শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ২০:০৪

এ বছরের নোবেল পুরস্কার

অনলাইন ডেস্ক
এ বছরের নোবেল পুরস্কার

পুরো পৃথিবী লকডাউনে অচল। মানুষ সংবাদমাধ্যমে খুঁজে চলেছে ভ্যাকসিনের খবর। শেষ পর্যন্ত এসেছিল করোনাভাইরাসের টিকা। পুরো পৃথিবীর মানুষ বেঁচেছিল হাঁপ ছেড়ে। আর আমরা দেখেছি, আধুনিক সময়ে মানবস্বাস্থ্যের সবচেয়ে বড় হুমকির মধ্যে ভ্যাকসিনের বিকাশে অভূতপূর্ব অবদান রাখার জন্য নোবেল পুরস্কার পেলেন কাতালিন কারিকো ও ড্রিউ ওয়েইসম্যান। এমআরএনএ বা মেসেঞ্জার আরএনএ-ভিত্তিক ভ্যাকসিন বা টিকা আবিষ্কারের পদ্ধতিতে যুগান্তকারী অবদান রাখায় নোবেল পেয়েছেন তাঁরা।

এমআরএনএ-ভিত্তিক টিকা বা ভ্যাকসিন তৈরি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছিল ৩০ বছর আগে। কারিকো ও ওয়েইসম্যান সেই গবেষণাকে চূড়ান্ত মাত্রা দেন এক অর্থে। আগের গবেষকেরা এমআরএনএ-ভিত্তিক যেসব টিকা আবিষ্কার করেছিলেন, সেগুলোর সীমাবদ্ধতা ছিল। সেই টিকাগুলোতে ব্যবহৃত ইনভিট্রো পদ্ধতিতে প্রতিলিপি করা এমআরএনএর কারণে কোষের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সাড়া দেয়। পাশাপাশি কোষে প্রোটিন উৎপাদন কমিয়ে দেয়।

কিন্তু কারিকো ও ওয়েইসম্যানের ফর্মুলা ব্যবহার করে এমআরএনএ-ভিত্তিক টিকা তৈরি করা হলে তা কোষের ইমিউন সিস্টেমকে কৌশলে এড়িয়ে যায়। ভ্যাকসিন থেকে প্রবেশ করানো এমআরএনএর প্রতি কোষের প্রোটিন ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয়। এ কারণেই মূলত এমআরএনএ-ভিত্তিক টিকার কার্যকারিতা ভাইরাল রোগের বিপরীতে অনেক বেশি।

চলতি বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পিয়েরে অগস্তিনি, জার্মানির ফেরেন্স ক্রাউস ও সুইডেনের অ্যানে হুইলিয়ে। আলোর স্বল্পতম স্পন্দন তৈরি করে অতি সংক্ষিপ্ত মুহূর্তকে বন্দী করার কৌশল নিয়ে গবেষণার স্বীকৃতি হিসেবে তাঁদের নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

১৯২৫ সালের দিকে ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ কোয়ান্টাম বলবিদ্যাসংশ্লিষ্ট নতুন তত্ত্ব আনেন। তার আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, কোনো একটি পরমাণুতে ইলেকট্রনের অবস্থান এবং তার ঘূর্ণন কেবল অনুমান করা যেতে পারে, বাস্তবে সেটি পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু হাইজেনবার্গ তাত্ত্বিকভাবে প্রমাণ করেছিলেন যে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব।

আমরা জানি, কোনো একটি পরমাণুতে ইলেকট্রন সব সময়ই গতিশীল থাকে। কিন্তু ইলেকট্রন এত দ্রুত বিচরণ করে যে বিদ্যমান সময় কাঠামোতে সেটিকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। কিন্তু পিয়েরে অগস্তিনি, ফেরেন্স ক্রাউস ও অ্যানে হুইলিয়ে এমন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যার ফলে আলোর স্পন্দনকে অতিক্ষুদ্র সময়ে, মাত্র ১ অ্যাটোসেকেন্ডের (দশমিকের পর ১৭টি শূন্য দিয়ে তারপর ১ স্থাপন করলে এক সেকেন্ডের যে ভগ্নাংশ হবে, তাকে অ্যাটোসেকেন্ড বলা হয়) জন্য বন্দী করে ফেলা সম্ভব।

সাধারণভাবে একে তুলনা করা যায় হাই-শাটার স্পিড ক্যামেরায় গতিশীল বস্তুর ছবি তোলার সঙ্গে। কম শাটার স্পিড ক্যামেরায় গতিশীল বস্তুর ছবি তোলার চেষ্টা করা হলে সে ছবি ব্লার হয়ে যাবে। কিন্তু হাই-শাটার স্পিডের ক্যামেরার ক্ষেত্রে গতিশীল বস্তুর ছবিও স্থির হিসেবে বন্দী হবে।

