প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ইতালি টু জার্মানি
মাঝে মাঝে মনে হয় বাঁচা-খাওয়ার জন্যেই মনে হয় পৃথিবীতে আসা। মাত্র সাড়ে তিন ইঞ্চি পেটের ক্ষুধা নিবারণে দিনরাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে কম-বেশি সকল মানুষকে। শিক্ষা, সংসারজীবন কারো আবার উচ্চাবিলাষ জীবনের লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে জীবনের বিনোদন একেবারেই জলাঞ্জলি করে দিতে হচ্ছে। একবারও ভাবে না পৃথিবীটা চিরস্থায়ী নয়। বেঁচে থাকার চাহিদা মিটিয়ে মনের প্রশান্তির চাহিদা মিটানো কোনো অংশেই কম নয়, তাণ্ডকি আমরা আদৌ করি! এ গল্পের শুরু আছে শেষ পাওয়া দুষ্কর। মানুষের জীবনে ভ্রমণ হচ্ছে মনে-প্রশান্তি জোগানোর অন্যতম উৎস। যার ফলে একটু সময় পেলে ঘোরাঘুরি করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ভ্রমণ আমার অতি পছন্দের একটা শখ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ বিজয়ের মাস ১৫ ডিসেম্বরে সংক্ষিপ্ত ভ্রমণে ছুটে যাই জার্মানির কোলাহলপূর্ণ একটি শহর ফ্রাঙ্কফোর্ট। শহরটি সবসময় লোকে লোকারণ্য থাকে। তাই এক শ্রেণির মানুষের কাছে এটি খুবই পছন্দের একটি জায়গা। কর্মব্যস্ততার পরে লোকসমাগমে আসা অনেকের পছন্দ বলে মনের বাড়তি তৃপ্তি বহন করে শহরটি।
অবশ্য এই শহরে থাকা/বসবাস অনেকের আয়ত্তের বাইরে। এর কারণ ব্যয়বহুল শহর/জীবনযাপন। অন্যদিকে আবার বাসার সংকট। আরেকটি ইতিবাচক দিক হলো সচরাচর কাজ পাওয়া যায়। বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট সেক্টরে। প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিবাসী এই সেক্টরে কাজ করে তাদের জীবনের চাহিদা মিটাতে সক্ষম। বেতন-ভাতা ইউরোপের অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। যদিও খরচের ব্যয়ভারও অনেক বেশি। ইতালিতে একটা কাপ্পোচিনো এক ইউরো আর জার্মানে তিন ইউরো পঞ্চাশ সেন্ট।
ইউরোপের অন্য দেশের তুলনায় জার্মানে অভিবাসীর সংখ্যা তেমন নেই বললে চলে। এর অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম সহজে অনুপ্রবেশ করা যায় না এবং কঠিন আইন ফলে অভিবাসীর সংখ্যা নগণ্য ইউরোপের অন্য দেশের তুলনায়।
ইউরোপের মানবিক দেশ ইতালিতে দুই লাখের বেশি বাংলাদেশি বসবাস করছেন। এটা আনঅফিশিয়াল। কিন্তু রোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের হিসেবে প্রায় এক লাখ ষাট হাজার বাংলাদেশি রয়েছে। এই সংখ্যা বর্তমানে আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি। বলা হয়, ইতালিতে লন্ডনের পর অভিবাসীর বসবাস। অন্যদিকে জার্মানির অভিবাসীর সংখ্যা সম্পর্কে প্রবাসী বাংলাদেশি মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক হাবিব উল্লাহ বাহারের সাথে এক আলাপচারিতায় তিনি কিছু তথ্য দেন। জার্মানিতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করেন তাঁর মতে, জার্মানিতে