প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৫
এলার্জিক রাইনাইটিস : কারণ ও প্রতিকার
এলার্জিক রাইনাইটিসের (অষষবৎমরপ জযরহরঃরং) লক্ষণগুলো মৃদু হলে ঘরোয়াভাবেই তার চিকিৎসা করা যায়। এলার্জিক রাইনাইটিসে নাক বন্ধ হওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি ও চুলকানির মতো লক্ষণ দেখা দেয়। এলার্জিজনিত কারণে নাকের ভেতরে প্রদাহ হয়ে এই লক্ষণগুলো সৃষ্টি হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সমস্যার চিকিৎসায় মূল লক্ষ্য হলো এসব লক্ষণ থেকে মুক্তি পাওয়া। লক্ষণ তেমন মারাত্মক না হলে আপনি সাধারণত নিজে নিজেই সেগুলোর চিকিৎসা করতে পারবেন। তবে ঘরোয়া চিকিৎসায় কাজ না হলে কিংবা লক্ষণগুলো আরও বেড়ে গিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা সৃষ্টি করলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হয়।
এলার্জিক রাইনাইটিসের লক্ষণসমূহ
এলার্জিক রাইনাইটিসের লক্ষণগুলো অনেকাংশেই সাধারণ সর্দি-কাশির মতো। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ
হাঁচি হওয়া
নাকের ভেতর চুলকানি অনুভূত হওয়া
নাক থেকে পানি পড়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া অথবা সর্দি হওয়া
সাধারণত এলার্জি আছে এমন কোনো জিনিসের সংস্পর্শে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই এসব লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে।
বেশিরভাগ রোগীদেরই লক্ষণসমূহ মৃদু হয়ে থাকে এবং কার্যকর চিকিৎসায় তা সহজেই সেরে যায়। তবে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে লক্ষণসমূহ তীব্র হতে পারে এবং কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে কষ্টদায়ক করে দেয় এবং নানান সমস্যা তৈরি করে। যেমন: ঘুমের সমস্যা হওয়া।
ব্যক্তি বিশেষে লক্ষণ দেখা দেওয়ার সময়কাল ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যেমন, কারও কারও নির্দিষ্ট ঋতুতে এলার্জিক রাইনাইটিস দেখা দেয়, কারণ তাদের ঋতুভিত্তিক গাছ ও ঘাসের পরাগে এলার্জি থাকে এবং ঋতু পরিবর্তনের সাথে লক্ষণগুলোও দূর হয়ে যায়। আবার অন্যরা প্রায় সারা বছরই ভোগান্তিতে থাকেন।
এলার্জিক রাইনাইটিসের কারণ
এলার্জিক রাইনাইটিস এর মূলে রয়েছে বিভিন্ন জিনিসের প্রতি এলার্জি। এলার্জির প্রতিক্রিয়ায় আমাদের দেহে হিস্টামিন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে আসে।
হিস্টামিন নাকের ভেতরের চামড়ায় প্রদাহ সৃষ্টি করে। তখন নাকের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে শ্লেষ্মা জাতীয় পিচ্ছিল তরল পদার্থ তৈরি হয়। এরপর হাঁচি এবং নাক থেকে পানি পড়াসহ এলার্জিক রাইনাইটিসের বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়।
একেকজন মানুষের একেক জিনিসে এলার্জি হয়। পরিবারে কেউ এলার্জিতে ভুগলে জেনেটিক কারণে অন্যান্য সদস্যের এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
সচরাচর যেসব জিনিসে এলার্জি হতে দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছেÑডাস্ট মাইট, পরাগ রেণু, গৃহপালিত পশু-পাখি, ছত্রাক, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশে থাকা নানান এলার্জিক উপাদান। যেমনÑকাঠের গুঁড়া, আটা ও ময়দার গুঁড়া, ল্যাটেক্স বা বিশেষ ধরনের রাবারের গ্লাভস
উল্লেখ্য, কিছু পরিবেশগত কারণেও এলার্জি হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবারের সদস্যদের ধূমপানের অভ্যাস থাকলে কিংবা বাড়িতে ডাস্ট মাইট থাকলে সেখানে বেড়ে ওঠা শিশুদের এলার্জির ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
