|আরো খবর
মালয়েশিয়ার ‘সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণায় স্বস্তির নিঃশ্বাস
মালয়েশিয়ায় অবৈধ অবস্থানে থাকা লক্ষাধিক বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীর জন্য বড় ধরনের স্বস্তির বার্তা দিয়েছে দেশটির সরকার। নতুন ঘোষণায় বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসীরা সামান্য জরিমানা দিয়ে সাধারণ ক্ষমার আওতায় নিজ দেশে ফেরার সুযোগ পাবেন, এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
নতুন সাধারণ ক্ষমার সময়সীমা: মে ২০২৫ - এপ্রিল ২০২৬
শুক্রবার (১৬ মে) স্থানীয় সময় এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল এই ঘোষণা দেন। তিনি জানান, ২০২৫ সালের ১৯ মে থেকে ২০২৬ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালে যারা অনিবন্ধিত অবস্থায় মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন, তারা ৩০০ থেকে ৫০০ রিংগিত জরিমানা দিয়ে নিজ দেশে ফিরতে পারবেন।
এই জরিমানার হার পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় অনেক কম — আগে যেখানে জরিমানার পরিমাণ ছিল ৩,০০০ রিংগিত বা তার বেশি।
বাংলাদেশিদের জন্য বড় স্বস্তি: আর হবে না বিচার
“তারা চাইলে এখন দেশে ফিরতে পারবে। তবে এ সময় তাদের কোনো বিচারের মুখোমুখি করা হবে না।” – সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল
সাইফুদ্দিন আরও জানান, “২০২৩-২০২৪ সালে কলিং ভিসায় বাংলাদেশ থেকে আগত অনেক কর্মী এবং পূর্ববর্তী বছরগুলোতে আসা অভিবাসীরা বিভিন্ন প্রতারণা ও প্রশাসনিক জটিলতায় বৈধতা হারিয়েছে। এসব কর্মীদের মধ্যে বহুজন দালাল ও রিক্রুটিং এজেন্সির ফাঁদে পড়েছেন। তারা এখন চাইলে দেশে ফেরত যেতে পারবেন, এবং এ সময়ে তাদের কোনও বিচার বা আটকাদেশের মুখোমুখি হতে হবে না।”
প্রতারণার ফাঁদে পড়া অভিবাসীদের কান্না
মালয়েশিয়ায় থাকা অসংখ্য বাংলাদেশি অভিবাসী অভিযোগ করেছেন যে,
- তাদের যথাসময়ে ভিসা নবায়ন করানো হয়নি,
- নিয়োগকারী কোম্পানিগুলো প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ দেয়নি,
- এবং কিছু ক্ষেত্রে মানব পাচারের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে দালাল চক্র।
একাধিক বাংলাদেশি কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা বৈধ ভিসা ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু মালয়েশিয়ায় এসে দেখি কোম্পানির অস্তিত্বই নেই বা তারা আমাদের নিয়েইনি।”
প্রবাসীদের বৈধকরণের দাবি ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
বাংলাদেশি অভিবাসীদের একটি বড় অংশ দেশে ফেরার সুযোগের পাশাপাশি বৈধতা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালুর দাবি তুলেছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের একজন উপদেষ্টা ড. আসিফ সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরে যান। সফরে তিনি মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
“অনেকেই দালাল ও কোম্পানির প্রতারণার শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে অবৈধ হয়েছেন। এখন সময় তাদের পাশে দাঁড়ানোর।” – উপদেষ্টা ড. আসিফ
মালয়েশিয়ার সরকার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি “ভবিষ্যতে বিবেচনায় আনা হবে।”
ইমিগ্রেশনের নিয়মিত অভিযান ও ভয়
মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ ইমিগ্রেশন বিভাগ দেশব্যাপী অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। এসব অভিযানে হাজার হাজার বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের কর্মী আটক হয়েছেন।
তবে নতুন ঘোষণার পর এই আতঙ্ক কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
বিশ্লেষকদের মত: মানবিক সিদ্ধান্ত
ঢাকার আন্তর্জাতিক অভিবাসন গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী জানান,
“এই পদক্ষেপটি প্রবাসীদের জন্য অত্যন্ত মানবিক ও সময়োপযোগী। বাংলাদেশের সরকারকেও এখন সক্রিয়ভাবে সমন্বয় করে দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।”
সরকারি প্রস্তুতি দরকার
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালয়েশিয়ার ঘোষণার পর বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এখন থেকেই পরিকল্পনা নেওয়া উচিত।
- প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সমন্বয়,
- হেল্পডেস্ক চালু,
- বিমান ভাড়া সংক্রান্ত সহযোগিতা,
- প্রবাসীদের মানসিক ও সামাজিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা,
- এবং প্রতারণার শিকারদের আইনি সহায়তা।
শেষ কথা
মালয়েশিয়ায় অবৈধ হয়ে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এই ঘোষণাটি এক ধরনের “সাধারণ ক্ষমা” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এতে তারা হয়তো নিজেদের আত্মমর্যাদা রক্ষা করে দেশে ফিরতে পারবেন, এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন পরিকল্পনায় জীবন শুরু করতে পারবেন।
তবে অভিবাসন নীতিমালায় স্বচ্ছতা ও প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতেও একই সমস্যা আবার ফিরে আসবে।
ডিসিকে/এমজেডএইচ