বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

অব্যাহত ভালোবাসা
অনলাইন ডেস্ক

দ্বিতীয় সন্তান রিমান কানাডার মন্ট্রিয়লে ছিল দেড় বছর। এই সময়ে তার ডাবল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে ঘরের ছেলে আবার ঘরে ফিরে এসেছে।

বিগত করোনা ভয়াবহতার মধ্যেও রিমানের দৃঢ় প্রত্যয় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার অফুরন্ত ইচ্ছার কারণেই তার শিক্ষাজীবনের এই পর্যায় শেষ করা সম্ভব হয়েছে বলেই আমার বিশ্বাস; যদিও কানাডায় তার অনেক লোভনীয় চাকরির অফার ছিল। তার পরও তাকে বাড়ি থেকে এত দূরে রাখতে আমাদের কারোরই মন চাইল না। তাই পরিবারের চারজনই গিয়েছিলাম সুদূর মন্ট্রিয়ল থেকে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসতে।

এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর পরই রিমান এবং আমার অতি আপনজন মাইনুর ভাইকে দেখে মনটা আনন্দে ভরে গেল। তারপর আমরা সবাই পূর্বনির্ধারিত হিলটন হোটেলে গিয়ে উঠলাম। রিমানের হোস্টেল থেকে তার লাগেজগুলোও নিয়ে এলাম। মন্ট্রিয়ল আমার পূর্বপরিচিত শহর। তার পরও যখন নিজ মনে অনুভব করলাম ছেলেটা কীভাবে এই সময়গুলো একা ওই শহরে বাস করল। কেননা বছরের অনেকটা সময় সেখানে আবার মাইনাস ৩০-৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকে। তার মানসিক অবস্থাটাও ফ্রান্সে আমার সেই প্রথম দিনগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিল।

দ্বিতীয় দিন লাঞ্চের পর সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম বাইরে বেড়াতে যাওয়ার। এমন সময় রিমান সাদা রঙের একটা খাম বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল, “আব্বা, এটা তোমার জন্য।” ওর মা পাশ থেকে অভিযোগ করল, “বাবার জন্য খাম, আর মায়ের খামটা কোথায়?” আমি একটু আশ্চর্যান্বিত হয়েই খামটা খুললাম এবং দেখতে পেলাম কানাডিয়ান ১০০ ডলারের ঝকঝকে একটা নোট।

প্রশ্ন করলাম এবং তার জবাব শুনে বিস্মিত হলাম অনেক! কারণ, রিমান যখন মন্ট্রিয়লে যায়, তখন তার পড়ালেখা ও হোস্টেল খরচ প্যারিস থেকেই ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়েছে তার মা। তাকে আন্তর্জাতিক একটা ক্রেডিট কার্ড দেয়া হয়েছিল দৈনন্দিন খরচ মেটানোর জন্য। সেই সঙ্গে জরুরি প্রয়োজনে খরচ করার জন্য সাদা একটা খামে ভরে ২০০০ কানাডিয়ান ডলারও তাকে দিয়ে এসেছিলাম।

সেগুলো থেকে খরচ করার পরও তার কাছে ১০০ ডলার এখনো রয়ে গেছে, সেটাই সে আমাকে ফেরত দিল। ছেলের এই ব্যবহারে আমি অবাক হইনি। কেননা ১৯৭৮ সালে আমিও পড়াশোনার জন্য প্যারিসে এসেছিলাম। প্রবাসের প্রথম নস্টালজিয়া অতিক্রম করার পর জীবনটাকে বাস্তবতায় উপলব্ধিতে আনতে তেমন সময় লাগেনি। নিজে কাজ করে, আয় করে পড়াশোনা ও প্রয়োজনীয় খরচ মেটানোর একটা দৃঢ় সংকল্প ছিল আমার।

তাই জীবনের প্রথম চাকরি পেয়ে গিয়েছিলাম একটা ছোট্ট দোকানে। সেখানে কাজ ছিল ক্রেপস (একধরনের ফরাসি পিঠা) ও মারোঁ (একধরনের ইউরোপিয়ান নাটস) বিক্রি করা। জীবনে প্রথম অর্থ আয়ের যে আনন্দ, সেটা মনে হলে এখনো হৃদয়ে শিহরণ জাগে।

প্রবাসজীবনের নানা বাস্তবতায় মনের মধ্যে বিশেষ একটা অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষত মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আরও শতগুণ বেড়ে গিয়েছিল। ভাবতে শিখেছিলাম, পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্য আর সন্তানের মঙ্গল কামনায় মা-বাবার অবিরাম প্রচেষ্টার কারণেই আজ আমরা আমাদের পথ চিনতে পেরেছি। তাই প্রথম আয়ের ১২০ মার্কিন ডলারের একটা চেক প্যারিস অপেরার নিকটবর্তী আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংক থেকে ড্র করে তা পাঠানোর আগে বাবার কাছে আবেগময় একটা চিঠি লিখেছিলামণ্ড

মা ও বাবা,

সালাম নেবেন। আমার প্রবাসী ছাত্রজীবনের এই প্রথম আয় আপনাদের জন্য নিবেদন করলাম। আপনাদের ইচ্ছামতো খরচ করলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব। আজকের দিনটা আমার জীবনের এক উল্লেখযোগ্য দিন। এর জন্য মহান করুণাময়ের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

চেকটা একটা খামের মধ্যে ভরে রাস্তায় নেমে পড়লাম। অ্যাভেনিউ অপেরা, লুভর মিউজিয়াম, প্লাস দু লা কনকর্ড, শঁজে লিজে, আর্ক দু ট্রিয়ম্ফ ও আইফেল টাওয়ার হয়ে স্যেন নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে আবার লুভর মিউজিয়ামের পাশে রু মলিয়ের পোস্ট অফিসে এসে পৌঁছলাম।

চিঠিটা আবারও শেষবারের মতো পড়লাম এবং তা বন্ধ করে লেটার বক্সে ফেলে দিলাম।

তাই নিজের সন্তানের কাছ থেকে একই রকম ব্যবহার পেয়ে তেমন অবাক হইনি, বরং দীর্ঘদিন পর সেই পুরোনো স্মৃতি আমার হৃদয়কে আন্দোলিত করেছে। মানুষের জীবনটাই তো অনেক সময় অনেক ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়