ডাস্ট মাইট
ডাস্ট মাইট এক ধরনের ছোটো ছোটো পোকা। এগুলো খালি চোখে দেখা যায় না। মাইক্রোস্কোপের নিচে দেখলে সাদা রঙের আট পা-ওয়ালা পোকার মতো দেখা যায়। আমাদের চামড়া থেকে যে মৃত কোষগুলো প্রতিদিন বিছানায়, কার্পেটে কিংবা সোফায় ঝরে পরে, ডাস্ট মাইট সেগুলো খেয়ে বেঁচে থাকে।
এলার্জিক রাইনাইটিসের চিকিৎসা
এলার্জিক রাইনাইটিসের লক্ষণগুলো মৃদু হলে ঘরোয়াভাবেই তার চিকিৎসা করা যায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসার লক্ষ্য হলো নাক বন্ধ, নাক দিয়ে পানি পড়া ও হাঁচিÑএসব লক্ষণগুলো উপশম করা।
এলার্জিক রাইনাইটিস এর ঘরোয়া চিকিৎসা
এলার্জিক রাইনাইটিস উপশমে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো হলোÑএলার্জি উদ্রেককারী জিনিসগুলো এড়িয়ে চলা। নিচের প্রতিরোধ অংশে এই ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
খেলে ঘুম ঘুম ভাব আসে না এমন অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া। যেমন: সেটিরিজিন ও লোরাটাডিন। এগুলো দেহে এলার্জির প্রতিক্রিয়ায় বের হওয়া হিস্টামিন এর বিরুদ্ধে কাজ করে।
উল্লেখ্য, একেকজনের ক্ষেত্রে একেক ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ ভালো কাজ করে। তাই আপনার জন্য সবচেয়ে কার্যকর ঔষধটি খুঁজে পাওয়ার আগে কয়েক ধরনের অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করে দেখার প্রয়োজন হতে পারে।
স্যালাইন বা ০.৯ % সোডিয়াম ক্লোরাইড সমৃদ্ধ নাকের ড্রপ দিয়ে নাক পরিষ্কার করা। ফার্মেসিতে এগুলো সলো, স্যালোরাইড ইডি, এন-সল ও হ্যাপিসল-সহ বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। এগুলো নাকে থাকা এলার্জি উদ্রেককারী জিনিসগুলো পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
যে তিনটি ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবেÑ
ঘরোয়া চিকিৎসায় কাজ না হলে
লক্ষণগুলো তীব্র হলে
গুরুতর লক্ষণের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা সৃষ্টি হলে। যেমন: ঘুমের সমস্যা হওয়া, দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটা
এলার্জিক রাইনাইটিস এর ঔষধ
ঔষধের মাধ্যমে এলার্জিক রাইনাইটিসের সাধারণ লক্ষণগুলো উপশম করা যায়। তবে এলার্জি পুরোপুরি সারিয়ে তোলা যায় না।
ঋতু পরিবর্তনের সময় এলার্জির সমস্যা দেখা দিলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঔষধ সেবন করতে পারেন। লক্ষণ দূর হয়ে গেলে আর ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। এলার্জিক রাইনাইটিসের কার্যকর ঔষধগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ
অ্যান্টিহিস্টামিন : অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ ট্যাবলেট, স্প্রে, ড্রপ, সিরাপ ও ক্রিম হিসেবে ফার্মেসিতে কিনতে পাওয়া যায়। অ্যান্টিহিস্টামিন ট্যাবলেট কেনার জন্য সাধারণত ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের প্রয়োজন হয় না। তবে কিডনি অথবা লিভারের সমস্যা থাকলে অথবা খিঁচুনি রোগীদের ক্ষেত্রে কিংবা ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এসব ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
উল্লেখ্য, কিছু অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ সেবনে ঘুম ঘুম ভাব হওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই গাড়ি ড্রাইভিং ও মেশিন চালনার কাজ করার পূর্বে ঔষধ সেবন করা উচিত নয়। ঝুঁকি এড়াতে রাতে ঘুমানোর পূর্বে ঔষধ খান।
