প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
গেজ কী?
গেজ বা অ্যানাল ফিশার আসলে কী? আমাদের পায়খানার রাস্তার বাইরের দিকে দুই ইঞ্চির মতো জায়গা খুব স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল। একে বলা হয় অ্যানাল ক্যানাল। এর সংবেদনশীলতার কারণে একে বিকৃত যৌনতার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
এটি এক গুরুতর রোগ। প্রচুর মানুষ এই অসুখে আক্রান্ত। তাই গেজ নিয়ে মানুষকে সতর্ক হওয়া জরুরি। কারণ প্রথমাবস্থায় চিকিৎসা হলে এই রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া যায় সহজেই।
অর্শ (Piles) রোগটির ক্ষেত্রে পায়খানার সময় রক্ত বের হয়। কিন্তু শুধু এই রোগটি নয়, এর পাশাপাশি Fissure, Fistula -এর ক্ষেত্রেও রক্ত (Bleeding) বের হতে পারে। এমনকী রোগ লক্ষণও থাকে কিছুটা একই। তাই মানুষ সহজে বুঝতে পারেন না যে কী অসুখ হয়েছে। তাই সেই সম্পর্কে জেনে নেয়া খুবই জরুরি।
আসলে এই রোগগুলোর ক্ষেত্রে রক্ত পড়াটা কমন বিষয়। তাই বেশির ভাগ মানুষ বুঝতেই পারেন না সমস্যা সম্পর্কে। আসলে আমাদের মলদ্বারের ভেতরে থাকে কিছু রক্তনালী। এই রক্তনালী কোষ্ঠকাঠিন্যের (Constipation) জন্য প্রথমে ফুলে যায়। তারপর তা ফেটে রক্ত বের হতে পারে। এই সমস্যার নামই অর্শ। কিছু ক্ষেত্রে ব্যথা হয়। তবে ব্যথা সবসময় থাকে না। এটাই হল পাইলসের লক্ষণ (Piles Symptoms)। এবার এমন উপসর্গে সতর্ক হয়ে যান।
ফিসার কী?
অনেক মানুষের খুবই কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এক্ষেত্রে শক্ত মলের জন্য পায়খানা করার সময় মলদ্বারের ভেতরের অংশ কেটে যায়। খুব জ্বালা, যন্ত্রণা থাকে। রক্ত বের হয়, তবে কম (Fissure Symptoms)। এই সমস্যার নাম হল ফিসার। তাই প্রতিটি মানুষকে অবশ্যই এই বিষয়টি নিয়ে সতর্ক হয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে চিকিৎসা হলে সহজেই সমস্যা মেটানো সম্ভব।
ফিসচুলা কী?
এক্ষেত্রে মলদ্বারের ভেতরে হয় ঘা। এটা যে কোনও মানুষের হতে পারে। এক্ষেত্রে ঘা মলদ্বারের ভেতরে শুরু হলেও তা বাইরে পর্যন্ত ফুটো করে দেয়। এবার সেই জায়গা থেকে ঘা-পুঁজ বের হতে থাকে। এক্ষেত্রে প্রচণ্ড জ্বালা, যন্ত্রণা থাকে। পাশাপাশি পুঁজ ও রক্ত বের হয় (Fistula Symptoms)। এই সমস্যার নামই ফিসচুলা।
কীভাবে রোগ নির্ণয়?
এই রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে প্রথমে রোগীর কথা শুনতে হয়। তিনিই জানিয়ে দেন যে সমস্যা ঠিক কোথায় ও কেন হচ্ছে। এভাবে চিকিৎসক একটা অনুমান করে নেন। তবে আরও নিশ্চিত হতে চাইলে প্রকটোস্কোপ যন্ত্রের সাহায্যে করা হয়ে থাকে পরীক্ষা। তাতে সহজে বোঝা যায়।
চিকিৎসা কী?
