বিক্রির কথা তো বলে নি।’ এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিম খান বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট তো বালু বিক্রি করতে নিষেধও করেন নি। তাছাড়া এতো বিপুল পরিমাণ বালু আমি রাখবই বা কোথায়?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়