প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
জীবনধারায় পরিবর্তন ও খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করার মাধ্যমে সুস্থ থাকা যায়। তাই স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্যে নেওয়া যেতে পারে বেশ কিছু সংকল্প।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা : শারীরিকভাবে সুস্থ বোধ করলেও প্রতি বছর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। সুস্থতার জন্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিকল্প নেই। এতে করে স্বাস্থ্য সমস্যা বড় আকার ধারণের আগেই শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা সম্ভব।
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া : প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফল ও শাক-সবজি থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ফল ও শাক-সবজিতে ক্যালোরি ও চর্বি কম থাকে, ফাইবার বেশি থাকে এবং এগুলো ভিটামিন ও খনিজের ভালো উৎস।
ওজন কমানো : ওজন কমাতে চাইলে স্বাস্থ্যকর খাবার খান ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ওজন কমার সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের ঝুঁকি কমতে শুরু করে। উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন যদি বেশি হয়ে থাকে, তাহলে সুস্বাস্থ্যের জন্য ওজন কমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অলসতা দূর করা : নিয়মিত ব্যায়াম করার পাশাপাশি শরীরকে সার্বক্ষণিক সক্রিয় রাখার জন্য অলসভাবে শুয়ে-বসে সময় কাটানো এড়িয়ে চলা উচিত। দৈনন্দিন কাজে ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমেই যা সম্ভব। শারীরিকভাবে যত বেশি সক্রিয় থাকতে পারবেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ততটাই ভালো বোধ করবেন।
পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন : ভালো ঘুম রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও মানসিক সুস্থতা বাড়ায়। আরামদায়ক ঘুমের জন্য রুটিন তৈরি, ঘুমানোর আগে মোবাইল বা টেলিভিশন দেখার সময় কমানো এবং ভালো ঘুমের পরিবেশ তৈরি প্রয়োজনীয় বিষয়।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ : দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলে। তাই এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় বের করতে হবে নিজেকেই।
সর্দি-কাশি ও ফ্লু হলে করণীয় কী?
ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বিশেষ করে শীত ও বসন্তকালে সর্দি-কাশি ও ফ্লু-এর সমস্যাগুলো বেড়ে যায়। কিছু নিয়ম মেনে চললে ঘরে বসেই সুস্থতা অর্জন করা যায়। সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমানো যায়।
ফ্লু ও সর্দি-কাশি বা ঠাণ্ডার লক্ষণগুলো হলো :- ফ্লু ও সাধারণ সর্দি-কাশির লক্ষণ প্রায় একই রকম। তবে সাধারণ সর্দি-কাশির তুলনায় ফ্লু-এর লক্ষণগুলোর তীব্রতা বেশি হতে পারে এবং সেরে উঠতেও বেশি সময় লাগতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো লক্ষণগুলো বড়দের তুলনায় বেশিদিন ধরে থাকতে পারে।
কীভাবে বুঝবো ফ্লু হয়েছে না কি সর্দি-কাশি?
ফ্লুতে শিশুদের ক্ষেত্রে জ্বরের পাশাপাশি ডায়রিয়া ও বমির সমস্যা বেশি দেখা যায়। সেই সাথে শিশুর কান ব্যথা হতে পারে এবং চঞ্চলতা কমে যেতে পারে। সুস্থতার জন্যে ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা নেয়া যেতে পারে। এজন্যে বিশ্রাম নিন ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান। শরীর উষ্ণ রাখুন। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। পানির পাশাপাশি তরল খাবারও উপকারী। যেমন : ফলের জুস, চিড়া পানি, ডাবের পানি, স্যুপ, ইত্যাদি। গলা ব্যথা উপশমের জন্যে লবণ মিশিয়ে কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করুন।
কাদের জন্য ফ্লু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ
যে কেউই ফ্লুতে আক্রান্ত হতে পারেন এবং ফ্লু সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগতে পারেন। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ফ্লু হওয়ার পর ভোগার সম্ভাবনা বেশি। যেমন- ৬৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ব্যক্তি, গর্ভবতী নারী, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, ইতোমধ্যে কোনো রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তি- এমন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ফ্লু-এর ভ্যাক্সিন নিতে পারেন। আর ফ্লু থেকে বাঁচার উপায়গুলো মেনে চলবেন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের উপায় কী?
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ফলে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী খাদ্যাভাস ও জীবনধারা। হাইপার টেনশন (উচ্চ রক্তচাপ) ও হাইপো টেনশন (নিম্ন রক্তচাপ)-এর মধ্যে হাইপার টেনশনের সমস্যাই বেশি দেখা যায়।
শুধু ওষুধ খেলেই চলবে না, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে শরীরচর্চাও করতে হবে নিয়ম করে।
পানিশূন্যতা পূরণে কী করণীয়?