অ্যান্টিহিস্টামিন ঔষধ নাকের স্প্রে হিসেবে ট্যাবলেট কিংবা সিরাপের চেয়ে দ্রুত কাজ শুরু করে। এগুলো এলার্জিক রাইনাইটিসের চিকিৎসায় তুলনামূলক অধিক কার্যকর। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এসব স্প্রে ব্যবহার করা ঠিক নয়।
স্টেরয়েড : এলার্জিক রাইনাইটিসের চিকিৎসায় কিছু ক্ষেত্রে কর্টিকোস্টেরয়েড বা স্টেরয়েডযুক্ত নাকের ড্রপ কিংবা স্প্রে ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমনÑ
কিছুদিন পর পরই লক্ষণ দেখা দিলে
লক্ষণগুলো লম্বা সময় ধরে স্থায়ী হলে
নাক বন্ধ থাকলে অথবা নাকে পলিপ হলে
ঘরোয়া চিকিৎসা ও অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করেও লক্ষণের কোনো উন্নতি না হলে
এই জাতীয় ঔষধ নাকের ভেতরের প্রদাহ কমিয়ে লক্ষণ উপশমে সাহায্য করে। অ্যান্টিহিস্টামিনের তুলনায় এগুলো কাজ করতে বেশি সময় নিলেও এসবের প্রভাব থাকে দীর্ঘদিন।
বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর লক্ষণের চিকিৎসায় ডাক্তার ৫-১০ দিনের জন্য স্টেরয়েড ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দিতে পারেন।
স্টেরয়েড ন্যাজাল স্প্রে ও ড্রপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার ঘটনা বিরল। তবে কিছু ক্ষেত্রে নাক শুষ্ক হওয়া, নাকের ভেতরে জ্বালাপোড়া অথবা রক্ত পড়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য : ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড ট্যাবলেট সেবন করা একেবারেই উচিত নয়। বেশিদিন ধরে কিংবা উচ্চ ডোজে স্টেরয়েড সেবন করলে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই ইন্টারনেট দেখে কিংবা ফার্মেসি থেকে নিজে নিজে এসব ঔষধ কিনে খাবেন না।
উল্লেখ্য, ওপরের চিকিৎসাগুলোয় কাজ না হলে ডাক্তার স্টেরয়েড স্প্রে বা ড্রপের ডোজ বাড়িয়ে দিতে পারেন। এ ছাড়া রোগীকে ভিন্ন ঔষধ ব্যবহার কিংবা একাধিক প্রকারের ঔষধ একত্রে ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
ইমিউনোথেরাপি : এই চিকিৎসায় রোগীকে একটি লম্বা সময় ধরে এলার্জিক উপাদানের সাথে অভ্যস্ত করে তোলা হয়। এতে শরীরে আগের মতো এলার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। এই পদ্ধতিতে মারাত্মক এলার্জিক প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই চিকিৎসাটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে করা হয়ে থাকে।
ইমিউনোথেরাপির ব্যবহার সীমিত। গুটিকয়েক নির্দিষ্ট প্রকারের এলার্জি গুরুতর রূপ ধারণ করলে কেবল তখনই এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। যেমন: পরাগ রেণুতে এলার্জি বা হে ফিভার। বাংলাদেশে এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি তেমন প্রচলিত নয়।
এলার্জিক রাইনাইটিস প্রতিরোধ
এলার্জিক রাইনাইটিস প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এলার্জি উদ্রেক করে বা করতে পারে এমন জিনিস এড়িয়ে চলা।
এলার্জি উদ্রেককারী জিনিসগুলো পুরোপুরি এড়িয়ে চলা কঠিন হতে পারে। যেমন, বাড়িতে ডাস্ট মাইট আছে কি না সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া কঠিন হতে পারে। কারণ বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাসা-বাড়িতেও এগুলো বংশবিস্তার করতে পারে। আবার নিজের কিংবা কোনো নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকলে সেগুলোর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলাটাও কঠিন হওয়া স্বাভাবিক। তবে এলার্জি উদ্রেককারী জিনিসের সংস্পর্শ যথাসম্ভব কমিয়ে আনার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যায়। এগুলো এলার্জিক রাইনাইটিসের লক্ষণ উপশমে বেশ কার্যকর হবে। কমন এলার্জিক উপাদানগুলো এড়িয়ে চলার কিছু কার্যকর পরামর্শ নিচে তুলে ধরা হয়েছেÑ
