প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:২৬
বিশ্বজয়ী খুদে বিজ্ঞানী শ্রীমঙ্গলের সন্তান প্রাঞ্চয় তরফদার

বাংলাদেশের ছোট্ট একটি শহর শ্রীমঙ্গল। সবুজের শহর, চা-বাগানের শহর। এখানেই বেড়ে উঠছে এক খুদে বিজ্ঞানী, যে তার মেধা ও অধ্যবসায় দিয়ে ছুঁয়ে ফেলেছে বিশ্বমঞ্চ। নাম তার প্রাঞ্চয় তরফদার। বয়স মাত্র ১২ বছর, পড়াশোনা করছে শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে। কিন্তু তার চিন্তা-ভাবনা ও সৃজনশীলতা তাকে নিয়ে গেছে দেশের সীমানার অনেক দূরে—মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়।
|আরো খবর
বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরে
২১–২৫ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার সেগি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন কম্পিটিশন অ্যান্ড এক্সিবিশন (WICE)-২০২৫। বিশ্বের ৩০টি দেশ থেকে আসা তরুণ বিজ্ঞানীদের ভিড়ে বাংলাদেশের চার কিশোর বিজ্ঞানীর দল অংশ নেয় রোবটিক্স বিভাগে। কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেও তারা নিজেদের সৃজনশীল গবেষণা ও উদ্ভাবনী শক্তির জোরে জিতে নেয় স্বর্ণপদক।
আর এই দলটির অন্যতম মুখ্য ছিলো শ্রীমঙ্গলের প্রাঞ্চয়। তার সাথে অন্যরা হলেন : হাসিন ইসরাক চৌধুরী তাহা, তানভীর রহমান সাদ ও ইশতিয়াক আহমেদ ইয়ামিন।পরিবারেই অনুপ্রেরণা
প্রাঞ্চয়ের বাবা জহর তরফদার, চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ছেলের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি বললেন,
“ছোটবেলা থেকেই প্রাঞ্চয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি প্রবল কৌতূহল ছিলো। খেলনা ভেঙ্গে আবার জোড়া লাগানো, পুরোনো যন্ত্রপাতি নিয়ে পরীক্ষা করা—এসবেই তার আনন্দ। আজ বিশ্বদরবারে সে দেশের সম্মান রেখেছে, এর চেয়ে বড়ো গর্ব আর কিছু হতে পারে না।”
প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে থাকলেও একজন বাবার চোখে প্রাঞ্চয় যেন ভবিষ্যতের বিজ্ঞানী।
মা পুতুল রানী সরকার, মাজডিহি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ছেলের এই অর্জনে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তার ভাষায়—
“প্রাঞ্চয়ের একাগ্রতা, কৌতূহল আর সৃজনশীলতাই তাকে এগিয়ে নিয়েছে। আমরা শুধু তার পাশে থেকেছি।”
বিদ্যালয়ের গর্ব
শ্রীমঙ্গল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অয়ন চৌধুরী বলেন—“প্রাঞ্চয় অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। তার এই অর্জন শুধু বিদ্যালয়ের নয়, সমগ্র বাংলাদেশের গর্ব। এ সাফল্য অন্য শিক্ষার্থীদেরও নতুন স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ করবে।”
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহপাঠীরাও এখন প্রাঞ্চয়ের এই সাফল্যে গর্বে ভরপুর।শ্রীমঙ্গলে আনন্দের বন্যা
২৪ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণার পর খবর শ্রীমঙ্গলে ছড়িয়ে পড়লে খুশির আবহ তৈরি হয় এবং পরিবারের মাঝে তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। স্থানীয় মানুষ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শুভানুধ্যায়ী—সবাই প্রাঞ্চয়কে ঘিরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। যেন গোটা শহরই বলছে, “এ আমাদেরই সন্তান!”
ভবিষ্যতের স্বপ্ন
প্রাঞ্চয়ের স্বপ্ন একদিন রোবটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিশ্বমানের গবেষক হওয়া। দেশকে প্রযুক্তিতে এগিয়ে নেওয়া এবং নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে মানুষের জীবন সহজ করা—এই লক্ষ্য নিয়েই তার পথচলা শুরু।