প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫, ০৮:৪৫
দেবদাস কর্মকারের কবিতা
দেবদাস কর্মকারের কবিতা যেটুকু স্বাতন্ত্র্য ছিলো
চারপাশে কখোন কী যেন ঘিরে ধরে
জ্বলে পুড়ে যায় অক্ষর শব্দের পদাবলি
ঠিকঠাক নেই কোনো কিছু, বদলায় পৃথিবীর সব
অথবা আমিই রেখেছি হাত পাকচক্রে বদলের কাঁধে
তোমারও যেটুকু স্বাতন্ত্র্য ছিলো তাও হয়েছে বেচাকেনা
সেই যে ঝকমকে মন হারিয়ে গিয়েছে কবে।মনে হয় সাপের মতো বুকে হেঁটে যায় দিন
জীবনের শেষ রঙে এখোন যেন ধ্রুপদী বৃষ্টি
কুশল সংবাদ কী আছে আর মেঘডাকা ভোরে
ধোঁয়ার কফিনে ঢেকে আছে নদী
নগরী ছেয়েছে বিষে, কঠিন কাঁকর আমাদের বুকের ভেতর
নিশি ডাকাতের ভয়ে কাঁপে আজ চারদিক
তোমার সমুদ্র বিলাসে অযথা প্লাবন যদি আসে
বলো তো কোথা নেই ঠাঁই আজ
যেটুকু স্বাতন্ত্র্য ছিলো তোমার আমার
মিশে গেছে চোখের ওপারে,
সময় গড়িয়ে যায়,
এখোন কী করে তোমাকে দেখাই
অন্তর জুড়ে সেই নীল রঙা বিষ।২৯ মে ২০২৫, ঢাকা, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল।
ছবি : ০১ দহন বেলার গানে
এই নগরীতে লক্ষ কোটি মানুষ
অসংখ্য লোকের ভিড়ে আমিই যেন একা,
জানি না আমার আত্মায় কী অন্য আগুন,
হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে উঠে,
যেখানে সম্মোহন, ক্ষতের চিহ্ন ছুঁয়ে
সেখানেই রক্তপাত।জীবন মুদ্রা যদি ভেসে যায় কিছুই না বলে
কী করে ফেরাই তারে এই স্নায়ুর টানে,
যেন মহা ক্রান্তিকাল তবুও ঘন্টাধ্বনি শুনি
যদি বলি বিষাদ বিলাতে এসেছি কি এখানে !
একটি জীবন খুব কৃষ্ণকায়
অতল অন্ধকারে কেবলই ডানা মেলে উড়ে
কেউ নেই আর, শুধু অনুগত ছায়া পেছনে পেছনে,
লক্ষ লোকের ভিড়ে আমিই বা কে,
যখোন পাল্টে যায় ধ্বজা-জীবন সংগীত
বলি খুব ভাল আছি দহন বেলার সাজে,
সোনার কাঁকনে বাধা সংসারে যেন স্মৃতিভুক আমি
সমস্ত দীনতা মুছে নীল হয়ে জমে থাকা অভিমান,
শ্যামল শস্যের মাঠ থেকে উঠে আসো তুমি
বাকহীন মানচিত্রের মতো এখনও
অপূর্ব শরীর জুড়ে কেমন সূর্যাস্তের ছায়া
কোনো অশ্রু নেই দুঃখ নেই, সুখও নেই
তবু ভালবেসে যেন মিশে আছো নিবিড় ধ্রুপদী শয়নে।২২ মে ২০২৫, ঢাকা, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল
ছবি : ০১
নিরুদ্ধ ফসিলসন্ধ্যা ও বেলুয়া দুটো নদীকেই যেন আমার চাই
প্রথমটি আমার বালক বেলার মুখর ছন্দ
বেলুয়া আমার তারুণ্য অতীতবিন্দু হয়ে থাকে জেগে
জলের ঢেউয়ে কি আনন্দের পথ আছে খোলা!
হৃদয় সঙ্কুচিত হলে গরিমাহীন নীল আকাশ দেখি
নদীর প্রবাহমুখে কী অদ্ভুত চঞ্চল ছায়া ভেসে উঠে।আমাকে বেষ্টন করে যেন ভেসে যায় জলবতী নারী
সকাল সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণে বহুদিন বহুদিন পর
মনে পড়ে ঝুমকোলতা আর পাটিতার ছায়া বোনা তীর
যখোন অসম্ভব বৃত্তের মধ্যে ভেসে উঠে তোমার মুখের রেখা
কতোটা সযত্নে মনে ভাসে অপ্রস্তুত স্মৃতিকণা
বিশ্বাসের ঝলমলে আলোয় তোমার কপালে দেই জলতিলকের ফোঁটা।এই বদলের দিনে মস্তিষ্কের কোষে কোষে যেন ঝিম
কে আছে আর চক্ষুষ্মান, ভেতর বাহির যেন পুড়ে খাক
কারই বা হয় ইচ্ছা দু দুটো চোখ ঢেকে অন্ধ হতে
চারদিকে চণ্ডাল চিহ্ন জেগে উঠে, জমে সময়ের ইতিহাস
আমি যেন নিরুদ্ধ ফসিল
ঝিনুকের সাথে জলের ভেতরে চুপচাপ শুয়ে থাকি
জলবতী নারী আসে কাছে, সন্ধ্যা বেলুয়ার বুকে
জমে থাকা নিভৃত আঁধারে স্বপ্নিল আলোড়নে।১৫ মে ২০২৫, ঢাকা, ১ জ্যৈষ্ঠ্য ১৪৩২, গ্রীষ্মকাল।