প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৩, ০০:০০
ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা (রুবেল) চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ (চাঁমেক)-এর ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে লেকচারার হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হিসেবে দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে কোভিড মহামারির সময় মানুষ যখন ঘরবন্দি তখন ডাঃ সুজাউদ্দৌলা (রুবেল) ফোকালপার্সন হিসেবে চাঁদপুরবাসীকে সেবা দিয়ে সকলের সুনাম কুড়িয়েছেন।
ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা (রুবেল) গতকাল ৪ জুন দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ‘চিকিৎসাঙ্গন’ বিভাগের মুখোমুখি হন। সাক্ষাৎকার নেন : আলআমিন হোসাইন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?
ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা (রুবেল) : আলহামদুলিল্লাহ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ রহমতে বেশ ভালো আছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে কোথায়?
ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা (রুবেল) : আমার শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে ঢাকায়। শৈশবের দুরন্তপনা ও স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা মনে পড়ে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা (রুবেল) : আমি ১৯৯৩ সালে ঢাকার ধনিয়াস্থ এ.কে. উচ্চ বিদ্যালয় থেকে স্টারমার্কসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে এসএসসি সম্পন্ন করি। ১৯৯৫ সালে ঢাকা কলেজ থেকে স্টারমার্কসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে এইচএসসি পাস করি। পরে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে ২০০৩ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করি। ২০০৮ সালে ২৭তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকুরিতে যোগ দিই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হওয়ার ভাবনাটি সূচনা হলো কীভাবে?
ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা (রুবেল) : ছোটবেলা থেকেই মানুষের সেবা করার প্রতি মনে ভীষণ টান অনুভব করতাম। যে কোনো প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতাম। একই সাথে আমার পরম শ্রদ্ধেয় বাবা-মায়েরও ইচ্ছে ছিলো আমি যেনো চিকিৎসক হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়াই, মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিই। মূলত সেই সূত্রেই আমার চিকিৎসক হওয়া। আমৃত্যু মানুষের সেবা করে যেতে চাই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ (চাঁমেক)-এ কর্মরত। এ বিদ্যানিকেতনটি সম্পর্কে কিছু বলুন।
ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা (রুবেল) : মানুষকে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের পাশাপাশি চিকিৎসক তৈরির সূতিকাগার হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানটি আত্মপ্রকাশ করেছে। বর্তমানে শ্রেণি কার্যক্রম চলমান। নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকায় আমাদের শ্রেণিকক্ষ সঙ্কট রয়েছে। পর্যাপ্ত শিক্ষকের প্রয়োজন আছে। যাবতীয় সঙ্কট নিরসন হলে ভবিষ্যৎ চিকিৎসক সৃষ্টিসহ চাঁদপুরবাসী উপকৃত হবেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হিসেবে প্রথম দিন এবং শিক্ষক হিসেবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলুন।
ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা (রুবেল) : মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে চিকিৎসক হিসেবে কবুল করেছেন, মানুষের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন এজন্যে আমি তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। চিকিৎসক হিসেবে প্রথম দিনের অনুভূতি ছিলো অন্যরকম। যেহেতু সবসময়ই আমার মনের বাসনা ছিলো মানুষের সেবা করা, তাই চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করার ফলে আমার সেই মনোবাসনা পূর্ণ হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকালে আমি সবসময় রোগীদের যথাযথভাবে সেবা দেয়ার চেষ্টা করেছি। মনোযোগ সহকারে রোগীদের কথা শোনে তাদের দুঃখ অনুভব করার চেষ্টা করেছি। আমি সবসময় গরিব-অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে থাকি।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি আমি চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ (চাঁমেক)-এর ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে লেকচারার হিসেবে পদোন্নতি পাই। পরে ২৪ জানুয়ারি আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পদ থেকে অব্যাহতি নিয়ে ২৫ জানুয়ারি চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে যোগ দিই। চিকিৎসক হিসেবে মানুষকে সেবা দেয়ার পর চিকিৎসক তৈরির মতো নৈতিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়ে নিজের চিকিৎসক-জীবনকে স্বার্থক মনে হয়েছে। আমি সবার কাছে দোয়াপ্রার্থী, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেনো আমাকে আমৃত্যু মানুষের সেবক এবং শিক্ষক হিসেবে সুচিকিৎসক গড়ার কারিগর হিসেবে কবুল করেন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাজীবনের একটি সুখের এবং একটি দুঃখের স্মৃতির কথা বলুন।
ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা (রুবেল) : মানুষের জন্য কিছু করলে তারা যখন অন্তর থেকে দোয়া করে, তখন খুব ভালো লাগে। একজন অসুস্থ রোগী যখন চিকিৎসাসেবা পেয়ে সুস্থতা অর্জন করে হাসিমুখে বাড়ি তখন চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে ধন্য মনে করি। অনেক রোগী একেবারে শেষ পর্যায়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এতে করে অনেক সময় রোগীকে যথাযথ চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব হয় না। এতে করে রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকের সাথে অসদাচরণ করেন। যা মোটেও ঠিক না। এক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে, একজন চিকিৎসকের জীবনের সমস্ত সাধনাই হলো রোগীদের কীভাবে সেবা প্রদানের মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা। একজন চিকিৎসক কখনোই চান না রোগীর ক্ষতি হোক। কিন্তু সঠিক সময়ে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে না আসায় ফলাফল সবসময় আশাব্যঞ্জক হয় না। এক্ষেত্রে রোগী এবং তাদের স্বজনদের আরো যত্নশীল ও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে প্রথম যে তিনটি কাজ করতেন?
ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা (রুবেল) : চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম অধিকার। আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রথমেই মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কাজ করতাম। অন্য ক্যাডারদের সাথে চিকিৎসা ক্যাডারের বৈষম্য দূর করতাম। চিকিৎসকরা যাতে নির্বিঘ্নে সেবা প্রদান করতে পারে সে ব্যবস্থা করতাম। নিরাপদ কর্মস্থল তথা চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ও আবাসিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতাম। সরকারের উচিত এসব বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা (রুবেল) : রোগমুক্ত জীবনযাপনের জন্যে মানুষকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। করোনাকালে মানুষ যেমন স্বাস্থ্য সচেতনতা বজায় রেখে জীবনযাপন করেছে সে ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। পরিমিত আহার ও পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। এখন যেহেতু গরমকাল, তাই সারাদিন ঘন ঘন পানি খেতে হবে। হালকা সুতির পোশাক পরতে হবে। সূর্যের আলো সরাসরি গায়ে লাগতে দেয়া যাবে না। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সময়ে শরীরচর্চা বা অতিরিক্ত ক্লান্তিকর কোনো কাজ না করাই ভালো। অনেকেই গরমে প্রচুর বিয়ার, সোডা বা নরম পানীয় খেয়ে ফেলেন। এতে ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। চা বা কফিও খুব বেশি খাবেন না। তার বদলে লেবুর পানি, বেলের শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। স্বাস্থ্যগত যে কোনো সমস্যায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
উল্লেখ্য, ডাঃ এএইচএম সুজাউদ্দৌলা রুবেলের জন্মস্থান বরিশাল জেলার সদর উপজেলায়। তিনি এক ছেলে সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ডাঃ সাজেদা পলিন নড়াইলের সিভিল সার্জন। তিনিও আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। এই চিকিৎসক দম্পতি করোনাযোদ্ধা হিসেবে চাঁদপুর প্রেসক্লাব, চাঁদপুর রোটারী ক্লাবসহ বিভিন্ন খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা স্বীকৃতি পেয়েছেন।