ডাস্ট মাইট
ডাস্ট মাইট নামের ছোটো ছোটো পোকা এলার্জি উদ্রেকের সবচেয়ে বড় কারণগুলোর মধ্যে একটি। এরা বাসায় থাকা ধুলাবালিতে বংশবিস্তার করে। আকারে খুব ছোটো হওয়ায় এগুলোকে খালি চোখে দেখা যায় না। তাই শনাক্ত করা বেশ কঠিন।
ডাস্ট মাইট থেকে এলার্জি প্রতিরোধে নিচের উপদেশগুলো মেনে চলুনÑ
বিছানার চাদর, কাঁথা, পর্দা, ছোটো বাচ্চাদের নরম খেলনা, বালিশ ও লেপের কভার—এগুলো সপ্তাহে অন্তত একবার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
বাড়িতে ব্যবহৃত যেসব জিনিস সহজে ধোয়া যায় না সেগুলো বাসায় যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। যেমন: কার্পেট ও উলের কম্বল। কার্পেটের পরিবর্তে শক্ত ভিনাইল এর ফ্লোরম্যাট ব্যবহার করতে পারেন। কম্বলের ক্ষেত্রে সহজে ধুয়ে দেওয়া যায় এমন সিনথেটিক কাপড়ের কাভার ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাড়ির যে জায়গাগুলোতে বেশি সময় কাটানো হয় সেগুলো সবসময় ধূলামুক্ত ও পরিষ্কার রাখুন। যেমন: বসার ও শোবার ঘর।
বিছানা গোছানো ও ঝাড়া-মোছা করার সময়ে ভালো একটা মাস্ক পরুন।
যেসব জিনিস ভেজা কাপড় দিয়ে মোছা যায় সেগুলো ভেজা কাপড় দিয়েই মুছুন। যেমন: বাড়ির মেঝে ও আসবাবপত্র। এতে ধুলোবালি বাতাসে কম উড়বে, ছড়িয়ে যাবে না।
কেউ কেউ বাড়িতে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে ‘হেপা ফিল্টার’ যুক্ত ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো ধূলাবালি দূর করতে অধিক কার্যকর।
পোষা প্রাণী
অনেকেই মনে করেন যে পশু-পাখির পালক অথবা পশমেই এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হয়। এটি একটি ভুল ধারণা। মূলত পশু-পাখির শরীর থেকে ঝরে পড়া মৃত কোষ, মুখের লালা ও শুষ্ক প্রস্রাবের কণা এলার্জি উদ্রেক করে।
এলার্জিক রাইনাইটিসের সমস্যা থাকলে পোষা প্রাণী এড়িয়ে চলাই ভালো। সেটি সম্ভব না হলে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলতে পারেন—
পোষা প্রাণীকে যথাসম্ভব বাড়ির বাইরে রাখার চেষ্টা করুন। বাইরে লালন-পালন করা সম্ভব না হলে বাড়িতে একটি আলাদা ঘরে তাদের থাকার ব্যবস্থা করুন এবং সেখানে কার্পেটের ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
শোবার ঘরে পোষা প্রাণীকে প্রবেশ করতে দিবেন না।
পোষা প্রাণীকে প্রতি দুই সপ্তাহে অন্তত একবার গোসল করান।
পোষা কুকুরকে নিয়মিত বাড়ির বাইরে নিয়ে পশম আঁচড়ানো, ব্রাশ করানোসহ ত্বকের সার্বিক যত্ন নিন।
পশু-পাখির ব্যবহৃত বিছানা, নরম কুশন ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়মিত ধুয়ে দিন।
নিজের বাড়িতে পোষা প্রাণী নেই, কিন্তু যেই বন্ধু অথবা আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছেন তাদের পোষা প্রাণী আছেÑএমন ক্ষেত্রে তাদের বাড়িতে ঢোকার এক ঘণ্টা আগে অ্যান্টিহিস্টামিন খেয়ে নিন।
পরাগ রেণু বা পোলেন
একেক ধরনের গাছপালার পরাগায়ন বছরের একেক সময়ে হয়। তাই বছরের কোন সময়ে এলার্জিক রাইনাইটিসের প্রকোপ বাড়বে সেটি কোন ধরনের পরাগে এলার্জি আছে তার ওপরে নির্ভর করবে। তবে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে বাতাসে পরাগ রেণুর পরিমাণ বেড়ে যায় বলে সাধারণত এ সময়েই বেশিরভাগ মানুষকে এলার্জিক রাইনাইটিসে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
পরাগ রেণুর মাধ্যমে এলার্জিক রাইনাইটিস প্রতিরোধে নিচের উপদেশগুলো কার্যকর হতে পারে—
