মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:৪৩

আটকে জনমনে স্বস্তি, পুলিশ নিশ্চিন্ত

অনলাইন ডেস্ক

ফরিদগঞ্জে সিটি গ্রুপের এক বিক্রয় প্রতিনিধিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় পুলিশের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো। তারা ঘটনার পর থেকে অদ্যাবধি দিনরাত ঘটনার তদন্ত, অপরাধী শনাক্ত এবং তাদের আটক করতে কাজ করেছে। পুলিশ ঘটনার কারণ এবং অপরাধীদের শনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছে । কিন্তু তাকে আটক করতে পারেনি। অবশেষে র‌্যাব-১১ তাকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার সাইনবোর্ড থেকে আটক করে। এদিকে রবিন ডাকাত আটকের ঘটনায় তিন উপজেলার সীমানাবর্তী এলাকার মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে তাদের দাবি, রবিন ডাকাত যেনো সহজে ছাড়া না পায়। একই সাথে পুলিশও কিছুটা নিশ্চিন্ত।

জানা গেছে, ২০২৪-এর ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে উপজেলার রূপসা উত্তর ও রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ ও রায়পুর উপজেলার সীমানাবর্তী এলাকাগুলো অপরাধীদের জন্যে নিরাপদ জায়গায় পরিণত হয়। সেই সময়ে রাত্রিকালীন পুলিশের পেট্রোল ডিউটি সীমিত থাকার সুযোগে ছিনতাইকারী ও ডাকাতরা অহরহ অপরাধ ঘটায়। পরবর্তীতে পুলিশ ক্রমশ তার পেট্রোল ডিউটি পর্যায়ক্রমে বাড়ানো শুরু করলে অপরাধ প্রবণতা কিছু কমে আসলেও কিছু চিহ্নিত অপরাধীদের অপরাধ প্রবণতা কমেনি। এর সাথে যুক্ত হয় মাদকের ভয়াবহতা। ফলে এসব এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় প্রতিদিনই ঘটেছে চুরিসহ বিভিন্ন ঘটনা। সর্বশেষ বিক্রয় প্রতিনিধি রুহুল আমিন খুনের ঘটনার সাথে রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলার শীর্ষ অপরাধী রবিন ডাকাতের সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এসেছে। র‌্যাবের হাতে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করে।

রবিনের বিষয়ে জানা গেছে, রবিন লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার চান্দিরগাঁও গ্রামের হাজী শামসুন নুর পটোয়ারীর ছেলে। তার বিরুদ্ধে সর্বশেষ হত্যা মামলাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে সবক'টিই ডাকাতি ও দুস্যতার। এর মধ্যে ফরিদগঞ্জ থানার দুটি এবং বাকি ১৩টি মামলা লক্ষ্মীপুর জেলার বিভিন্ন থানার।

মামলাগুলো হলো :

১। লক্ষীপুরের রামগঞ্জ থানার এফআইআর নং-২২/১৬৪, তারিখ-২৭ জুলাই, ২০২১, জি আর নং, তারিখ-২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, সময়-১৫:১০ ঘটিকা, ধারা-৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড-১৮৬০; মামলায় তদন্তে সন্দিগ্ধ চার্জশীট : ৭৪, এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

২। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার এফআইআর নং-৩/১৬৯, তারিখ-০১ জুন, ২০২১; সময়- ১৪.২০ ঘটিকার সময়। ধারা-৩৪১/৩৯৪ পেনাল কোড-১৮৬০; মামলায় তদন্তে সন্দিগ্ধ চার্জশীট-৩৪৮; এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

৩। লক্ষীপুরের রামগঞ্জ থানার এফআইআর নং-১৩, তারিখ-২০ জানুয়ারি, ২০১৮, জি আর নং-১৩, তারিখ-২০ জানুয়ারি, ২০১৮, সময়- ০০.০৫ ঘটিকার সময়, ধারা-৩৯৪ পেনাল কোড-১৮৬০; এজাহারে অভিযুক্ত।

৪। লক্ষীপুরের রামগঞ্জ থানার এফআইআর নং-০৫, তারিখ-০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, জি আর নং-২৭/২০১৫, তারিখ-০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ধারা-৩৯৯/৪০২ পেনাল কোড-১৮৬০; এজাহারে অভিযুক্ত।

৫। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানার এফআইআর নং-৪, তারিখ-০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, জি আর নং-২৩/২০১৫, তারিখ-০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ধারা- ৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড-১৮৬০; এজাহারে অভিযুক্ত।

৬। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার এফআইআর নং-৬, তারিখ-০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, জি আর নং-২৮/২০১৫, তারিখ-০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, ধারা-১৯(১) ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইন; এজাহারে অভিযুক্ত।

৭। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার এফআইআর নং-২২, তারিখ-১৯ এপ্রিল, ২০১৪, জি আর নং-১১৬, তারিখ-১৯ এপ্রিল, ২০১৪, ধারা-৪, ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্য আইন; এজাহারে অভিযুক্ত।

