প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
দেহের যত্নে সুস্থ মন
পার্থিব মানুষ কখনো হরষে উৎফুল্ল, কখনো বিষণ্ণতায় নীল। আবার কখনো বিষণ্ণতা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে প্রাণচঞ্চল-এটাই জীবনের স্বাভাবিক গতি। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়েই হর্ষ-বিষাদের নাগরদোলা জীবনের মূল ছবি। কিন্তু যখন কোনো ব্যক্তি ক্রমাগত বিষণ্ণতা বা হতাশায় ভুগতে ভুগতে জীবনের সকল আয়োজনে অনুপস্থিত থাকেন তখন তা স্বজনমাত্রকেই উদ্বেগাক্রান্ত করে। এই ক্রমাগত বিষণ্ণতা স্বাভাবিক জীবনের ছবি নয়। এই ক্রমাগত বিষণ্ণতা কোনো রোগ নয় যদিও, তবুও বিষণ্ণতাকে নিয়েই আজ মনোনিবেশ-যাতে জীবনের রঙ কখনো হারিয়ে না যায়।
মুখ্য বিষণ্ণতা বিভ্রাট কী?
মুখ্য বিষণ্ণতা বিভ্রাট একটি মানসিক বিভ্রাট, যাতে বিকৃত এবং দীর্ঘদিনের হীনমন্যতা ও মানসিকভাব বজায় থাকে। মুখ্য বিষণ্ণতা বিভ্রাটে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের সম্পর্কে নিম্নধারণা পোষণ করে এবং স্বাভাবিকভাবে উপভোগ্য জীবনের উপাদানগুলোতে আগ্রহ বা আনন্দ হারিয়ে ফেলে। ১৯৮০ সালে এই ধরনের এক ঝাঁক উপসর্গকে মার্কিন মনোরোগবিদ সমিতি রোগ নিরূপণী গ্রন্থে ডিপ্রেশান বা বিষণ্ণতা নামকরণ করেছেন।
মুখ্য বিষণ্ণতা বিভ্রাট আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবার, কর্মণ্ডপরিবেশ, নিদ্রা ও আহার এবং সাধারণ স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুখ্য বিষণ্ণতা বিভ্রাটে আক্রান্ত ব্যক্তির ৩.৪% ভাগ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় এবং মোট আত্মহত্যাকারীর ৬০% ভাগই দেখা যায় বিষণ্ণতার কারণে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
রোগ নিরূপণ
রোগীর নিজ বর্ণনায় অভিজ্ঞতা, স্বজনের বর্ণিত আক্রান্তের আচরণ-ত্রুটি, বন্ধুদের বর্ণিত অসামঞ্জস্যতা এবং মানসিক স্তর পরীক্ষণ-এর মাধ্যমে মুখ্য বিষণ্ণতা বা মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার নিরূপিত হয়।
রোগ নিরূপণের কোনো ল্যাবরেটরী পরীক্ষা নেই, যদিও রোগীর সাধারণ অবস্থা মূল্যায়নে কিছু পরীক্ষণ চিকিৎসকরা করিয়ে থাকেন।
মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হওয়ার সময়
সাধারণত ২০ বছর হতে ৩০ বছরের মধ্যে যাদের বয়স তারাই অধিক হারে মেজর ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত হয়। তবে ৩০ বছর হতে ৪০ বছরের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার হারও খুব একটা কম নয়।
চিকিৎসা
* আদর্শগতভাবে বিষণ্ণতাবিরোধী ঔষধ প্রদান করে এর চিকিৎসা করা হয়।
* কারও কারও ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপী কিংবা কাউন্সেলিং প্রয়োজন হয়।
* যেসব রোগীর ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি, নিজের কিংবা অন্যের, সেসব ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিতে হয়।
* খুব অল্পসংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোকন্ভালসিভ থেরাপী দিতে হয়।
রোগের পরিণাম
রোগটি এক দফায় উদ্ভব হয়ে এক সপ্তাহ এমনকি জীবনভর বজায় থাকতে পারে। কিংবা কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুনঃআবির্ভূত হতে পারে। বিষণ্ণতাতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জীবন-দৈর্ঘ্য অবিষণ্ণ ব্যক্তিদের চেয়ে কম।
বিষণ্ণতার ইতিহাস
শতাব্দী ধরে বিষণ্ণতার প্রকৃতি নিরূপণে অধ্যয়ন চলে আসছে। লব্ধ জ্ঞান এখনও অপূর্ণ। তবুও বিষণ্ণতার পেছনে মানসিক, মনোসামাজিক, বংশগত ও বিবর্তন এবং জীববিদ্যাগত নিয়ামকের সংশ্লিষ্টতা অনুধাবন করা গেছে। মাদকাসক্তি বিষণ্ণতাকে আরও অনিরাময়যোগ্য করে তোলে।
বিষণ্ণতার লক্ষণাবলি
* মনোগতির নিম্নভাব
* আনন্দ বোধ করার সামর্থ্যরে ঘাটতি
* অথর্ব ভাবনায় নিরন্তর হীনমন্যতায় ভোগা
* অযৌক্তিক অপরাধবোধ বা অনুশোচনা
* আশাহীনতা
* নিশ্চেষ্টতা
* নিজেকে নিজ অকারণ ঘৃণা করা
* রোগ গভীর হলে ডিল্যুশান ও হ্যালুসিনেশানে ভোগা
* দুর্বল স্মৃতিশক্তি
* একাগ্রতার ঘাটতি
* অনিদ্রা
* যৌনাবেগ হ্রাস পাওয়া
* সামাজিক কর্মকাণ্ড হতে দূরে থাকা
* অতি দ্রুত নিদ্রাউত্থান
* অতি নিদ্রা
* মাথাব্যথা, ক্লান্তি, শ্রান্তি
* খাদ্যে অরুচি
* অতিরিক্ত ওজন হ্রাস
* অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি
* স্বাভাবিক কর্মে ধীরতা
বিষণ্ণতা হতে মুক্তির উপায়
* নিয়মিত খেলাধুলা করা
* পারিবারিক ও সামাজিক উৎসব-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা
* মাদককে না বলা
* নিঃসঙ্গতা পরিহার করা
* জাগতিক ঘটনাগুলোতে তীব্র আবেগ ধারণ না করা।