রবিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ২২:৩২

ফরিদগঞ্জে জুয়েলারি দোকানে চুরির ঘটনা বিশ্লেষণ

চোরের দল চোখে আঙ্গুল দিয়ে যা দেখিয়ে গেলো

প্রবীর চক্রবর্তী।।
চোরের দল চোখে আঙ্গুল দিয়ে যা দেখিয়ে গেলো
ফাইল ছবি

ফরিদগঞ্জ বাজারের থানা মোড়ের ‘মা জুয়েলার্সে’ চুরির ঘটনায় দু চোর আটক ও চুরি হওয়া প্রায় ৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং স্বর্ণালঙ্কার বিক্রির টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। আটককৃত দু চোর হলো : চাঁদপুর থেকে আটক খলিল মৃধা (৪০) ও আইপি টিভি ‘রাজধানী টেলিভিশনে'র খুলনার ব্যুরো প্রধান সাবেক জনপ্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগ নেতা কামাল পারভেজ মিলন (৪৬)। এটা পুরানো খবর হলেও চোরেরা ফরিদগঞ্জে চুরি করতে এসে ধরা পড়ার পর কিছু জিনিস চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছে-- এমনটাই জানান ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহ আলম।

গত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর ২০২৫) রাতে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহ আলম সাংবাদিকদের সাথে মতিবিনিময়কালে মা জুয়েলার্সে চুরির ঘটনা, চোর আটক এবং এর পরবর্তীতে চোরদের সাথে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের সময়ের কিছু তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কামাল পারভেজ মিলন নামে যে চোরকে আমরা ধরতে সমর্থ হয়েছি, সে খুবই দুর্ধর্ষ। তাকে আটকের পর তার সাথে দীর্ঘ সময় আমরা কথা বলেছি। তার কথার সাথে মিলিয়ে দেখতে আমরা বিভিন্ন সময়ে জুয়েলারি দোকানের মালিক ও বাজারে পাহারাদারদের মুখোমুখি করিয়েছি। তাদের সাথে কথা বলে কিছু জিনিস উপলব্ধি করেছি, তা শেয়ার করলে এবং বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে বাজারগুলোতে চুরি নির্মূল করার সম্ভব। তিনি বলেন, চোরদের কথা অনুযায়ী, তারা চুরি করার উদ্দেশ্যে চাঁদপুরে অবস্থানকালে প্রায় প্রতিটি উপজেলা সদর ঘুরে ঘুরে দেখেছে। প্রতিটি বাজারের স্বর্ণের দোকান ছিলো তাদের টার্গেট। একমাত্র ফরিদগঞ্জ ছাড়া আর কোথাও চুরি করার সাহস পায়নি তারা। কারণ, জুয়েলারি দোকানগুলোতে মজবুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বাজারের পাহারাদারদের কঠোর নজরদারি থাকে। অপরদিকে বিপরীত চিত্র ছিলো ফরিদগঞ্জ বাজারের জুয়েলারি দোকানগুলোর। নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্য উপজেলার তুলনায় দুর্বল ছিলো। তাছাড়া পাহারাদার ছিলো নামকাওয়াস্তে।

ওসি জানান, কামাল পারভেজ মিলন নামে আটক চোরের সাথে কথা বলার পর আমার কাছে মনে হয়েছে, এ চুরির ঘটনা আমাদেরকে অনেক কিছু শিক্ষা দিয়ে গেছে। আমাদের উপজেলার বাসিন্দাদের আরো সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আগন্তুক কাউকে দেখলে তার অবস্থান সম্পর্কে জানাটা প্রয়োজন। এটা বোধহয় তারা ভুলেই গেছেন। চুরির পূর্বে রেকি করার জন্যে দীর্ঘ সময় চায়ের দোকানে বসে থাকলেও দোকানদারও তাদেরকে কে বা কারা বা কেনো তারা এতক্ষণ বসে আছেন, তা একটি বারের জন্যেও জিজ্ঞাসা করেন নি। বিভিন্ন বাজারে জুয়েলারি দোকানে নানা ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সার্টারের বাইরে কেচি গেইট থাকলেও ফরিদগঞ্জের জুয়েলারি দোকানগুলোর অধিকাংশতেই তা নেই। এমনকি বাজারের বড়ো বড়ো বিপণী বিতানগুলোতেও নেই এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যা আমাদের ঢেলে সাজানো উচিত। বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে আলোর ব্যবস্থা রাখছেন না। ফলে অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় সুযোগ নিচ্ছেন অপরাধীরা। মা জুয়েলার্সে চুরির সময়ে চোরেরা এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে বলে তারা স্বীকার করেছে।

বাজারের রাত্রিকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্যে রাত্রিকালীন পাহারার ব্যবস্থা করা হলেও ফরিদগঞ্জ বাজারের অবস্থা তথৈবচ। রাতে পাহারাদাররা একস্থানে বসে আড্ডা দেয়, রাত গভীর হলে তারা গান শুনে বা ওয়াজ শুনে সময় কাটায়। সামনে দিয়ে কেউ হেঁটে গেলেও জিজ্ঞাসা করেন না। এমনটা জানিয়ে ওই চোররা জানায়, আমরা পাহারাদারদের এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে জুয়েলারি দোকানের সিন্দুক ভেঙ্গেছি। চুরির সময়ে পাহারাদাররা যখন মুঠোফোনে গান বা ওয়াজ জাতীয় কিছু বাজিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতো, তখন আমরা তাদের ওই শব্দ শুনেই কাজ শুরু ও বন্ধ করতাম।

ওসি বলেন, ফরিদগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষিত রাখতে নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো বাড়াতে হবে। সিসি ক্যামেরা, মজবুত সার্টার, ভালো তালা, কেচি গেইট লাগানো নিশ্চিত করতে হবে; বিশেষ করে জুয়েলারি দোকানসহ এই জাতীয় দোকানগুলোতে। পাহারাদার আরো বাড়াতে হবে। ভালো পাহারাদার নিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদেরকে অবশ্যই বাজার কমিটিকে সহযোগিতা করতে হবে। কারণ ব্যবসায়ীদের এসব অসহযোগিতার কারণেই এমন দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া আমরা থানা পুলিশও এই চুরির পর নিজেরাও নড়েচড়ে বসেছি। কীভাবে আরো টহল বাড়ানো যায়, নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা সম্ভব তা নিয়ে কাজ করছি। শীঘ্রই আমরা বাজারের জুয়েলারি মালিকদের সাথে, বাজার কমিটির সাথে এবং পৌর কর্তৃপক্ষের সাথেও বসবো। গণমাধ্যমকর্মীরা যদি তাদের পর্যবেক্ষণগুলো তুলে ধরেন, তবে সকলেরই কাজ করতে সুবিধা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়