প্রায় ৪০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে। পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে এসেছেন। আবার এসব শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাওয়ার পর স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ এবং নিচ্ছেন নাগরিকত্ব। বর্তমানে এই পদ্ধতির মাধ্যমেই বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জার্মানিতে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগ এবং জার্মানি নাগরিকত্ব পেয়েছেন। তাঁর কথা মোতাবেক জার্মানিতে পড়াশোনার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তিনি একসময় ছাত্র ছিলেন শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি বর্তমানে ফিনান্সিয়াল একাউন্টেন্ট হিসেবে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করছেন। বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে বেশ সুনামের সাথে ফ্রাঙ্কফোর্ট শহর থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরে মাইনজ শহরে পরিবারসহ বসবাস করেন।
আমার জার্মান ভ্রমণের মূল অনুপ্রেরণা এবং যার সার্বিক সহযোগিতায় ফ্রাঙ্কফোর্টের আনাচে কানাচে ঘুরতে সহজ হয়েছে তার কথা না বললেই নয়। আব্দুর রহিম তার প্রতি কৃতজ্ঞ বন্ধু-স্বজন হিসেবে তার সাথে দীর্ঘ পথচলা। এক সময় সে ইতালিতে থাকতো। তার বারংবার আমন্ত্রণের পর প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে জার্মান ভ্রমণ এবারের মতো শেষ করা হলো। ভ্রমণে আমার সাথে ছিলো ইতালি প্রবাসী সৈয়দ আল ফারাবী। তবে সে-ও গত কয়েক মাস ধরে জার্মানের ফ্রেইবার্গ শহরে থাকার সব ব্যবস্থা আগে থেকেই সম্পন্ন করেছে। ইতালি আসার পর ফের সেখানে পরিবার নিয়ে চলে গেছে। তার সঙ্গটা পাওয়ার পর এবার জার্মান যাওয়া পুরোপুরি নিশ্চিত হয়। পুরো ভ্রমণে সে ছিলো সফরসঙ্গী। এই দীর্ঘ সফর কাটে ক্লান্তিহীন। এক কথায় সময়টা বেশ উৎফুল্লতায় কেটে যায়। টেরই পাইনি দুটি দিন কীভাবে চলে গেলো।
জার্মানিতে এখন শীতকাল চলছে। বিশেষ করে আগস্টের পর ঠাণ্ডার মাত্রা বাড়তে থাকে। প্রচুর ঠাণ্ডার কারণে খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাসার বাইরে যান না। দুই রাত থেকে যতটুকু বুঝলাম কর্ম আর বাসা এ দুটোর মাঝেই সীমাবদ্ধ জীবন। বিশেষ করে শীতকালে। জার্মান প্রবাসী আব্দুর রহিমের সাথে আলাপ চলে দীর্ঘদিন বিশেষ করে তাঁর আমন্ত্রণেই এবার জার্মান ভ্রমণ করা হয়। সেই সাথে বড় একটা অভিজ্ঞতা নিয়ে আসলাম হিটলারের দেশ থেকে।
