প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩, ০০:০০
আমাদের দেশে বেশ কম দামে তামাকজাত দ্রব্য কিনতে পাওয়া যায়। তাই দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার বেশি। সাধারণত দুভাবে তামাকের ব্যবহার হয়। ধূমপানের মাধ্যমে এবং ধোঁয়াবিহীন উপায়ে। পুরুষরা ধূমপান বেশি করলেও ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের হার নারীদের মধ্যে বেশি। ধূমপান শুধু ব্যবহারকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে না, উপরন্তু যারা আশপাশে থাকে তারাও বিভিন্ন ঝুঁকিতে থাকে।
ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য যেমন, জর্দা, গুল, সাদাপাতা ইত্যাদি ফুসফুসের অপূরণীয় ক্ষতি করে। ৩০ ধরনের ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক রয়েছে তামাক পাতায়। এর মধ্যে বিশেষ ধরনের নাইট্রোস্যামিন পাওয়া যায়, যা ফুসফুস ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে প্রমাণিত হয়েছে। ফুসফুস ছাড়াও মুখগহ্বর, গলনালি এবং পাকস্থলী ক্যান্সারের জন্যও দায়ী এ ধোঁয়াবিহীন তামাক।
ক্যান্সার ছাড়া ধূমপানে অন্য যেসব রোগ হয়, সেগুলো হচ্ছে হাই ব্লাডপ্রেশার, স্ট্রোক, এনজিনা পেকটোরিজ, অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, পচন রোগ এবং কিছু চর্মরোগ। গর্ভবতী নারীদের গর্ভস্থ শিশুর ওজন কম এবং ছোট হওয়া তামাক সেবনের আরেক জটিলতা। এ জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তামাকের প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক। তামাকজাত পণ্য থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে, তার দ্বিগুণের বেশি অর্থ তামাকজাত রোগের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করতে হয়।
বর্জন করার উপায়
অনেক ধূমপায়ীর তামাক বর্জনের সদিচ্ছা থাকলেও নেশার কারণে ছাড়তে পারেন না। তবে সদিচ্ছার সঙ্গে মানসিক শক্তি এবং দৃঢ়তা থাকলে তামাক বর্জন করা সম্ভব। এ বিষয়ে কিছু পরামর্শ রইল—
* ক্যালেন্ডারে একটি তারিখ ও সময় নির্দিষ্ট করে রাখুন এবং সেই দিন থেকে বর্জন শুরু করুন।
* পারিপার্শ্বিক পরিবেশ যেমন—বাড়ি, অফিস এবং গাড়িতে কোনো প্রকার তামাকজাত দ্রব্য রাখা যাবে না। তামাকগ্রহণকারী ব্যক্তিদের আশপাশে না যাওয়া ভালো।
* আপনার পরিবার-পরিজন, বন্ধু এবং সহকর্মীদের বলুন তারা যেন প্রতিনিয়ত তামাক ও তামাকজাতীয় দ্রব্য ছাড়ার ব্যাপারে আপনাকে উৎসাহিত করেন।
* তামাক ছাড়ার ব্যাপারে দলগত পদক্ষেপ অনেক কার্যকর। এ ক্ষেত্রে গ্রুপভিত্তিক কার্যক্রম উৎসাহ ও প্রেরণা জোগায়।
* প্রয়োজনে ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শ নিতে হবে।
* ধূমপানের ইচ্ছা হলে সে সময় মনকে অন্যদিকে সরিয়ে নিতে হবে। কারও সঙ্গে কথা বলা, হাঁটা, চলাফেরার মাধ্যমে এটা সম্ভব।
* তামাক বর্জনের ক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানোর জন্য ব্যায়াম করা, খেলাধুলা করা, বই পড়া এবং নামাজ, দোয়া, ধ্যান এবং ধর্মীয় কার্যক্রমে আত্মনিয়োগ করুন। এতে মানসিক অস্থিরতা কমে আসবে এবং তামাক ও ধূমপান বর্জনে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
* প্রচুর পানি ও বিশুদ্ধ তরল খাবার গ্রহণ করুন।
* তামাক বর্জনের প্রথম কিছুদিন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন মাথাব্যথা, বিষণ্নতা, ক্লান্তি, হতাশা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বিরক্তি, ঘুম না আসা, ক্ষুধামান্দ্য, অস্থিরতা ইত্যাদি। তবে এ সমস্যাগুলো দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করে এবং ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে তামাক ও ধূমপান বর্জন করে সুস্থ-সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করা যায়।