প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৩৪
দালালের প্রতারণায় রুশ যুদ্ধে প্রাণ হারালেন হুমায়ুন, বন্দি দুলাভাই রহমত
"আমাকে বাঁচাও!" রুশ সেনাঘাঁটিতে বন্দি রহমতের আর্তনাদ!
নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামের হুমায়ুন কবির ও তার দুলাভাই রহমত আলী পরিবারের স্বপ্ন পূরণের আশায় পাড়ি দিয়েছিলেন বিদেশে। তবে সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে নির্মম বাস্তবতায়। প্রতারণার শিকার হয়ে রুশ সেনাবাহিনীর কাছে বিক্রি হয়ে যান তারা। সেখানে বাধ্য করা হয় যুদ্ধে অংশ নিতে। আর সেই যুদ্ধে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় প্রাণ হারান হুমায়ুন কবির (২৮)। অন্যদিকে তার দুলাভাই রহমত আলী (৪০) বন্দি রয়েছেন রুশ সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে।
প্রতারিত হওয়ার গল্প: গত বছরের ২৮ অক্টোবর নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুমায়ুন কবির ও তার দুলাভাই রহমত আলী রাঁধুনী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চাকরির প্রলোভনে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন। ঢাকার ড্রিম হোম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে তাদের ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়। দালালরা প্রতিশ্রুতি দেয়, তারা সেখানে প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকা বেতনে কাজ পাবেন। পরিবারের সদস্যরা চাকরির আশায় ১৮ লাখ টাকা খরচ করে তাদের বিদেশ পাঠান।
প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরবে পাঠানো হয় তাদের। এরপর ট্যুরিস্ট ভিসায় নেওয়া হয় রাশিয়ায়। কিন্তু রাশিয়ায় পৌঁছানোর পরই ভয়ঙ্কর বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় তাদের। দালালরা তাদের রুশ সেনাবাহিনীর কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর বাধ্য করা হয় সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে এবং যুদ্ধের ময়দানে নামতে।
যুদ্ধে পাঠানোর পর মৃত্যু: গত ২০ জানুয়ারি ইমোর মাধ্যমে পরিবারের সঙ্গে শেষবারের মতো যোগাযোগ করেছিলেন হুমায়ুন ও রহমত। তারা জানান, রুশ সেনারা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধে পাঠাচ্ছে। এর ছয় দিন পর, ২৬ জানুয়ারি রহমত আলী ফোন করে জানায়, হুমায়ুন কবির ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় মারা গেছেন।
২৬ জানুয়ারি পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর পৌঁছানোর পর থেকেই শুরু হয় শোকের মাতম। ১ ফেব্রুয়ারি হুমায়ুনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা কারিমন বেগম বারবার ছেলের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানাচ্ছেন। স্ত্রী তারা বেগম কোলের এক বছরের মেয়ে প্রীতিকে নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন।
তারা বেগম বলেন, "ঋণ করে এবং জমিজমা বিক্রি করে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম, এখন সেই ঋণ শোধ করব কিভাবে? আমার স্বামী তো আর ফিরবে না। দালালদের কঠোর শাস্তি চাই।"
প্রতারণার মূলহোতা কারা? হুমায়ুনের বন্ধু মাহমুদ জানান, স্থানীয় দালাল সাখাওয়াত হোসেন এই প্রতারণার মূল সংযোগকারী। সাখাওয়াত বর্তমানে সাইপ্রাসে অবস্থান করছে। তার মাধ্যমেই হুমায়ুন ও রহমত রাশিয়ায় গিয়েছিলেন।
ড্রিম হোম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেড কোম্পানিতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে অফিস বন্ধ পাওয়া যায়। স্থানীয় দালালদের ফোনও বন্ধ রয়েছে।
প্রশাসনের বক্তব্য: সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম জানান, তিনি এ বিষয়ে অবগত নন, তবে দ্রুত খোঁজ নিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবারের দাবি: হুমায়ুনের পরিবারের একমাত্র চাওয়া, তার মরদেহ যেন দেশে ফিরিয়ে আনা হয় এবং প্রতারক দালালদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনা হয়।
এই প্রতারণার চক্র ভাঙতে প্রশাসন এবং সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
ডিসিকে/এমজেডএইচ