একটি মজার বিষয় হলো যার সহযোগিতায় ঘোরাঘুরি সেই রহিমের বাসা এবং তাঁর কর্মস্থলের পাশ ঘেঁষে ফ্রাঙ্কফোর্টের নান্দনিক ব্রিজ এবং মাইন নদী। প্রতিদিন আকর্ষণীয় নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মাইন নদীর ব্রিজের উপর দিয়ে তাঁর কর্মে যেতে হয় আর আমি এই মাইন নদীর উপর ব্রিজ দেখতে ইতালি থেকে জার্মান গিয়েছি। শুধু আমিই নয়, আমার মতো হাজার হাজার পর্যটক মাইন নদী এবং ব্রিজ দেখতে ফ্রাঙ্কফোর্ট আসেন। পরে স্মৃতির ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ হতে ছবি তুলে রাখেন। আমার মতো অন্য কেউ। এটাই স্বাভাবিক এবং বাস্তবতা এতে অবশ্য আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ আমিও বিশ্ব বিখ্যাত সপ্তম আশ্চর্যের একটি রোমের ক্লোসিয়ামণ্ডএর কাছাকাছি বসবাস করি। এ রকম বিশ্ব বিখ্যাত ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক ক্লোসিয়াম দেখতে ২০২৩ সালে ইতালিতে ২.২ মিলিয়ন পর্যটক এসেছে। প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার দর্শনার্থীকে আকৃষ্ট করেছে রোমের ক্লোসিয়াম শুধু জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত।
সেই তুলনায় আমার কাছে ফ্রাঙ্কফোর্টে খুব বেশি দেখার মতো কিছু আছে বলে মনে হয়নি। আর যা রয়েছে তা অল্প সময়ের মধ্যে দেখা সম্ভব। একটা স্মৃতি না বললে অনুভূতির বিষয়টি অজানা থেকে যাবে। তা হলো মাইন নদীর ব্রিজের উপর যখন দাঁড়িয়ে ছিলাম চারদিকের পরিবেশ দেখে আমার মনে হলো লন্ডন টাওয়ার ব্রিজের কথা ২০১৬ সালে জানুয়ারি মাসে কনকন শীতে লন্ডন ভ্রমণ করা হয়েছিলো। মাইন নদী আর লন্ডন টাওয়ার ব্রিজের মধ্যে যে পার্থক্য আমার চোখে পড়ে তা হলো মাইন নদীর চারপাশে লন্ডন টাওয়ার ব্রিজের মত উঁচু তলার ভবন নেই। পরিবেশটি যদিও একই মনে হয়েছিল।
ফ্রাঙ্কফোর্ট যা কিছু দেখার
ফ্রাঙ্কফোর্টে দেখার মত ফ্রাঙ্কফুর্ট সাইল, রোমার ডোম, সেন্ট্রাল ট্রেন স্টেশন, ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের হেডকোয়ার্টার, মাইন নদী এবং মাইন নদীর উপর ব্রিজ ফ্রাঙ্কফুর্টের আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে অনেকের জানা। জার্মান হল ইউরোপ ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশ। এরপর ক্রমান্বয়ে ফ্রান্স ও ইতালির নাম চলে আসে। সেই ইউরোপের সেন্ট্রাল ব্যাংক জার্মানের ফ্রাঙ্কফোর্টে অবস্থিত।
আমরা ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক, মাইন নদী এবং ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকন করি অনেক সময়। পরে বিকেলে ফ্রাঙ্কফোর্ট আন্তর্জাতিক ট্রেন স্টেশন, জার্মানি ভাষায় (হাবানহোফ) যদি সংক্ষেপে বলি এখান থেকে ইউরোপের অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশে সহজে যাওয়া যায়। তাই স্থানীয়রা এই ট্রেন স্টেশন থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে খুব সহজে ভ্রমণ করতে পারেন। যার কারণে ভ্রমণপিয়াসীরা জার্মানকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে। এর আগে চিড়িয়াখানা সেটাও দেখা হয়, যা বর্ণনা করার মত নয়। আরেকটা কমন জিনিস দেখলাম তা হল মাইন নদীর উপর ব্রিজের মাঝে তালা। এটি ইউরোপিয়ানদের অন্য রকম একটা সংস্কৃতি তাদের ধারণা, যুগলবন্দীরা ঘুরতে এসে ব্রিজের উপর তালা বেঁধে রেখে গেলে অনন্ত সময় ভালোবাসা অটুট থাকবে এমন বিশ্বাস তারা লালন করে। এরকম বিশ্বাস নিয়েই প্রেমিক যুগলরা অন্য দেশ থেকে ঘুরতে এসে তালা মেড়ে আশা পূরণের প্রত্যাশা করেন।
