প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৩, ২৩:২০
চাঁদপুর নৌথানার ওসির কৌশলগত কঠোরতায়
ভয়াবহ হামলা থেকে রক্ষা পেলো ফারহান-৭ লঞ্চের যাত্রীরা
চাঁদপুর নৌপুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের কঠোর কঠোরতায় এবং কৌশলগত কারণে বরিশাল ঝালকাঠি ভায়া চাঁদপুর টু ঢাকাগামী যাত্রীবাহী ফারহান-৭ লঞ্চের হাজারো যাত্রী সন্ত্রাসী হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
|আরো খবর
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, বরিশাল -ঝালকাঠি ভায়া চাঁদপুর টু ঢাকাগামী যাত্রীবাহী এম ভি ফারহান -৭ লঞ্চটির যাত্রী হিসেবে চাঁদপুর শহরের ষোলঘর এলাকার রাসেল মোল্লা (৪৫) পিতা- মকবুল হোসেন মোল্লা ও মনির গাজী (৩০) পিতা- হাসেম গাজী পরিবারের সদস্যরাসহ এ লঞ্চটির চাঁদপুর ঘাটের যাত্রী হন। একই ভাবে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার মোঃ হারুন (৫০) পিতা- আফতাব আলী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ঢাকা ঘাটের যাত্রী হন ।
উভয় যাত্রীদের মধ্যে মোঃ হারুন মিয়া পূর্বে লঞ্চে উঠে তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে লঞ্চে কোনো আসন বা সীট না পাওয়ায় লঞ্চটির দ্বিতীয় তলায় ফ্লোরে চাদর বিছানা নিয়ে অবস্থান করেন। কিন্তু চাঁদপুর ঘাটের যাত্রী হিসেবে উঠা রাসেল মোল্লা ও মনির গাজী লঞ্চে উঠে একই ভাবে কোনো আসন বা সীট না পাওয়ায় লঞ্চটির কোথায়ও অবস্থান নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালান। কিন্তু লঞ্চটিতে প্রচুর পরিমাণ যাত্রী থাকায় তিনি দ্বিতীয় তলার ফ্লোরে চাদর বিছানা করার চেষ্টা বা দাঁড়িয়ে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য চেষ্টাকালে হারুন মিয়ার বিছানায় পা পড়ার কারণে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটির পর এক পর্যায়ে হারুন মিয়ার সাথে পরিবারের সদস্যরা চাঁদপুর ঘাটের যাত্রী রাসেল মোল্লা ও মনির গাজীর পরিবার কে এলোপাথাড়ি মারধর করে। এমনকি সাথে থাকা নারী ও শিশুরাও এই হামলা থেকে রেহাই পায়নি।
এ অবস্থায় চাঁদপুর ঘাটের লোকজন আহত হয়ে চাঁদপুরে তাদের আত্মীয় স্বজন কে জানালে স্বজনরা এই ঘটনা শুনে আরো লোকজন নিয়ে ঘাটে ভীড় করতে থাকে।
এক পর্যায়ে আহতের স্বজনদের পক্ষ থেকে কেউ একজন বিষয়টি ফারহান -৭ লঞ্চের চাঁদপুর ঘাটের সুপার ভাইজার শাহআলম মিজি কে ঘটনার বিষয়টি অবহিত করা হলে তিনি মোবাইল ফোনে লঞ্চের স্টাফদের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানিয়ে তা সুষ্ঠু সমাধানের জন্য নির্দেশ দেন। এই নির্দশনা পেয়ে লঞ্চের স্টাফগন আপ্রাণ চেষ্টা করে ও চাঁদপুরের লোকজনের অনীহার কারণে তা সমাধান করতে পারেনি।
