বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুরে শব্দদূষণ

মু. আ. হোসাইন পাটোয়ারী
চাঁদপুরে শব্দদূষণ

আজ থেকে ১০/১৫ বছর আগেও চাঁদপুর শহরের সড়কগুলোতে এত গাড়ি চলতো না। এত মানুষ এই শহরে আসতো না। যেটুকু ছিল তা একটা সহনশীল পর্যায়ে ছিল। সড়কে বেখেয়ালি মন নিয়ে হাঁটা যেত। ৩/৪জন পাশাপাশি কথা বলতে বলতে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত নির্বিঘ্নে চলাফেরা করা যেত। কিন্তু এখন একলা হাঁটলে গিয়েও বিপত্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এত অটো, সিএনজি, মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম যে, কখন পেছন দিয়ে এসে দুর্ঘটনা ঘটায় তার জন্য সর্বদা সতর্কও থাকতে হচ্ছে। তার উপর মোটর সাইকেলের সুউচ্চ হর্ন পাগল করে দিচ্ছে আমাকে। আমি অনেকের সাথে কথা বলেছি- দেখলাম শুধু আমিই নই, মোটর সাইকেলের উচ্চ হর্ন সবাইকে কষ্ট দিচ্ছে। শব্দ দূষণের ফলে এখন এর ক্ষতিকর প্রভাব অনুধাবন করা না গেলেও কয়েক বছর পর তা বোঝা যাবে।

শব্দ দূষণ মানুষের স্বাস্থ্য এবং আচরণ উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা সৃষ্টি করে। অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত শব্দ একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক কার্যকলাপকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শব্দ দূষণ উদ্বেগ, বিরক্তি, উচ্চ রক্তচাপ, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাত এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া অন্যান্য শারীরিক প্রতিক্রিয়া যেমন স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি হতে পারে।

শব্দদূষণ একজন মানুষের শরীরে এত খারাপ প্রভাব পড়া সত্ত্বেও প্রতিকারে কোন ভূমিকা নেই। প্রতিকার কে করবে, নিশ্চয়ই আমি করবো না। যারা সড়কে চলাফেরা করে তারাও করবে না। কারণ আমি যেমন একজন সাধারণ মানুষ। তেমনি সড়ক চলাচলকারী সবাই সাধারণ মানুষ। আমাদের কথা কেউ শুনবে না। শুনবে আইন শৃঙ্খল বাহিনী বা ম্যাজিস্ট্রেট বা কর্তৃপক্ষের কথা। যারা চাইলে উদ্যোগ নিয়ে শব্দদূষণ কমিয়ে আনতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলতে হচ্ছে- সংবাদ মাধ্যমগুলোতে, অনলাইন নিউজ পোর্টালে এ সংক্রান্ত অনেক সংবাদ প্রকাশ পেলেও কর্তৃপক্ষের উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নেই।

গবেষণায় দেখা গেছে- দূষণ-আক্রান্ত এলাকার মানুষ খিটখিটে হয়ে পড়ে; আচরণে অস্বাভাবিকতা এবং মানসিক অশান্তি; মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত এবং কাজের প্রতি অমনোযোগী করে তোলা; বয়স্ক মানুষের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাচ্ছে; এমনকি বধিরতার মতো ঘটনাও ঘটছে।

এছাড়া শব্দের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, মাথাব্যথা বা স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে। এমনকি অতিরিক্ত শব্দের পরিবেশেও শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। শব্দ দূষণের কারণে রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এমনকি হজমের সমস্যাও হতে পারে।

রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, বিশেষ দিবসসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রচার-প্রচারণায় মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে যত্রতত্র। মাইক ব্যবহারের একটা সীমা করে দেয়া উচিত। যেখানে-সেখানে, যখন খুশি তখন মাইকিং করা হচ্ছে। সব বয়সের মানুষের জন্য এটা খুবই বিরক্তিকর। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

এত এত সমস্যা নিয়ে আমরা এই সমাজে বাস করছি। অনেক পরিবেশবিদরা শব্দদূষণকে ‘শব্দ সন্ত্রাস’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শব্দদূষণ কতটা ভয়াবহ হলে একে সন্ত্রাস হিসেবে পরিচিতি করে দেয়া হয়েছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনগণের শারীরিক-মানসিক নিয়ে আরো সচেতন হতে হবে। বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে, শব্দদূষণ কমিয়ে আনতে হবে। সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকদের এ নিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সচেতন সৃষ্টিতে সেমিনার করতে হবে। তারপরও কাজ না হলে আইনি প্রয়োগের মাধ্যমে দূষণ কমিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আহ্বান থাকলো- শব্দ দূষণ থেকে আমাদের রক্ষা করুন।

মুহাম্মদ আউয়াল হোসাইন পাটোয়ারী : জোড় পুকুরপাড়, চাঁদপুর। ০১৮১৩ ০৩০৩০৯

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়