প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫, ০৮:৪০
চাঁদপুরের ভূমি ব্যবস্থাপনা

পৈত্রিক ভূমি অনেকেই চেনে না বা চেনার জন্যে খোঁজ খবর করতেও যায় না। কিন্তু চাঁদপুর জেলার সীমানার মধ্যে কতোটুকু ভূমি আছে তা আমার শুধু নয়, পুরো চাঁদপুরবাসীর জানার আগ্রহ আছে বৈকি! বিষয়টা মাথায় আসলো গেল ২৫, ২৬ ও ২৭ মে ২০২৫ তারিখে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ভূমি মেলা ২০২৫ যখন আয়োজিত হলো। সৌভাগ্যবশত বা কাকতালীয়ভাবে জেলা প্রশাসন ভূমি মেলায় ২৬ মে তারিখের সেমিনারে উপস্থিত থাকতে আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন। সেমিনারে চাঁদপুর শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক মহোদয় ছিলেন প্রধান অতিথি। সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসকের মালিকীয় সকল ভূমির ব্যবস্থাপক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)। অনুষ্ঠানে ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে যে বা যারা জড়িত তাদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সাথে আমিতো ছিলামই।
ভূমি মেলার মূল বিষয়বস্তু বা নিরীহ প্রাণী হিসেবে যতোটুকু বুঝতে পারলাম সেটা হলো, ভূমি উন্নয়ন কর কালেকশন করা এবং এই কালেকশন পদ্ধতি ডিজিটালাইজেশন ব্যবস্থায় প্রবর্তন করা অর্থাৎ ভূমি কর, ভূমি নামজারি সহজীকরণ পদ্ধতি আম জনতাকে জানানোর কৌশল। এক সময় ভূমি কর কালেকশন করা হতো রাজা বাদশা বা নবাবদের নায়েবদের দ্বারা। মানুষ ভূমির বার্ষিক খাজনা না দিলে ভূমি থেকে লাঠিয়াল দ্বারা উচ্ছেদ করতো, চলতো নানা নির্যাতন। পরে মোড়ল বা জোতদার প্রথাও এক সময় চালু ছিলো। জোর যার মুল্লুক তার এমন প্রবচনও ভূমির ক্ষেত্রে জমিদারি প্রথায় প্রচলিত ছিলো। মোটা দাগে বলা যায়, এই ভূমিকর দ্বারাই রাজা বাদশা, নবাব, জমিদারি প্রথা কালের বিবর্তনে বর্তমানে সরকারের বড়ো আয়ের পথ, যা দ্বারা এ দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীবর্গ, উপদেষ্টা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ে গ্রাম পুলিশের বেতন চলে।
ভূমি কর দেয় দেশের মানুষ। রাষ্ট্রপতি থেকে গ্রাম পুলিশ এরা জনগণের ওপর পূর্বের ন্যায় লাঠিয়ালদের মতো না হলেও নিরীহ জনগণকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে নানাভাবে হয়রানির সম্মুখীন করে। এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হয় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ভূমির সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় ভূমি নিয়ে দেশে লাখ লাখ দেওয়ানী মামলা ও ভূমি বিরোধের কারণে লাখ লাখ ফৌজদারি মামলা সৃষ্টি হচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা যদি স্বচ্ছ- সঠিক না হয় তাহলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব তথা ভূমি কর থেকে বঞ্চিত হয় এবং হতেই থাকবে।
সেমিনারে আমার ভূমি কর আদায়ে ডিজিটালাইজেশন বিষয়ে বক্তব্যের সাথে একটা বিষয় আমি উপস্থাপন করেছিলাম যে, চাঁদপুর জেলার সীমানায় কী পরিমাণ ভূমি আছে তা আমাদের জেলাবাসীকে জানানোর ব্যবস্থা করা। সুদক্ষ জেলা প্রশাসক অনেক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিলেও আমার উত্থাপিত প্রস্তাবের বিষয়ে কিছু বলেননি। আমার প্রস্তাবনাটা ছিলো এমন যে, ভূমির মধ্যে জনগণের দখলীয় ভূমি ছাড়াও বহু জাতের ভূমি বিদ্যমান আছে। যেমন- সরকারি খাস ভূমি, অর্পিত ভূমি, অধিগ্রহণকৃত ভূমি, আইডাব্লিউটিএ’র নদী এবং নদী সিকস্তি ভূমি, স্থানীয় সরকারের ভূমি, গণপূর্তের ভূমি, রেলওয়ের ভূমি, সড়ক ও জনপথের ভূমি, মৎস্য বিভাগের ভূমি, শিক্ষা বিভাগের ভূমি, পুলিশ বিভাগের ভূমি, কৃষি বিভাগের ভূমি, চান্দিনী ভিটা, বিচার বিভাগের ভূমিসহ বহু বিভাগের ভূমি আছে।
জেলার সমস্ত ভূমির একটি শুদ্ধ পরিসংখ্যান করে কোন্ বিভাগের কতোটুকু ভূমি, আর উল্লেখিত ভূমি গুলো কী অবস্থায় আছে তা ম্যাপ করে বিভিন্ন জাতের ভূমি ভিন্ন ভিন্ন রং করে চিহ্নিত করলে অনেক ভূমি পাওয়া যাবে, যা বিভিন্ন মানুষ বেআইনি দখল করে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি বড়ো বড়ো অট্টালিকা পর্যন্ত তৈরি করে বসে আছে। আর বেআইনিভাবে দখলকৃত ভূমি জেলা প্রশাসনের ভূমি বিভাগের কর্মরত লোকজন দ্বারা ভূয়া কাগজ তৈরি করে বা কোনো কাগজপত্রই নেই এমন সরকারি বহু ভূমি বেহাত অবস্থায় পাওয়া যাবে। অর্থাৎ সরকারি ভূমি উদ্ধার হওয়া জরুরি। যেটি জেলা প্রশাসনের উপকারে আসতে পারে। আমাদের জানার আগ্রহ ও জনস্বার্থে জেলার সমস্ত ভূমির একটি নকশা করে নানা রংয়ে চিহ্নিত করা জরুরি এবং একেই বলা যেতে পারে সুষ্ঠু ভূমি ব্যবস্থাপনা। এই ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম গ্রহণ করে সফল হলে জেলা প্রশাসন প্রশংসিত হবে। আমার বিশ্বাস, চাঁদপুরের সুদক্ষ জেলা প্রশাসক দ্বারাই এটা সম্ভব।
লেখক : প্রবীণ আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, চাঁদপুর জেলা শাখা।