প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৩, ০০:০০
মানবদেহে প্রোটিনের চাহিদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই চাহিদা পূরণে আমরা মাংস আহার করি। একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক পুরুষের প্রোটিন লাগে দৈনিক ৭০-৮০ গ্রাম এবং একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক নারীর ক্ষেত্রে তা ৫০-৬০ গ্রাম। গুহাবাসী মানুষ প্রথমে শিকার করা প্রাণীর কাঁচা মাংস খেতো এবং পরে আগুন আবিষ্কারের ফলে তা পুড়িয়ে খেতো। সভ্যতার ক্রমোৎকর্ষের সাথে সাথে মানুষ মাংস সেদ্ধ করে বিভিন্ন মশলা তাতে যোগ করে তাকে রসনার জন্যে উপযোগী করে আস্বাদন করে। কিন্তু সব মাংস মানুষের শরীরের জন্যে স্বাস্থ্যকর নয়। সাদা মাংস যেমন : মুরগির মাংসে মানুষের খুব একটা স্বাস্থ্য হানির শঙ্কা নেই কিন্তু লাল মাংস যেমন : গরু,খাসী, ভেড়া ইত্যাদির মাংসে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা মতে দিনে তিন আউন্স হিসেবে সপ্তাহে একুশ আউন্স লাল মাংস খাওয়া যায় যা স্বাস্থ্যের জন্যে নিরাপদ।
অতিরিক্ত লাল মাংস আহারে মানুষের বেশকিছু রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন :
১. রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া
২. করোনারি আর্টারি ডিজিজ বা হৃদপিন্ডের রক্তনালীর প্রবাহপথ সঙ্কুচিত হয়ে আসা
৩. উচ্চ রক্তচাপ
৪. স্ট্রোক
৫. টাইপ-২ ডায়বেটিস
৬. কোলোরেক্টাল ক্যান্সার বা পায়ুপথের ক্যান্সার
লাল মাংস বা রেডমিটে কোলেস্টেরল, ট্রাই-গ্লিসারাইড, স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড ও লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন বা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে। এর ফলে রক্তে হাইপারকোলেস্টেরলেমিয়া দেখা দেয়। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। রক্তনালীতে চর্বি জমার কারণে স্ট্রোক এবং মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক হয়। রেড মিটে কার্সিনোজেনের উপস্থিতির কারণে ক্ষুদ্রান্ত ও বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার দেখা দেয়। টাইপ-২ ডায়বেটিস বা নন ইনসুলিন ডিপেন্ডেন্ট ডায়বেটিস হতে পারে। অল্প পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট এবং দৈহিক স্থূলতাও দেখা দিতে পারে।
যারা দৈনিক নব্বই গ্রামের বেশি লাল মাংস খান, তাদের হৃদরোগে মৃত্যুঝুঁকি ১৫ শতাংশ, ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি ১১ শতাংশ এবং বৃহদন্ত্র ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ১৭ শতাংশ বেশি।
কাজেই যারা স্বাদের জন্যে বা রসনা নিবৃত্তির জন্যে লাল মাংসে হামলে পড়েন, তাদের জন্যে সতর্কতা বার্তা রইল। দেখা গেছে, যারা রেগুলার মেজবান খান তারাই হৃদরোগের ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। প্রোটিনের চাহিদা মিটাতে মাছের উপর জোর দিতে হবে। এতে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থাকবে না।
যাদের লাল মাংস খাওয়ার প্রবণতা বেশি তারা প্রতিদিন ৭৫ মিগ্রা অ্যাস্পিরিন এবং ৫ মিগ্রা রসুভাস্টেটিন ঔষধ সেবন করতে পারেন। তাহলে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হতে রেহাই পাওয়া যেতে পারে।