প্রকাশ : ০৫ মে ২০২২, ২২:৫৮
যুক্তরাষ্ট্রে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়াল ১০ লাখ
গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা করোনা মহামারিতে যুক্তরাষ্ট্রে এই রোগে মৃত্যু হয়েছে মোট ১০ লাখ ২৩ হাজার ৫১৩ জনের। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ।
|আরো খবর
করোনায় মৃতের এই সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের দশম বৃহত্তম শহর স্যান জোসের জনসংখ্যার সমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে এনবিসির প্রতিবেদনে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বিশ্বের প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনাটিও ঘটেছিল চীনে।
তারপর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে ওই বছরের ১১ মার্চ করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি। তারপর থেকে গত ২৭ মাস ধরে কোভিডে মোট সংক্রমণ ও মৃত্যুর হিসাবে বিশ্বের সব দেশের মধ্যে শীর্ষে আছে এই দেশটি। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, মহামারির সোয়া দু’ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৫৬ হাজার ৪৯০ জন।
২০২০ সালের ২০ জানুয়ারির পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় সংক্রমণ-মৃত্যুর কয়েক দফা উল্লম্ফণ ঘটেছে; তবে সংক্রমণ-মৃত্যুর সবচেয়ে বাড়বাড়ন্ত দেখা গেছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পে সময়।
মার্কিন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, করোনা মহামারি বিষয়ক বিধি জারি ও টিকাদান কর্মসূচির গতি বাড়ানোর ব্যাপারে সাবেক ট্রাম্প প্রশাসনের উদাসীনতাই মূলত দায়ী। ট্রাম্প অবশ্য এই অভিযোগকে পুরোপুরি অস্বীকার করে বলেছেন, তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য এই ‘মনগড়া’ অভিযোগ এনেছেন বিরোধীরা।
তবে ট্রাম্প যাই বলুন, যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনজীবনে ব্যাপক ধাক্কা দিয়েছে এই মহামারি। বহু মানুষ হারিয়েছেন তার একান্ত আপন, প্রিয়জনকে।
তেমনই একজন নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের ওয়াল্ডউইক শহরের বাসিন্দা ডিয়ানা অরডেঞ্জ (৩৫)। তার স্বামী জুয়ান অরডেঞ্জ একটি ইনফরমেশন সিকিউরিটি অফিসের ব্যবস্থাপণা বিভাগে চাকরি করতেন, ২০২০ সালের ২০ এপ্রিল করোনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। মিয়া নামের ৭ বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে এই দম্পতির।
এনবিসিকে তিনি বলেন, ‘যারা (করোনায়) মারা গেছেন, তারা যে কেবল নিজেরাই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন— এমন নয়, বরং তাদের সঙ্গে যারা সম্পর্কিত ছিলেন, সেইসব আত্মীয়-বন্ধু-স্বজনদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে গেছেন। আমাদের চারপাশে লাখ লাখ মানুষ তাদের হৃদয়ে গোপন ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন।’
ডিয়ানা জানান, জুয়ানের মৃত্যুর সংবাদ তাদের মেয়ে মিয়াকে এখনও জানানো হয়নি। সে এখনও জানে, তার বাবা জরুরি কাজে দেশের বাইরে গেছেন।
‘সে (মিয়া) সারাদিন মনমরা হয়ে বসে থাকে, ঘুমুতে চায় না এবং সারাক্ষণ প্রশ্ন করে— তার বাবা কবে আসবে।’
‘আমি নিজে যতদূর সম্ভব ধৈর্য ধরার চেষ্টা করছি। কিন্তু মেয়েকে কীভাবে বোঝাব? অনেক প্রশ্ন তার, যেসবের কোনো উত্তর আমার কাছে নেই,’— এনবিসিকে বলেন ডিয়ানা।