বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ
  •   চাঁদপুর সদরের শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের মান্দারি লোহাগড় গ্রামে দুটি পুকুরে বিষ দিয়ে ১৫ লাখ টাকার মাছ নিধন
  •   গৃহবধূ আসমার খুনিদের বিচারের দাবিতে ফরিদগঞ্জে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন
  •   কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ
  •   হাজীগঞ্জের সন্তান অতিরিক্ত ডিআইজি জোবায়েদুর রহমানের ইন্তেকাল

প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:৪৪

শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী হত্যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল

ডিশ মালিক ও কর্মচারী উপর্যুপরি ধর্ষণের পর হত্যা ॥ ২ আসামীর ১ জন জেলহাজতে

গোলাম মোস্তফা
শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী হত্যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল
শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী পাশে ঘাতক জামাল হোসেন ও আনিছুর

চাঁদপুর শহরের ষোলঘরস্থ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী হত্যার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ সংস্থা পিবিআই পুলিশ।

জানা যায়, ২০১৯ সালের ২১ জুলাই বিকেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্টাফ কোয়ার্টারের ৩য় তলা বিল্ডিংয়ের ২য় তলায় একই এলাকার ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। এ ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তে নামে।

এদিকে নিহতের স্বামী অলোক কুমার গোস্বামী বাদী হয়ে ২২ জুলাই চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার নং-৪১, তাং ২২/৭/২০১৯ খ্রিঃ। এর পরই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে চাঁদপুরে পুলিশের সবকটি সংস্থা। এক পর্যায়ে পিবিআই পুলিশ ঘটনা উদ্ঘাটনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ষোলঘর এলাকার ডিশ ব্যবসায়ী জামাল হোসেন (২৮) ও ডিশ কর্মচারী আনিছুর রহমান (৩২)কে আটক করে। আটকের পর হত্যার সাথে জড়িত বলে উভয়ই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় ।

জানা যায়, এ ঘটনায় আটক জামাল হোসেন ও আনিছুর রহমান মাদকাসক্ত। ঘটনার দিন উভয়ই পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিত্যক্ত একটি ভবনে মাদক সেবন করা অবস্থায় শিক্ষিকা জয়ন্তী চক্রবর্তী ধর্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মতে উভয়ই মাদক সেবন শেষে স্টাফ কোয়ার্টারের যে ভবনে জয়ন্তী চক্রবর্তী বসবাস করে ঐ ভবনের ডিশ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

এদিকে জয়ন্তী চক্রবর্তী যে বিল্ডিংয়ে থাকে সে বিল্ডিংটি জরাজীর্ণ হওয়ায় অন্য কেউ বসবাস করতো না। অপরদিকে ওইদিনই নিহত জয়ন্তী চক্রবর্তীর একমাত্র ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বিষয়ে তার স্বামী ঢাকায় যাওয়ায় বাসাটি ছিলো একেবারেই ফাঁকা। ফলে ঘাতকদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিশ সংযোগের বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর জয়ন্তী চক্রবর্তী বাসার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ানো দেখে ঘাতক জামাল ও আনিছুর রহমান পরিকল্পনা মতে ডিশের তাঁরগুলো নাড়াচাড়া করে। এটি দেখে জয়ন্তী চক্রবর্তী বাসায় ডিশ সংযোগ নাই বললে ঘাতক জামাল নিহত জয়ন্তী চক্রবর্তীকে বাসার গেইটের চাবি নীচে ফেলার জন্য বললে, তিনি চাবি দেন।

এরপর উভয়ই গেইট খুলে বাসায় ডুকে। এদিকে ঘাতক জামাল ও আনিছুর বাসায় ডুকার পূর্বে গেইটের তালা লাগিয়ে দেয়।

পরে উভয়ই বাসায় ডুকে জোরপূর্বক জয়ন্তী চক্রবর্তী পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এ ঘটনা শেষে উভয়ই ঘাতক বাসা থেকে বের হয়ে আসার সময় জয়ন্তী চক্রবর্তী এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বললে উভয়ই পুনরায় বাসায় ডুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জয়ন্তী চক্রবর্তীকে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে বিকেলে জয়ন্তী চক্রবর্তীর ছাত্র-ছাত্রীরা বিকেলে পড়তে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় জয়ন্তী চক্রবর্তীর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখলে তাঁদের ডাক চিৎকারে অন্যরা আসলে এ ঘটনার বিষয় চারদিকে জানাজানি হয়। পরে মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে।

এদিকে এ ঘটনার পর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তের দায়িত্ব পান পিবিআই পুলিশ চাঁদপুরের ইন্সপেক্টর কবির আহম্মেদ। তিনি দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রায় ৮ মাস পর ২০২০ সালের ৮ মার্চ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন বা চার্জশিট দাখিল করেন।

এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর কবির আহম্মেদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমরা মুল রহস্য উদ্ঘাটনে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে প্রথমে সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করি। পরবর্তীতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার পরিকল্পনা এবং ঘটনার মুলহোতা এরা দুজন বলে স্বীকার করে। এরপরও আমরা তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাই। সর্বশেষ তদন্তে এ দুজন জড়িত। তদন্ত শেষে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন বা চার্জশিট আদালতে দাখিল করি।

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি শুনেছি মামলার ২নং আসামী আনিছুর রহমান এখন জামিনে রয়েছেন। এদিকে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের প্রত্যাশায় রয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার ও সহকর্মীগণ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়