সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৭

রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে করণীয়?

হাকীম মিজানুর রহমান
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে করণীয়?

কোলেস্টেরল হলো এক ধরনের চর্বিজাতীয় মোমের মতো পদার্থ, যা আমাদের শরীরে যকৃত থেকে উৎপন্ন হয় এবং কিছু খাবার থেকেও পাওয়া যায় যেমন ডিমের কুসুম, মাংস, ও দুগ্ধজাত খাবার।

ভালো কোলেস্টেরলের ভূমিকা

এটি কোষের গঠন ও ঝিল্লি (cell membrane) বজায় রাখতে সাহায্য করে। হরমোন (যেমন ইস্ট্রোজেন, টেস্টোস্টেরন) তৈরিতে প্রয়োজনীয়। ভিটামিন উ উৎপাদনে সহায়ক, বিশেষ করে সূর্যালোকের মাধ্যমে। বাইল সল্ট তৈরিতে সাহায্য করে, যা চর্বি হজমে সহায়ক। ভিটামিন অ, উ, ঊ, ক শোষণে সহায়তা করে।

কোলেস্টেরলের ধরন

১. ভালো কোলেস্টেরল-ঐউখ (High-Density Lipoprotein)। যা অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সরিয়ে হৃদয়কে সুরক্ষা দেয় ।

২. খারাপ কোলেস্টেরল-খউখ (Low-Density Lipoprotein)। যা রক্তনালিতে জমে গিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

৩. অতিরিক্ত ক্ষতিকর-ঠখউখ (Very Low-Density Lipoprotein)। যা চর্বি জমিয়ে ধমনী সংকুচিত করে।

অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের ঝুঁকি

রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। প্রথমত, জীবনযাপনে পরিবর্তন আনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

খাদ্যভ্যাস পরিবর্তন

স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট কমানো : লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজা পোড়া খাবার এবং কিছু দুগ্ধজাত দ্রব্যে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। ফাস্ট ফুড এবং বেকারি পণ্যে থাকা ট্রান্স ফ্যাট কোলেস্টেরলের মাত্রা মারাত্মকভাবে বাড়ায়।

দ্রবণীয় আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ : ওটস, বার্লি, আপেল, মটরশুঁটি এবং শিম জাতীয় খাবারে প্রচুর দ্রবণীয় আঁশ থাকে, যা রক্ত থেকে কোলেস্টেরল শোষণ করে কমাতে সাহায্য করে।

স্বাস্থ্যকর ফ্যাট : অলিভ অয়েল, বাদাম, অ্যাভোকাডো এবং স্যামন মাছের মতো খাবারে থাকা মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট উপকারী। এগুলো খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়াতে সাহায্য করে।

শারীরিক কার্যকলাপ

নিয়মিত ব্যায়াম কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে দারুণ কার্যকর। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং বা সাঁতার কাটলে তা ঐউখ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে। শারীরিক পরিশ্রম ওজন কমাতেও সাহায্য করে, যা পরোক্ষভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

অন্যান্য জরুরি বিষয়

ধূমপান ত্যাগ : ধূমপান রক্তনালীর দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং খউখ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। ধূমপান ত্যাগ করলে ঐউখ কোলেস্টেরল বাড়ে এবং রক্তনালীর স্বাস্থ্য ভালো হয়।

ওজন নিয়ন্ত্রণ : অতিরিক্ত ওজন কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে। ওজন কমালে তা কোলেস্টেরলসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হয়।

চিকিৎসকের পরামর্শ : যদি জীবনযাপনের পরিবর্তন যথেষ্ট না হয়, তাহলে অবস্থা অনুসারে চিকিৎসক স্ট্যটিন জাতীয় ঔষধের (যেমন: অ্যাটোরভাস্ট্যাটিন, রোসুভাস্ট্যাটিন) পরামর্শ দিতে পারেন। এই ঔষধগুলো লিভারে কোলেস্টেরল উৎপাদন কমিয়ে রক্তে এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তবে এসব ঔষধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারেই গ্রহণ করতে হবে।

সবশেষে, রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে আতঙ্কিত না হয়ে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং তার নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি। নিয়মিত ফলো-আপ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চললে এই সমস্যা কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়