প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:১৭
মূলপাড়ায় সম্পত্তি দখল ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

পৈত্রিক সম্পত্তির ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে তিন ভাই ও তিন বোনের হিস্যার চেয়েও এক ভাই বেশি বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন আবার জোরপূর্বক অন্য ভাইদের আরো সম্পত্তি দখলে নিতে মিথ্যা মামলা দিয়ে অসহায় ভাই ও ভাতিজাদের হয়রানি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এমনই এক ঘটনা ঘটেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ২ নং বালিথুবা ইউনিয়নের মূলপাড়া গ্রামের তফাদার বাড়িতে।
অভিযোগ ও তথ্যসূত্রে জানা যায়, মূলপাড়া তফাদার বাড়ির মৃত আব্দুল লতিফ তফাদার তিন ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে অনেক আগেই মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি তিন মেয়ে ও তিন ছেলে এবং তার স্ত্রীর জন্যে ২৮৫ শতাংশ সম্পত্তি রেখে যান। তার তিন ছেলে এবং মেয়েরা হলেন শফিকুর রহমান, নুরুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, খাতিজা বেগম, সাজুদা বেগম ও মাকসুদা বেগম। তিন মেয়ের ওয়ারিশ সম্পত্তি ও তিন বোনকে তিন ভাইয়ের ওপর দিয়ে দেওয়া হয়। বন্টন সূত্রে আবদুল লতিফ তফাদারের ছোট মেয়ে মাকসুদা বেগম ও তার সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় নুরুল ইসলামের উপর। লতিফ তফাদারের মৃত্যুর পর তার সকল সম্পত্তি তিন ছেলে ও তিন মেয়ে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়ে যান। পরে আব্দুল লতিফ তফাদারের দ্বিতীয় পুত্র নুরুল ইসলাম তার সংসার চালানোর জন্যে এবং তার নিজস্ব চাহিদা পূরণ করার জন্যে তার ভাগের সকল সম্পত্তি ও তার ভাগে পড়া বোন মাকসুদার সম্পত্তি তার নামে দলিল করে সে সম্পত্তিও তিনি বিক্রি করে দেন। সব সম্পত্তি বিক্রি করায় তার বসবাসের জন্যে তথা বসতঘরের জন্যেও কোনো সম্পত্তি অবশিষ্ট রাখেন নি। কিন্তু বর্তমানে তিনি তার পেশী শক্তির বলে অন্য ভাইদের সম্পত্তি জোর করে দখলে নেন এবং সেখানে আধাপাকা ঘর করে দীর্ঘদিন দখল করে রাখছেন। বর্তমানে আবার নতুন করে অন্য সম্পত্তি দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা করছেন। এসব নিয়ে ইতঃপূর্বে স্থানীয় মান্যগণ্যদের নিয়ে একাধিকবার সালিস হলেও তিনি কোনো কিছুতেই কর্ণপাত না করে জবরদস্তি করে যাচ্ছেন। আর অন্য ভাই ও ভাতিজাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছেন। অন্যান্য ভাই ও ভাতিজারা ওই সম্পত্তি ছেড়ে দিতে বললে তিনি ওই সম্পত্তি তার দাবি করে উল্টো দা, চেনি, সাবল নিয়ে তাদের মারতে যান এবং বিভিন্নভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছেন।
এ বিষয় নিয়ে আব্দুল লতিফ তফাদারের ছোট ছেলে তাজুল ইসলাম বলেন, হিস্যা অনুযায়ী আমার ভাই নুরুল ইসলাম ৬৮ শতাংশ এবং বোনের ২৫ শতাংশ সহ মোট ৯৩ শতাংশ সম্পত্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি এ পর্যন্ত ৯৯ শতাংশ সম্পত্তি বিক্রি করেছেন। তারপরেও তিনি আমাদের সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে নেন এবং নতুন করে আবার দখল করার পাঁয়তারা করছেন। আমরা কোনোরকম বাধা প্রদান করতে গেলে তিনি বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা করে আমাদের হয়রানি করে আসছেন।
নুরুল ইসলামের ভাই শফিকুর রহমানের ছেলে আলাউদ্দিন বলেন, আমার চাচা নুরুল ইসলাম তার পারিবারিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে সকল সম্পত্তি বিক্রি করে দেন। বর্তমানে তিনি আমাদের সম্পত্তির ওপর ঘর করে জোরপূর্বক দখল করে আছেন এবং আরো সম্পত্তি দখল করার পাঁয়তারা করছেন। আমাদের সম্পত্তির ওপর দখল করতে গেলে আমরা তাকে ডাক-দোহাই দিলে তিনি উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা করে হয়রানি করছেন।
এ বিষয়ের সত্যতা জানতে এলাকার মানুষজনের সাথে কথা বলতে গেলে তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে বলেন, নুরুল ইসলাম তার নিজের এবং ওয়ারিশ সূত্রে তার বোনের সহ সব সম্পত্তি বিক্রি করে ফেলেছেন। এখন তিনি অন্য ভাইদের সম্পত্তি দখল করে আছেন। নতুন করে আবার দখল করার চেষ্টা করছেন। এসব নিয়ে তার ভাই-ভাতিজারা বাধা প্রদান করলে হিতে বিপরীত হয়ে যায়। উল্টো নুরুল ইসলাম তার ভাই-ভাতিজাদের মারধর করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন। তারা বলেন, গত কয়েক মাস আগে নুরুল ইসলাম তার ভাই-ভাতিজাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে ব্যাপক হয়রানি করে আসছেন। যেটুকু জেনেছি, ঐ মামলায় যা উল্লেখ করা হয়েছে তার কিছুই ওই বাড়িতে হয় না। এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমরা তাদের পারিবারিক সমস্যার অবসান চাই।
বিষয়টি নিয়ে নুরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার ভাই-ভাতিজারা আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।তিনি বলেন, তিনি বাড়িতে দীর্ঘদিন ছিলেন না। তার অনুপস্থিতিতে তার ভাই এবং ভাতিজারা তার অনেক সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছে। ইতঃপূর্বে তার ভাই এবং ভাতিজারা তার বিরুদ্ধে ছয়টি বিভিন্ন ধরনের মামলা দায়ের করেন। সেই মামলা গুলোর চারটিতেই তার পক্ষে রায় হয়েছে এবং দুটি মামলা চলমান রয়েছে। তিনি সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে এর সুষ্ঠু সমাধান চান।








