প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ
প্রিয় পাঠক গল্পটা পড়ে ভালো লাগবে বলে আমি আশা করছি। গল্প পড়ে জানতে পারি ছেলেটির নাম সাদাকাত। বাংলাদেশের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার জন্ম। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। দেশে ভাল মানের চাকুরির সুযোগ না হওয়ায় পাড়ি দিয়েছে স্বর্গরাজ্য লন্ডনে। অনেকগুলো ডলার ব্যয় হয়েছে তার। তার প্রশ্ন জাগলো ‘কেন সে এত ডলার খরচ করে বিদেশের মাটিতে এসেছে’। উত্তর আসবে শুধু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্যে।
আমাদের দেশের অনেক ছেলে-মেয়ে ভালো যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকুরি জোটে না বছরের পর বছর। অনেকের আবার মামা-খালুর জোর না থাকায় চাকরি নামক সোনার হরিণটি নিমিষেই হাতছাড়া হয়ে যায়। চোখের সামনে অক্ষম ও অযোগ্যরাই টাকার বিনিময়ে চাকুরিগুলো ভাগিয়ে নেয় আর যোগ্য ও মেধাসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা হয়ে যায় পরিবারের বোঝা। হতাশার অমানিশা তাদের জীবনকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। তাই তো জীবনের অস্তিত্ব রক্ষায় তারা পাড়ি দেয় ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও কানাডা নামক অজানা রাজ্যে। সাদাকাত থেকে জানলাম, ডলার, বাড়ি, গাড়ি এমনকি নারীরও অভাব নেই। আরো আছে আকাশচুম্বী স্ট্যাটাস। সাদাকাত বললো, সেই দিন নিজের পাজেরো গাড়ি নিয়ে মাইলকে মাইল ভ্রমণের কথা। সে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার পর বিরাট একটা মসজিদ তার নজরে আসলো। সে সাথে সাথে ড্রাইভ করে মসজিদের সামনে গেলো। সেখানে মসজিদ সচরাচর দেখা যায় না, দীর্ঘদিন পর মসজিদটা দেখে তার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। লোভনীয় চাকুরি, ওভারটাইম, শুধু ডলার আর ডলার কামানো ইত্যাদির চিন্তায় নিজের ধর্ম-কর্ম সবই এখন প্রায় ভুলতে বসেছে। আজ টাকার কাছে মানুষ বড্ড অসহায়। মসজিদ ও কম্পাউন্ডটা সে ঘুরে ঘুরে দেখলো। সামান্য কয়েকজন মানুষ ছাড়া পুরো মসজিদটা ফাঁকা মনে হচ্ছে। সাদাকাত বললো, সামান্য সময়ের মধ্যে নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ আরম্ভ হলো। মসজিদে বসে বেশ কান্না করলো। আজ তার অঢেল সম্পদ ও টাকা আছে কিন্তু ধর্ম-কর্মের সময় পায় না। সবসময় ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা। তার মনে পড়ে, একসময় দেশে থাকতে মসজিদে আযান দিতো এবং সে ইমামের পিছনে নামাজ আদায় করতো। সুযোগ পেলে কোরআন ও হাদিস পড়তো। আজ সে এগুলো থেকে দূরে...বহু দূরে। সাদাকাত আবেগাপ্লুতভাবে বললো, তার মালিক তাকে বিনা পয়সায় বিয়ার, মদ, শুকরের মাংস খেতে দেয়। সে তা কৌশলে এড়িয়ে চলে।
ছোটবেলায় ধর্মীয় শিক্ষার কারণে, পরকালের চিন্তা করে হয়তো তা সম্ভব হয়েছে। সে বললো, বিভিন্ন দেশের উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েরা এই সুযোগগুলোর সহজেই গ্রহণ করে। প্রবাসের এ চাকচিক্যে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলে এবং তারা নিজ দেশের ধর্ম ও কর্মের কথা ভুলে যায়। সে বলতে চায়-ধর্ম-মা-মাতৃভূমি এগুলো যেন সবসময় মাথায় থাকে। মনে রাখবে, ‘ভালো মানুষ’ হওয়ার জন্যে নিজের ইচ্ছাটাই যথেষ্ট। কিন্তু ইদানীং অনেককে দেখি অধিক টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদের কারণে ধর্মকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যভাবে এবং ধর্মের শিকলে থাকা নিজেকে অবরুদ্ধ মনে করে। কিন্তু সে যে এ পৃথিবীতে ক্ষণিকের মেহমান, এটা তাকে ভুলে গেলে চলবে না। যদি ভুলে ও যায় তার জন্যে তাকে অধিক মূল্য দিতে হবে। জীবন হবে তখন ঊষার মরুভূমি।
আবদুল ওয়াহিদ চৌধুরী : সহকারী অধ্যাপক (ইংরেজি), মেহের ডিগ্রি কলেজ, শাহরাস্তি, চাঁদপুর।