প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৩, ০০:০০
রাগ বা অ্যাঙ্গার জীবনের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর। মানুষ শত চেষ্টা করেও রাগ হতে নিজেকে দূরে রাখতে পারে না। কেননা এই নশ্বর পৃথিবীতে জাগতিক চাওয়া-পাওয়ার মধ্যেই রাগ নিহিত। মানুষ যত বেশি জাগতিক প্রাপ্তি হতে নিজেকে দূরে রাখবে তত রাগ নিয়ন্ত্রণের পক্ষে তার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। মানুষ কেনো রাগ হয় তার চিকিৎসাবিজ্ঞানসম্মত অনেক কারণ আছে।
বংশগতি
কারো কারো বংশের রক্তে ও অভ্যাসে সহিষ্ণুতার চর্চা অনেক কম। জেনেটিক বা বংশগতির কারণে অনেকে অতি অল্পতেই রেগে যায়।
শৈশবের শিক্ষা
শৈশবে কেউ যদি রাগ করাকে মন্দ বলতো এবং রাগ করার ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরতো তাহলে অনেকের রাগ করার প্রবণতা কমে যেত। পারিবারিক আবহে রাগারাগির চর্চা অত্যধিক হলেও শিশুর মধ্যে রাগ বিষয়টি জায়গা করে নেয়। আবার কেউ যদি কারও রাগকে ক্রমাগত প্রশ্রয় দিতে থাকে তবে তারও রাগের অভ্যাস তৈরি হয়।
ব্যক্তিগত জীবন
কেউ হতাশায় ভুগলে, প্রতারিত হলে কিংবা নিজেকে খুব বেশি প্রাধান্য দিলেও তার রাগের মাত্রা বেড়ে যায়। কর্মস্থলে সহযোগীদের অসহযোগিতাও ব্যক্তিকে রাগপ্রবণ করে তোলে।
লাইফস্টাইল
অনিদ্রা বা রাতজাগা, মাদকাসক্তি, ধূমপান মানুষের সহনীয়তাকে কমিয়ে দেয় এবং এর ফলে রাগ হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। বিশ্রামহীনতা ইত্যাদি ব্যক্তির রাগ বৃদ্ধির বড় কারণ।
নিজের অসামর্থ্য
কেউ কিছু করার মতো দক্ষতাহীন হলেও রাগ বাড়ে। যেমন : কোন শিক্ষককে তার দক্ষতার বাইরে কিছুর পাঠ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তার মধ্যে কৌশলগত কারণে রাগের প্রকাশ দেখা দেয়। তেমনি কর্মস্থলের সিনিয়রও নিজের দোষ ঢাকতে রাগের আশ্রয় নেয়।
রোগের কারণে রাগ
ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গেলেও রাগ বেড়ে যায়। মেনোপজ হওয়া নারীদের ক্ষেত্রেও রাগ বৃদ্ধি পায়। উচ্চরক্তচাপের কারণে রাগ বাড়ে। রক্তে চর্বির মাত্রা বৃদ্ধি পেলেও রাগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
রাগের ক্ষতিকর দিক
* রাগের কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।
* হঠাৎ রাগ হলে মস্তিষ্কের ক্ষুদ্র রক্তনালী ছিঁড়ে যায় এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক হয়।
* রাগের কারণে অনিদ্রা দেখা দেয়।
* অতিরিক্ত রাগ সুচিন্তার ব্যাঘাত ঘটায়
* অনিয়ন্ত্রিত রাগ হৃদ্পি-ের রক্ত সঞ্চালন কমিয়ে দেয় ও হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়।
* রাগ মানুষের যৌন দক্ষতা কমিয়ে দেয়।
* রাগের কারণে মুড সর্বদা খিটখিটে থাকে।
* অনিয়ন্ত্রিত রাগ মানসিক শান্তি বিনষ্ট করে।
রাগ হতে পরিত্রাণ
* মেডিটেশন বা ধ্যানের মাধ্যমে মনের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা
* প্রাণায়াম বা যোগাসনের চর্চা
* পর্যাপ্ত প্রশান্তিমূলক বিনোদন
* সুস্থ ও শান্তিময় পারিবারিক আবহ
* ভালো বই পাঠের অভ্যাস
* নিয়মিত শরীর চর্চা
* অতিরিক্ত লবণ, চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার
* অ্যালকোহল ও ধূমপান বন্ধ করা
* উপযুক্ত বিশ্রাম
* প্রয়োজনে ট্রাংকুইলাইজার সেবন
* উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
* ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রণ ও হাইপোগ্লাইসেমিয়া রোধ
* মেনোপজ হওয়া নারীদের হরমোন থেরাপি প্রদান ও কাউন্সেলিং
* রাগত অবস্থায় ভিন্ন বিষয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা এবং নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে নজর দেওয়া।
রাগ দমন করুন। রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন। খেলাধুলার চর্চা বাড়িয়ে কিংবা সর্বদা হাসিখুশি থাকার চেষ্টার মাধ্যমে নিজেকে চাপমুক্ত রাখুন। অতিরিক্ত মেধার কাজের চাপ পরিহার করুন। রাগে ভালো কিছু আসে না। রাগ নয়, জীবনের প্রতি অনুরাগ বাড়িয়ে তুলুন।