শীতকালে অনেকেই পানিশূন্যতায় ভোগেন। যা অনেকেই প্রাথমিক অবস্থায় টের পান না। এ কারণে দীর্ঘদিন পানির ঘাটতি মারাত্মক শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে। এমনকি পানিশূন্যতার কারণে কিডনি বিকলও হতে পারে। এছাড়া প্র¯্রাবে ইনফেকশনও দেখা দিতে পারে। এজন্যে মাথাব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, ইউরিন ইনফেকশন, কোষ্ঠকাঠিন্য, দুর্বলতা, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, ওজন বেড়ে যাওয়া, কিডনির বিকল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গলা শুকিয়ে যায় কেনো?
গলা শুকিয়ে যাওয়াকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে জিরোস্টোমিয়া। এ সমস্যার ফলে আমাদের মুখের ভেতরের লালা শুকিয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি এমন মারাত্মক আকার ধারণ করে যে কথা বলা বা ঢোক গিলতেও কষ্ট হয়। বিভিন্ন কারণে গলা শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। ঠিক কী কারণে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, সেটি আগে জানতে হবে। কিছু কিছু ওষুধ খেলে গলা শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। যেমন : অবসাদ, উদ্বেগ, ব্যথা কমানো ও পেশি শিথিল করার ওষুধ খেলে গলা শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এসব ওষুধ খাওয়ার পর যদি গলা শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা শুরু হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দিলেও গলা শুকিয়ে যায়। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদেরও গলা শুকিয়ে যেতে পারে। এছাড়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে যে ওষুধ খাওয়া হয়, তা থেকেও এমন হতে পারে।
গলা শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। সেগুলো হলো- মুখের মধ্যে আঠালো ও শুষ্ক অনুভূতি হওয়া। বারবার পানির পিপাসা পাওয়া। মুখের মধ্যে ফুসকরি ওঠা। ঠোঁটে ফাটল দেখা দেওয়া। শুষ্ক, লাল, আঁচড় কাটা জিহ্বা হওয়া। কথা বলতে, খাবার চিবাতে ও গিলতে সমস্যা হওয়া। নাকের ছিদ্রের ভেতরের অংশ শুকিয়ে যাওয়া। নিঃশ্বাসে গন্ধ অনুভূত হতে পারে।
পাইলস থেকে মুক্তির উপায় কী?
পাইলসকে চিকিৎসার ভাষায় হেমোরয়েড বলা হয়। অনিয়মিত জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাসের কারণে পাইলস হতে পারে। এটি এমন একটি রোগ যাতে মলদ্বারের ভেতরে ও বাইরের শিরাগুলো ফুলে যায়। আবার মলদ্বারের ভেতরে ও বাইরের অংশে কিছু মাংস জমা হয়। এসব মাংসপি- থেকে রক্তপাতের পাশাপাশি প্রচণ্ড ব্যথা হয়। বিশেষত খুব গরম ও মসলাদার খাবার খেলে এ সমস্যা হয়। একই সঙ্গে পরিবারের কারো যদি এ সমস্যা থাকে, তাহলে পরবর্তী প্রজন্মেও রোগটি স্থানান্তরিত হয়।
পায়ুদ্বারের ভেতরে অনেকগুলো শিরা থাকে। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে সেই শিরা সাধারণত ফুলে যায়। তারপর ওই স্থান শক্ত হয়ে ছিঁড়ে যায় ও রক্তপাত হয়। এ সমস্যারই নাম পাইলস বা হেমোরয়েডস। রক্তপাতই এ অসুখের প্রধান ও অন্যতম লক্ষণ।
সাধারণত মলত্যাগের সঙ্গেই রক্তপাত হতে থাকে। এছাড়া ব্যথাও হয় অনেকের। তবে সবারই যে অসহ্য যন্ত্রণা হয় তা কিন্তু নয়। এক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগ ধরা পড়লে সহজেই সমস্যার সমাধান করা যায়।
কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে পারলেই পাইলসের সমস্যা কমবে। আর ঘরোয়া উপায়ে পাইলসের সমস্যার সমাধান করতে কয়েকটি নিয়ম মানতে হবে। সেগুলো হলো- পানি পান করুন। অনেকেই দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করেন না। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। তাই পানি পান করতেই হবে। শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে পারলে অনেক রোগেরই ঝুঁকি কমবে।
সুস্থ থাকতে হলে ব্যায়াম করতেই হবে। ব্যায়াম করলে অন্ত্রের চলন ঠিক থাকে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকতে পারবেন। দিনে অন্ততপক্ষে ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করুন। পাইলসের রোগীদের অবশ্যই ফাইবার বা আঁশজাতীয় খাবার খেতে হবে। ফাইবার মল নরম করতে ও নিয়মিত মলত্যাগে সাহায্য করে। এসব নিয়ম মেনেও যদি পাইলসের সমস্যা না কমে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খেতে হবে।
প্রশ্নগুলো পাঠিয়েছেন-
গাজী মোঃ মুসা
শাহতলী, চাঁদপুর
-পরামর্শ দিয়েছেন
ডাঃ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
এমবিবিএস, বিসিএস, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, চাঁদপুর।