৮। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার এফআইআর নং-১০, তারিখ-০৫ এপ্রিল ২০১৪, জি আর নং-১০০, তারিখ-০৪ এপ্রিল, ২০১৪, ধারা-২৯৫/৪৩৬ পেনাল কোড-১৮৬০; তদন্তে অভিযুক্ত (সি এস)।

৯। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার এফআইআর নং-৪, তারিখ-০৬ জানুয়ারি ২০১৪, জি আর নং-৪, তারিখ-০৬ জানুয়ারি ২০১৪, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০; তদন্তে অভিযুক্ত (সি এস)।

১০। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার এফআইআর নং-৫, তারিখ-০৬ জানুয়ারি ২০১৪, জি আর নং-৫, তারিখ-০৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ধারা-১৫(৩) ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন, তৎসহ ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৪৪৮/৩০৩/৩৫৩/৩০৭/৪৩৬/৩৭৯/৪২৭ পেনাল কোড-১৮৬০; এজাহারে অভিযুক্ত।

১১। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার এফআইআর নং-০৭, তারিখ-১২ মে, ২০১৩; জি আর নং-৭২/১৩, তারিখ-১২ মে ২০১৩; সময়-১৯:০৫ ঘটিকার সময়। ধারা- ২৯৫/৪৩৬ পেনাল কোড-১৮৬০, তদন্তে অভিযুক্ত (সি এস)।

১২। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানার এফআইআর নং-১৫, তারিখ-১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; জি আর নং-৪৬, তারিখ-১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫; সময়- ০০.১০ ঘটিকা ধারা- ১৯অ/১৯(ভ) ঞযব অৎসং অপঃ, ১৮৭৮, এজাহারে অভিযুক্ত চার্জশীট-৮৭, এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

১৩। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার এফআইআর নং-৫, তারিখ-০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫; জি আর নং-২১, তারিখ-০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫; সময়- ১০:৪৫ ঘটিকার সময়, ধারা-১৯অ/১৯(ভ) ঞযব অৎসং অপঃ, ১৮৭৮, এজাহারে অভিযুক্ত চার্জশীট : ৪৩, এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

১৪। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার এফআইআর নং-৬, তারিখ-০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, জি আর নং-২২, তারিখ-০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, সময়- ১০:৫৫ ঘটিকার সময়। ধারা- ৩২৩/৩০৭/৫০৬(২)/৩৪ ঞযব চবহধষ ঈড়ফব, ১৮৬০; এজাহারে অভিযুক্ত। চার্জশীট : ৪৬, এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।

১৫। সর্বশেষ গত ১১ নভেম্বর বিক্রয় প্রতিনিধি রুহুল আমিন হত্যার ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলা।

জানা গেছে, প্রায় এক মাস পূর্বে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ-রায়পুর সড়কের নারকেলতলা এলাকায় রাতের বেলা এক সনাতন ধর্মাবলম্বী পুরোহিত একটি মৃতদেহের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ করে যাওয়ার সময় অস্ত্রের মুখে ছিনতাইয়ের শিকার হয়। পরদিন ফরিদগঞ্জ থানায় ওই পুরোহিত অভিযোগ করতে আসলে তাদের সাথে পুলিশ কথা বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়, এই ছিনতাইকারীদের একজন রবিন ও আরেকজন পলাশ। এই ঘটনার পর থেকে পুলিশ রবিন ও পলাশকে আটকের চেষ্টা করে। কিন্তু পারেন নি। যদিও পলাশ কিছুদিন পুর্বে মাদকসহ আটক হয়েছে।

এদিকে খুনের ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে রাতের বেলা চলাফেরার ক্ষেত্রে লোকজন অনেকটা সতর্ক।

স্থানীয় সূত্র জানায়, রবিন ডাকাতের কাছে ফরিদগঞ্জের এই এলাকাগুলো এবং রায়পুর ও রামগঞ্জের এলাকাগুলো ডালভাতের মতো। সে এসে অপরাধ সংঘটিত করে দ্রুত চলে যায়। সর্বশেষ রূপসা উত্তর ইউনিয়নের রুস্তমপুর এলাকার যে স্থানে বিক্রয় প্রতিনিধি রুহুল আমিন খুন হন, তার কয়েক কিলোমিটার দূরেই রামগঞ্জের সীমানা রয়েছে। ওই ঘটনার সময়ে সে দ্রুত পালিয়ে যেতে সমর্থ হয়। রবিন গত কয়েক মাসে ফরিদগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও রায়পুর ও রামগঞ্জে বেশ কিছু অপরাধ সংঘটিত করেছে। চতুর রবিন পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে সর্বদা মোবাইল ফোন ও সিম পরিবর্তন করে। ফলে প্রযুক্তির মাধ্যমে তাকে আটক করতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১১ নভেম্বর ২০২৫ (মঙ্গলবার) ফরিদগঞ্জ উপজেলার রুপসা উত্তর ইউনিয়নের রুস্তমপুর এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে রুহুল আমিন (৩৭) নামে সিটি গ্রুপের বেঙ্গল টি’র এক এসআর নিহত হন। নিহত রুহুল আমিনের বাড়ি ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার ৪ নং ওয়ার্ডের পূর্ব বড়ালি গ্রামে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়