ঋতু পরিবর্তনের সময়ে, বিশেষ করে গ্রীষ্ম ও বসন্তকালে যতটা সম্ভব ঘরের ভেতরে থাকুন।
মাঝ-সকালে এবং সন্ধ্যার আগে আগে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন। এই সময়ে বাতাসে পরাগরেণুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে।
বাতাসে পরাগ রেণুর পরিমাণ বাড়লে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। একান্তই বাইরে যেতে হলে বাড়িতে ফেরার পর গোসল করে নিন। যেসব জামা-কাপড় পরে বাইরে গিয়েছিলেন সেগুলো ধুয়ে ফেলুন।
সম্ভব হলে জামা-কাপড় ঘরের ভেতরে শুকোতে দিন। তবে বাড়িতে যেন ছত্রাক না জন্মায় সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।
যে স্থানে ঘাসের পরিমাণ বেশি সেখানে হাঁটাচলা করা থেকে বিরত থাকুন।
মোল্ড বা ছত্রাক
উষ্ণ ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ এধরনের এলার্জির উপদ্রব বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি প্রতিরোধে নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলুন—
বাড়ির পরিবেশকে শুষ্ক রাখার পাশাপাশি আলো-বাতাস চলাচলের ভালো ব্যবস্থা রাখুন।
বাড়ির ভেতরের স্যাঁতস্যাঁতে ও আর্দ্র স্থানগুলো মেরামত করুন।
গোসল ও রান্নার সময়ে জানালা খুলে দিন। তবে এসময়ে রান্নাঘর ও বাথরুমের দরজা বন্ধ রাখুন যেন বাষ্প বাড়ির ভেতর না ছড়ায়। তাছাড়া বাষ্প বাড়ির বাইরে বের করে দিতে এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহার করুন।
বাড়ির ভেতরে ভেজা কাপড় শুকোতে দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে কাপড় রাখা ও আলমারিতে নির্দিষ্ট স্থানে অনেক কাপড় আঁটসাঁট করে রাখা এড়িয়ে চলুন।
ঘরে গাছ থাকলে সেটি সরিয়ে ফেলুন।
এলার্জিক রাইনাইটিস নির্ণয়
এলার্জিক রাইনাইটিস আছে কি না সেটি নিশ্চিত হতে ডাক্তার রোগীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকেন। যেমনÑ
নির্দিষ্ট কোনো এলার্জিক উপাদানের প্রভাবে লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে কি না
লক্ষণগুলো কোনো নির্দিষ্ট স্থানে অথবা সময়ে দেখা দেয় কি না
পরিবারের কেউ এমন সমস্যায় ভুগছেন কি না
এসবের পাশাপাশি ডাক্তার নাকে ‘পলিপ’ আছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখতে পারেন। পলিপকে অনেকে ‘নাকের ভেতরে মাংস বেড়ে যাওয়ার সমস্যা’ হিসেবে চিনে থাকেন। এলার্জিক রাইনাইটিসে নাকের ভেতরের প্রদাহ হওয়ার কারণে নাকে পলিপ হতে পারে।
উল্লেখ্য, অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহারে রোগীর লক্ষণ উপশম হলে প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া ও সর্দির মতো লক্ষণগুলো এলার্জিক প্রতিক্রিয়ার কারণেই ঘটেছে। তবে এলার্জিক রাইনাইটিসের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে ডাক্তার কিছু বিশেষ এলার্জি পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিতে পারেন।
এলার্জিক রাইনাইটিসের জটিলতা
এলার্জিক রাইনাইটিস থেকে কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে। নাক দিয়ে পানি পড়া ও নাক বন্ধের সমস্যা থেকে আরও কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমনÑ
ঘুমের সমস্যা বা নিদ্রাহীনতা
দিনের বেলাতেও ঘুম ঘুম লাগা
মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকা
কাজে মনোযোগ দিতে সমস্যা হওয়া
উল্লেখ্য, রোগী এলার্জিক রাইনাইটিসের পাশাপাশি হাঁপানিতে ভুগলে হাঁপানির লক্ষণগুলো খারাপের দিকে যেতে পারে।
এলার্জিক রাইনাইটিসে নাকের প্রদাহের ফলে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন
নাকের পলিপ
সাইনুসাইটিস
কানের ভেতরে ইনফেকশন