১৯৮৭ সালে হুইলিয়ে আবিষ্কার করেন, যখন কোনো লেজার রশ্মি নিষ্ক্রিয় গ্যাসের মধ্য দিয়ে যায়, তখন সেই গ্যাসের পরমাণু আলোর কাছ থেকে কিছু শক্তি শোষণ করে। এটি পরমাণুর ইলেকট্রনকে বাড়তি শক্তি জোগায়, যা পরে আবার সেই পরমাণু থেকে আলো হিসেবে নির্গত হয়।

২০০১ সালে পিয়েরে অগস্তিনি আলোর ধারাবাহিক স্পন্দন বা ফ্ল্যাশ উৎপন্ন করতে সক্ষম হন। পুরো বিষয়টি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে অগস্তিনি দেখতে পান, প্রতিটি স্পন্দন ২৫০ অ্যাটোসেকেন্ড স্থায়ী হয়। একই সময়ে ক্রাউসও অন্য একটি পরীক্ষা চালিয়ে দেখতে পান, আলোর পালস বা স্পন্দনকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব এবং একেকটি পালস ৬৫০ অ্যাটোসেকেন্ড স্থায়ী হয়। এই বিষয়টিই মূলত কোনো একটি পরমাণুর ভেতরে ইলেকট্রনের গতি এবং গতিপথ পর্যবেক্ষণের সুযোগ তৈরি করে দেয়।

এবার কোয়ান্টাম ডট ও ন্যানো ক্রিস্টাল প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদান রাখায় রসায়নশাস্ত্রে নোবেল পেয়েছেন মুঙ্গি জি বাভেন্দি, লুইস ই ব্রুস ও অ্যালেক্সেই একিমভ। তবে তাঁরা একই খাতে পৃথক বিষয়ে অবদান রাখার জন্য যৌথভাবে পুরস্কার পেয়েছেন। কোয়ান্টাম ডট এত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তু যে খালি চোখে দেখা যায় না। একটি কোয়ান্টাম ডটের বৈশিষ্ট্য কেমন হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করে সেটির আয়তন কতটা, তার ওপর। এটি মোটা দাগে টিভি স্ক্রিন, এলইডি বাতি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তবে চিকিৎসাক্ষেত্রে বিভিন্ন টিউমার ও ক্যানসার টিস্যু অপসারণে কোয়ান্টাম ডট ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এখন।

সাধারণ ধর্ম অনুসারে কোনো বস্তুর বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে সেটির গঠন প্রকৃতি ও উপাদানের ওপর। কিন্তু কোনো বস্তু যখন কোয়ান্টাম ডটের আকারে পৌঁছে যায়, তখন তার আকার, তার রং ও বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে। তাত্ত্বিকভাবে বিষয়টি পরিচিত থাকলেও একিমভ সেটিকে বাস্তবে করে দেখিয়েছেন।

সেই ঘটনার কয়েক বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের বেল ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় লুইস ব্রুস একটি দ্রবণে ভাসমান ক্ষুদ্র একটি ক্যাডমিয়াম সালফাইডের ভাসমান কণার ওপর সূর্যের আলো ফেলে রাসায়নিক বিক্রিয়া সংঘটিত করার চেষ্টা চালান। সে সময় তিনি দেখতে পান, পরীক্ষাগারে সূর্যের আলো শোষণের পর ক্যাডমিয়াম সালফাইডের পার্টিকল বা কণা আলোকধর্ম প্রদর্শন করছে। প্রথমে অন্য কিছু ভাবলেও পরে তিনি বুঝতে পারেন, কেবল আয়তন বেড়ে যাওয়া নয়, আকার-নির্ভরশীল কোয়ান্টাম ইফেক্টের কারণে এমনটা হচ্ছে।

কোয়ান্টাম ডট বা ন্যানো ক্রিস্টাল প্রযুক্তিতে বাভেন্দির অবদান হলো, তিনি আক্ষরিক অর্থেই কোয়ান্টাম ডটের উৎপাদন পদ্ধতিতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন। ১৯৯৩ সালে তাঁর সেই আবিষ্কারের পর থেকে নিয়ন্ত্রিত আকারের, নির্দিষ্ট গঠনের কোয়ান্টাম ডট তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। এর ফলে কোয়ান্টাম ডটের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও চিকিৎসা খাতে এর ব্যবহার আরও সহজ হয়েছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, নোবেল প্রাইজ ওয়েবসাইট, দ্য গার্ডিয়ান

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়