তবে খুব ভাল লেগেছে মাসিক ভ্রাম্যমাণ মেলা এটি মাইন নদীর পাশে। আমরা তিনজন ব্রিজ পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ব্রিজ অতিক্রম করি। রাস্তার অপর পাশেই মেলা বসেছে। হরেকরকম আসবাবপত্র, খাদ্যসামগ্রীসহ নানা ধরনের পসরা দিয়ে এই ভ্রাম্যমাণ মেলা সাজানো হয়েছে। ভীষণ ভালো লেগেছে বিশেষ করে মেলার চারপাশে লোকের সমাগম এতো বেশি যে, তিল পরিমাণ জায়গা খালি ছিল না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের আনাগোনায় মনের ভিতর ভিন্ন এক আনন্দ জাগ্রত হয়। সকালে বের হয়ে আমরা যে পরিমাণ দর্শনার্থী পেয়েছি সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই দর্শনার্থীদের আনাগোনা দ্বিগুণ হয়ে যায়। স্থানটি হাউপ্টভাখে নামে পরিচিত টানা একমাস এই মেলা থাকে।
ইতালি টু জার্মানের অভিজ্ঞতা
দীর্ঘদিনে ধরে জার্মান যাওয়ার পরিকল্পনা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো কিন্তু পারিপার্শ্বিক সমস্যার কারণে যাওয়া হয়নি। এর আগেও একবার টিকেট কেটে আর যেতে পারিনি। এবার যে কোনভাবেই হোক যাওয়ার সুযোগ হয়েছে এবং বেশ ভাল লেগেছে। পাশাপাশি বিরক্ত হয়েছি বিমান বিলম্বে ছাড়ার কারণে। যাত্রাকালে শুক্রবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩ রোম থেকে হান বিমানবন্দর, রোমেই আধা ঘণ্টা বিলম্ব। অর্থাৎ যাওয়া আসা উভয় সময়ে বিমান দেরি করে ছাড়েন। যেতে আধা ঘণ্টা হলেও হান বিমানবন্দর থেকে রোম ফিউমিসিনো আসতে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্ব করে বিমান, যা রীতিমতো বিরক্ত হয়ে গিয়েছি দুজন। বিমানবন্দরে অপেক্ষা করা কত কষ্ট আর বিরক্তির মহাযন্ত্রণা তা ভাষায় প্রকাশ অসম্ভব। তবু যে আপন নীড়ে যেতে হবে। রাত বারটায় রোমে থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত রাত পৌনে দুইটা বেজে যায় রোমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছতে। বাসায় আসতে রাত তখন প্রায় তিনটা। এভাবেই আনন্দ আর বিলম্বের কষ্ট নিয়ে জার্মান ঘুরে আপন নীড়ে।
বলা যায়, এটি ভ্রমণের অস্বস্তির অংশ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তাছাড়া খুবই ব্যস্ত ছিলাম ডিসেম্বর মাসে। যেদিন আমার ফ্লাইট একই দিনে আবার কর্মস্থলে বাৎসরিক এবং বিদায় অনুষ্ঠান ছিল। কাজের শেষ সময় পর্যন্ত অনুষ্ঠান চলছে কিন্তু একই দিনে ফ্লাইট থাকায় পুরো অনুষ্ঠানে উপস্থিত কিছু সময় থাকলেও শেষ পর্যন্ত পারিনি। তবে অনুষ্ঠানের নানা আয়োজন আমাকে দারুণ মুগ্ধ করে। দুপুরে দিনার এর আগে আমাদের কোম্পানির ইনচার্জ, সহকারী ইনচার্জ ও বিয়াল্লিশ বছরের কর্মবিরতির শেষ সময়ে, অবসরে চলে যাওয়ার প্রাক্কালে ফ্রান্সেকা তার সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ সবার