এক্ষেত্রে পাইলস ও ফিসারের সমস্যায় প্রথমদিকে এলে ওষুধেই কাজ হয়। এক্ষেত্রে কিছু লাগানোর ওষুধ ও পায়খানা নরম করার ওষুধ দেওয়া হয়। এভাবেই সমস্যার সমাধান করা হয়ে যায় সম্ভব। তবে পরের দিকে আসলে সার্জারি করা ছাড়া উপায় থাকে না।
জীবনযাত্রা
এই সকল রোগের ক্ষেত্রে পায়খানা যাতে শক্ত না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই ভালো করে পানি পান করুন। দিনে ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ হল মাস্ট। এছাড়া আপনাকে চেষ্টা করতে কাঁচকলা, রেডমিট যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার। তবেই তো আপনি ভালো থাকতে পারবেন। নইলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। তাই চিন্তা করতে হবে।
অর্শের সঠিক কারণ জানা না গেলেও নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ অর্শ হওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে
১. দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া।
২. শাকসব্জী ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি কম খাওয়া।
৩. শরীরের অতিরিক্ত ওজন।
৪. গর্ভাবস্থা।
৫. লিভার সিরোসিস।
৬. মলত্যাগে বেশি চাপ দেয়া।
৭. অতিরিক্ত মাত্রায় লেকজেটিভ (মল নরমকারক ওষুধ) ব্যবহার করা বা এনেমা (শক্ত মল বের করার জন্য বিশেষ তরল মিশ্রণ ব্যবহার করা) গ্রহণ করা।
৮. টয়লেটে বেশি সময় ব্যয় করা।
৯. বৃদ্ধ বয়স।
১০. পরিবারে কারও পাইলস থাকা।
১১. ভার উত্তোলন, দীর্ঘ সময় বসে থাকা ইত্যাদি।
অর্শ বা পাইলস কীভাবে বুঝব (অর্শের লক্ষণসমূহ) :
মলদ্বারের অভ্যন্তরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে :
১. পায়খানার সময় ব্যথাহীন রক্তপাত হওয়া।
২. মলদ্বারের ফোলা বাইরে বের হয়ে আসতে পারে, না-ও পারে। যদি বের হয় তবে তা নিজেই ভেতরে চলে যায় অথবা হাত দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া যায়। কখনও কখনও এমনও হতে পারে যে, বাইরে বের হওয়ার পর তা আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায় না বা ভেতরে প্রবেশ করানো গেলেও তা আবার বের হয়ে আসে।
৩. মলদ্বারে জ্বালাপোড়া, যন্ত্রণা বা চুলকানি হওয়া।
৪. কোনো কোনো ক্ষেত্রে মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।
মলদ্বারের বাইরে হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে :
১. মলদ্বারের বাইরে ফুলে যাওয়া যা হাত দিয়ে স্পর্শ ও অনুভব করা যায়।
২. কখনও কখনও রক্তপাত বা মলদ্বারে ব্যথাও হতে পারে।
অর্শ বা পাইলস রোগে করণীয়
১. কোষ্ঠকাঠিন্য যেনো না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং নিয়মিত মলত্যাগ করা।
২. পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসব্জি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া এবং পানি (প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস) পান করা।
৩. সহনীয়মাত্রার অধিক পরিশ্রম না করা।
৪. প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো।
৫. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।
৬. টয়লেটে অধিক সময় ব্যয় না করা।
৭. সহজে হজম হয় এমন খাবার গ্রহণ করা। যেমন : আঁশযুক্ত খাবার, শাকসবজি ইত্যাদি।
৮. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া লাক্সেটিভ বা রেচক ঔষধ বেশি গ্রহণ না করা।
৯. মলত্যাগে বেশি চাপ না দেয়া।
১০. দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া থাকলে তার চিকিৎসা নেয়া।
কী খাবো
শাকসব্জি, ফলমূল, সব ধরনের ডাল, সালাদ, দধি, পনির, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, লেবু ও এ-জাতীয় টক ফল, পাকা পেঁপে, বেল, আপেল, কমলা, খেজুর, ডিম, মাছ, মুরগির মাংস, ভূষিযুক্ত (ঢেঁকি ছাঁটা) চাল ও আটা ইত্যাদি।
কী খাবো না
খোসাহীন শস্য, গরুর মাংস, খাসির মাংস ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার, মসৃণ চাল, কলে ছাঁটা আটা, ময়দা, চা, কফি, মাখন, চকোলেট, আইসক্রীম, কোমল পানীয়, সব ধরনের ভাজা খাবার, যেমন : পরোটা, লুচি, চিপস ইত্যাদি।