প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৩, ০০:০০
মা ছেলেকে কিডনি দিবে, নেই অপারেশনের টাকা
১০ মাস ১০ দিন সন্তানকে পেটে ধারণ করেছেন, সেই সন্তান জন্মদানের সময় ছিলেন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বুকের দুধ খাইয়ে বড় করেছেন, মানুষ করার জন্য মাত্র জীবন যুদ্ধ শুরু করেছেন। কিন্তু বিধিবাম! নাড়ি ছেঁড়া সেই সন্তান হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বুঝা গেলো সেই সন্তান কিডনি রোগে আক্রান্ত আর ক’দিনের মধ্যে একটি কিডনি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। তাকে সুস্থ রাখতে হলে জরুরি ভিত্তিতে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। কোনো কোনো চিকিৎসকের কথায় কিডনি প্রতিস্থাপনের কথা বাদ দিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিতে বিপরীত হয়েছে। সময় পার হলো, টাকা গেলো কাজের কাজ কিছু হলো না, উল্টো একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেলো। তাই এখন বাধ্য হয়ে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতেই হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে না পারলে অপর কিডনিটিও আক্রান্ত হয়ে যাবে। মা এক পায়ে খাড়া সন্তানকে বাঁচানে তিনি সব করবেন। মানে এক কথায় তিনি সন্তানকে কিডনি দিবেনই। মায়ের কিডনি দিতে ব্লাড গ্রুপসহ অন্য পরীক্ষা করে দেখা গেলো মায়ের কিডনি দেয়া যাবে। আর মা তা শুনে তাৎক্ষণিক রাজি হয়ে গেলেন। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য সব পরীক্ষা করা হলো, সব কিছু চূড়ান্ত কথা হলো। চিকিৎসকের সাথে কথা বলতে গিয়ে আকাশ ভেঙ্গে পড়লো এই মায়ের। সন্তানকে নিজের একটি কিডনি দিতে গিয়ে অপারেশনে লাগবে ৬ লাখ টাকা। এই টাকা কোনোভাবেই এই মায়ের সংগ্রহ করার ক্ষমতা নেই।
|আরো খবর
এটি কোনো সিনেমার ঘটনা নয়। এটি সত্যিকার এক মা আর সন্তানের ঘটনা। শিল্পী নামের এই মায়ের অসুস্থ সেই সন্তানের নাম শাওন (১৮)। শাওনের বাবা মুকবুল। বাড়ি হাজীগঞ্জের ৫নং সদর ইউনিয়নের সুবিদপুর মিয়াজী বাড়ি। শিল্পী-মকবুল দম্পতির ৩ সন্তানের মধ্যে শাওন মেঝো। শাওনকে এখন মাসে দুই বার ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাওনের বাবা মকবুল করাতকল (স‘মিল) মিস্ত্রী। পৈত্রিক সম্পত্তি পেয়েছেন দুই শতাংশ। থাকছেন মৃত বাবার পুরাতন ঘরে বৃদ্ধ মায়ের সাথে। শাওনকে ডায়ালাইসিস করাতে স্ত্রী শিল্পী বেগম থাকছেন ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে। শাওনের ডায়ালাইসিসসহ মাসে খরচ পড়ে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। যার পুরোটা আসে করাতকলে নিজের ঘাম শ্রম আর অন্যদের সহায়তায়। বড় সন্তান কাজ করছে অন্যের দোকানে আর ছোট সন্তান থাকছে তার দাদীর কাছে।
মকবুল জানান, মাত্র ৮ বছর বয়সে শাওনের কিডনি রোগ ধরা পড়ে। সেই সময় অতোটা জটিল ছিলো না রোগটি। ঠিক ১৪ বছরের মাথায় গিয়ে একই রোগ জটিল আকারে শাওনের শরীরে আবির্ভূত হয়। গত ৪ বছরে রোগটি এমনই জটিল হয়ে পড়েছে যা কিডনি প্রতিস্থাপন না করলে শাওনকে আর বাঁচানো যাবে না। মাসে ৩ বার করে গত ৩ বছর ধরে ডায়ালাইসিস করতে গিয়ে আমি এখন পথে বসে গেছি।
মকবুল আরো জানান, ডাক্তার যখন বলেছে কিডনি পাল্টালে ছেলেটাকে বাঁচানো যাবে, এ কথা শুনেই স্ত্রী বললো আপনি আমার পরীক্ষা করেন আমি কিডনি দেবো। স্ত্রীর পীড়াপীড়িতে তার পরীক্ষা করে দেখলাম ছেলের সাথে সব কিছুতে মিলে গেছে। কিন্তু ডাক্তার যখন বললো কিডনি প্রতিস্থাপন আর চিকিৎসাসেবা মিলিয়ে পুরো ৬ লাখ টাকার প্রয়োজন। এ কথা শুনে আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কোথায় পাবো এতো টাকা, কে দিবে এতো টাকা, কি করবো এখন? স্ত্রী তো খাওয়া দাওয়া সব ছেড়ে দিছে। তবে সবকিছু শেষে আমাদের এমপি মহোদয় আমার পরিবারকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি তাঁর সাধ্যমতো সহায়তা করাসহ অপারেশন করাতে ঢাকার শ্যামলী কিডনি হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ কামরুল হাসানের সাথে কথা বলবেন।
বলাখালের স্থানীয় বাসিন্দা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ নেতা তসলিম আলম শিশির জানান, শাওনের বাবার কাছ থেকে সব শুনে আমি আমাদের সাংসদ মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম স্যারের সাথে কথা বলেছি। স্যারের কথা মতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া স্যার সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।