চোখের কোণে পানিতে টলমল। সে এক বিস্তৃত বর্ণনা। এরপর শুরু হয় ইতালিয়ান বিভিন্ন রকমের কেক বাসা থেকে তৈরি করে এনে অফিসে প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা। অফিসের পূর্বঘোষিত যার কেক যত ভাল বা খাবারের পর ভোটে যে জিতবে তাকে পুরস্কার দেয়া হবে, কিন্তু দুর্ভাগ্য এই সময়ের আগে অফিসের সবার কাছে বিদায় নিতে হয় জার্মানির উদ্দেশ্যে। তাই অফিসের পুরো আনন্দটা সবার সাথে ভাগাভাগি করে নিতে পারিনি। প্রতি বছর ডিসেম্বরে আমাদের এ রকম একটি আনন্দঘন অনুষ্ঠান উপহার দিয়ে থাকে আমার কর্মস্থল।
আসার আগের দিন জার্মান প্রবাসী সাংবাদিক হাবিব উল্লাহ বাহারের আমন্ত্রণে জার্মানির দুপুরের খাবার একই সাথে খাওয়া হয়। ফ্রাঙ্কফোর্ট শহরের মধ্যে ইস্তাম্বুলের এক রেস্টুরেন্টে ইস্তাম্বুল ফিস, মিক্স ফিস গ্রিল। খুব ভাল লাগল। দুঃখজনক জার্মানিদের নিজস্ব তেমন কোন বিখ্যাত খাবার নেই। তারা বহুজাতিক খাবার খেয়ে অভ্যস্থ। যার কারণে ইতালিয়ান রেস্টুরেন্ট জার্মানিতে খাবারের দিক দিয়ে চমক দেখায়। ইউরোপের মধ্যে খাবারের মান যাচাই করলে ইতালিয়ান বিশ্ব বিখ্যাত পিৎজা, পাস্তা আর কোথায় পাওয়া যাবে? খাবার শেষে বিদায় নিলাম বাহার ভাইয়ের সাথে। ধন্যবাদ তার প্রতি। মেয়ে অসুস্থ এরপরও তিনি আমাদের কিছুটা সময় দেন। তার জন্য কয়েকটি নান্দনিক স্থান দেখা হয়।
আন্তর্জাতিক ট্রেন স্টেশন থেকে বিদায় নিয়ে পরের দিন ইতালি আসার পথে তার সাথে দেখা করার কথা থাকলেও তা সময়ের অভাবে হয়নি। পৃথিবী গোলাকার তাই নিশ্চয়ই পরের বার দেখা হবে।
এক নজরে জার্মানের ফ্রাঙ্কফোর্ট
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ফ্রাঙ্কফোর্টে ২০২৪ সালে জনসংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৫২৯ এর আগে ১৯৫০ সালে ছিল ৫ লাখ ৩২ হাজার ৪১৩ জন। গত এক বছরে বেড়েছে ৪ হাজার ৯২ জন। বলা হয়, ফ্রাঙ্কফোর্ট হল জার্মানির হেস রাজ্যের মধ্যে বর একটি শহর। পাশাপাশি পঞ্চমতম বড় শহর পুরো জার্মানির মধ্যে। এটি বহুজাতিক সংস্কৃতির শহরও বলা হয়। বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা বসবাস করেন। এর মধ্যে ইতালি, তুর্কি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, বুলগেরিয়াসহ অনেক দেশের অভিবাসীর বসবাস। ফলে কোলাহলপূর্ণ একটি শহর হচ্ছে ফ্রাঙ্কফোর্ট। জার্মান ভ্রমণ অনেকটা আকস্মিকভাবে শেষ করা হয়। তাই অনেকের সাথে পূর্বে থেকে যোগাযোগ করা হয়নি। পরে যারা জেনেছেন জার্মানে এসেছি। এরপর বিভিন্ন শহর থেকে ফোনে, মেসেঞ্জারে দাওয়াত এবং দেখা করতে চেয়েছেন। তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। সময়স্বল্পতায় দেখা করা হয়নি এমরান হোসেন, প্রবাসী সাংবাদিক খান লিটন, ফাতেমা রহমান রুমা, কামালসহ অনেকের সাথে। সবার জন্য শুভকামনা।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইউরোপ বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব।