প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
মস্তিষ্কের কোষগুলো বিকল হতে শুরু করলেই আলঝেইমার্স দেখা দেয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এটা-ওটা ভুলে যাওয়া দিয়ে শুরু হয় এর উপসর্গ। এটা বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, রোগীর পক্ষে একা একা স্বাভাবিক জীবনযাপনই অসম্ভব হয়ে পড়ে। আচরণেও আসে নানা পরিবর্তন। এ রোগের প্রকোপ বিশ্বে দিন দিন বেড়ে চলেছে। নিউরোলজিস্টদের আশঙ্কা, ডিজেনেরেটিভ রোগটি ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি ৮৫ জন ষাটোর্ধ্ব মানুষের মধ্যে একজনকে আক্রান্ত করবে।
উপসর্গ
আলঝেইমার্স রোগে ধীরে ধীরে স্মৃতি লোপ পাবে। চেনা মানুষের নাম ভুলে যাওয়া, পরিচিতি রাস্তা হারিয়ে ফেলা, প্রয়োজনীয় জিনিসের কথা মনে না থাকা হলো প্রধান লক্ষণ। সামাজিকভাবে সক্রিয় ও সম্পর্কগুলোও ফিকে হতে থাকে এতে। রোগী গুছিয়ে কথা বলতে পারে না। ঠিকভাবে লিখতে বা পড়তেও পারবে না। এসব দেখা দিলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে দ্রুত।
আবার আচমকা মেজাজ বদলে যাওয়া, পরিচিত এবং ঘনিষ্ঠদের ওপর অকারণে রাগ করাও এর লক্ষণ। রোগীর মধ্যে বেড়ে যায় সন্দেহ প্রবণতা, উদ্বেগ, অবসাদ।
আলঝেইমার্স কেন হয়
* এ রোগের তিনটি ধাপ। প্রাথমিক ধাপে রোগ ধরা পড়লে রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে যায় না। শেষ ধাপে ধরা বিশেষ কিছু করার থাকে না। তখন স্রেফ যত্নআত্তিই ভরসা। তখন রোগী অনেক পরিচিত মানুষকেও চিনতে পারেন না, ঘন ঘন মুড সুইং হয় এবং অনেকে বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিজের ঠিকানা ভুলে যান।
* রোগটির নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা জানান, মস্তিষ্কের নার্ভ কোষগুলো নষ্ট হলে এর লক্ষণ দেখা দেয়। প্রোটিন ডিপোজিট কিংবা কোনো ধরনের অসুস্থতা থেকে এবং জিনগত বা অনিয়মিত, জীবনযাত্রা থেকেও মস্তিষ্কের কোষে প্রভাব পড়ে।
এর মধ্যে কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর আছে-
* সামাজিক-অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে জীবন কাটানো।
* বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন ও দুর্বল সামাজিক সম্পর্ক।
* মস্তিষ্কের যথোপযুক্ত ব্যায়াম না করা।
* প্রবল বিষণ্ণতায় ভোগা।
* হাইপারটেনশন ও ব্লাড সুগারের মতো ভাসকুলার রিস্ক ফ্যাক্টর যা মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমায়। এতেও দেখা দেয় ডিমেনশিয়া।
প্রতিরোধ
আপাতত নিরাময় আবিষ্কার না হলেও সুশৃঙ্খল খাদ্যাভ্যাস ও সুন্দর সামাজিক জীবনযাপনে এ রোগটা ঠেকিয়ে রাখা যায় অনেক দিন। বিশেষ করে মস্তিষ্কের জন্য উপকারী ও শরীরের মুড ঠিক রাখবে এমন খাবারে নজর দেওয়া উচিত।
ডায়েটে বেশি যোগ করুন শাকপাতা। নিয়মিত খেতে হবে সবুজ সবজি। এগুলো ব্রেনের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব খাবারে আছে ভিটামিন বি-৯ বা ফোলেট, যা ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়।
ডার্ক চকলেট : চকলেট কে না ভালোবাসে। তবে চিনিযুক্ত চকলেট নয়, ডার্ক চকলেটই পারবে আপনার হার্ট ও মগজের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে। এটি হতাশা দূর করে মুড ভালো রাখে বলে মানুষ অবসাদে পড়ে না। এক গবেষণা রিপোর্টে রীতিমতো চকলেটকে আলঝেইমার্সের দাওয়াই দাবি করা হয়েছে। মার্কিন গবেষক গিউলিও মারিয়া পাসিনেত্তি জানান, ডার্ক চকলেটে আছে পলিফেনলস। এটি এক ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস।
কফি : পরিমিত মাত্রার কফি পান করলেও আলঝেইমার্সের ঝুঁকি অনেকটা কমে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে কফি। তবে সেটা খেতে নিয়ম মেনে ও পরিমিত মাত্রায়। সন্ধ্যার পর কফি খেয়ে রাতের ঘুম নষ্ট করলে হিতে বিপরীত হবে।
ফল ও সামুদ্রিক মাছ : আলঝেইমার্সের ভালো দাওয়াই হলো বেরিজাতীয় ফল। স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, রাসবেরি—এসবে প্রচুর স্বাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে, যা সরাসরি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। তালিকায় আছে সামুদ্রিক মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। খেতে পারেন টুনা, ম্যাকরেলও।
মগজের ব্যায়াম : খাবারের পাশাপাশি চালিয়ে যেতে হবে মগজের ব্যায়াম। নিয়মিত বই পড়া ও লেখালেখির চর্চা থাকলে তো কথাই নেই। সেইসঙ্গে সমাধান করুন ক্রসওয়ার্ড পাজলগুলোর। উন্নত বিশ্বে পত্রিকায় ছাপা হওয়া শব্দজটকেও দেখা হয় মস্তিষ্কের দারুণ ব্যায়াম হিসেবে। এছাড়া সামাজিক কর্মকাণ্ডে যোগ দিন নিয়মিত। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন। রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে ভাবুন ও নিজের মতামত জানান।
আলঝেইমার্সের স্থায়ী প্রতিকার নেই। তাই এ রোগে আক্রান্তদের সুস্থ রাখতে এগিয়ে আসতে হবে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে। আন্তরিক যোগাযোগ এবং সামাজিক মেলামেশায় সুস্থ রাখতে হবে রোগীকে।