এদিকে চাঁদপুরের যাত্রীদের লঞ্চ থেকে একের পর এক মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে ঘাটে শতাধিক লোকজন ভীড় করতে থাকে। এক পর্যায়ে চাঁদপুর ঘাটের সুপার ভাইজার ঘটনাটি আচ করতে পেরে তিনি চাঁদপুরের লোকজন কে সরাসরি বলে দেন, ঘাটে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আপনারা প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেন এবং নৌ পুলিশ কে ঘটনা জানান। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এই কথা শুনার পর চাঁদপুরের লোকদের পক্ষ থেকে কোনো এক স্বজন বিষয়টি নৌ পুলিশ কে জানালে, নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ঘাট সুপার ভাইজার শাহআলম মিজির সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হন এবং ফারহান-৭ ঘাটে ভীড়ার সময়টি জেনে নিয়ে রাত ২ টা থেকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান নিজেসহ নৌ পুলিশের বিশাল ফোর্স এবং চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের একই ফোর্সসহ বড়স্টেশন লঞ্চঘাট ও আশপাশের এলাকায় কঠোর ভাবে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন।
শুধু মাত্র যাত্রী ব্যতীত কাউকে ঘাটে ডুকতে না দিয়ে লঞ্চ যাত্রীদের নিরাপদে উঠা নামার ব্যবস্থা করেন।
রাত ২ টা ৫ মিনিটে লঞ্চটি চাঁদপুর ঘাটে পৌঁছার পর নৌ পুলিশ কৌশলে ঘটনার সাথে জড়িত এবং ভুক্তভোগী উভয়দের লঞ্চ থেকে নামিয়ে এনে উভয়ের সাথে কথা বলে পুরো ঘটনা শুনেন। এক পর্যায়ে উভয় যাত্রীদের স্বজনদের মধ্যস্থতায় এক পর্যায়ে বিষয়টি সমাধান করা হয়।
সমাধানের পর ঢাকাগামী যাত্রীদের ঢাকায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন।
এদিকে এ ঘটনার বিষয় নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, লঞ্চে থাকা চাঁদপুরের যাত্রীদের পক্ষ থেকে এই বিষয় আমাকে ঘটনা বিষয় জানায়। কিন্তু এই বিষয় জানার পূর্ব থেকেই আমার কাছে একটি মেসেজ আসে বরিশালের কোনো একটি লঞ্চে চাঁদপুর ঘাটে নামবে এমন যাত্রীদের সাথে কিছু একটা হয়েছে। এজন্য চাঁদপুরের লোকজন ভীড় করছে।
এমন একটা ঘটনা মোটামুটি আমার কানে আসছে। এই কথা শুনে বিষয়টি কাউকে কিছু না বলে চুপচাপ বসে আছি এবং ভাবছি বাসায় পরে যাবো। আসলে ঘটনাটি সত্য কি, না যাচাই করবো। এমন সময় একজন এসে ঘটনাটি জানান।
ইতিমধ্যে আমি অফিসে বসে সিসি ক্যামেরায় দেখছি প্রতিশোধের নেশায় অনেক লোকজন জড়ো হচ্ছে। আমি বিষয়টি আমার উধ্বতন কতৃপক্ষ কে অবহিত করে সাথে সাথে নৌ পুলিশের পুরো ফোর্স কে তৈরি করে প্রস্তুত করি। এক পর্যায়ে লঞ্চটি ঘাটে ভীড়ার সময় ভালো করে জেনে নেই।
চাঁদপুর সদর মডেল থানা কে অবহিত করে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফোর্স এনে পুরো ঘাট এলাকা নিরাপত্তার বেষ্টনী গড়ে তুলি। এ অবস্থা দেখে এক পর্যায়ে ঘাটে ভীড় করা লোকজন পিছু হটতে শুরু করে।
পরে লঞ্চটি ঘাটে আসলে উভয় কে থানায় নিয়ে আসি। এক পর্যায়ে উভয়ই অনুতপ্ত হয়ে নিজেরাই মীমাংসা হয়ে যায়। পরে ঢাকার যাত্রীদের নিরাপদে পৌঁছার ব্যবস্থা করে ঢাকায় পাঠানো হয়।
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে, ইতিপূর্বে লঞ্চের ভিতর দু'গ্রুপ যাত্রীদের ঘটনায় একজন নিহত হন। এরপর থেকে আমরা সব বিষয় সর্তকতার কাজ করি। যাতে আর কোনো ধরনের কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়।
এদিকে কৌশল অবলম্বন করে নীরবে পুরো ঘটনাটি সমাধান করায় নৌ পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান কে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ জনগণ।