প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
আমার শৈশব-কৈশোর এবং বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে। যদিও আমার পৈত্রিক নিবাস মতলবের আশ্বিনপুর গ্রামে। বাবার চাকুরি সূত্রেই চট্টগ্রামে থাকা। তবে ঈদের সময়টায় বাড়ি আসা হতো। এক ঈদ চট্টগ্রাম, আরেক ঈদ গ্রামের বাড়িতে, এভাবেই চলতো ঈদ উদযাপন।
শৈশবের ঈদ শৈশবের মতোই রঙিন ছিল। রমজান আসার সাথে সাথেই ঈদ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হতো। নতুন পোশাক, ঈদ কার্ড, সালামি এসব নিয়ে সময় কেটে যেতো। ছোটবেলায় আব্বা-আম্মা, ভাই-বোনসহ সবাই মার্কেটে যেতাম। জামা পছন্দ করা, সাইজ মেলানো, দরদাম, সাথে এটা-ওটা বায়না করা- শৈশবের ঈদ মানেই এসব।
চাঁদরাতটা কাটতো আনন্দে। জামা-কাপড়গুলো বের করে দেখতাম, নতুন জুতো পরে ঘরেই হাঁটতাম এদিক-ওদিক। এলাকার ছেলেদের সাথে আতশবাজি ফুটানো, সন্ধ্যায় চাঁদ দেখতে বাইরে যাওয়া, হৈ-হুল্লোড়, বাবার কাছ থেকে ১০ টাকা ২০ টাকা নিয়ে একটা কোক বা সেভেন আপ খেয়ে ঈদের আনন্দ চাঁদরাত থেকেই শুরু হতো।
ঈদের সকাল থেকেই বাসায় হাকডাক। নামাজে যেতাম আমরা দুই ভাই আর আব্বা একসাথে। নামাজের আগেই একটা সেমাই কিংবা পায়েস রেডি রাখতেন আম্মা। ওই খেয়ে ঈদগাহে যেতাম জায়নামাজ নিয়ে। নামাজ ঈদ গাহে কোলাকুলি আর দুই একজন আত্মীয়ের বাসা ঘুরে এসে বাসায় ঢুকতাম।
আব্বার সরকারি চাকরির সুবাদে আমি বড় হয়েছি সরকারি কলোনীতে। শহরে বড় হলেও অনেকটা গ্রামীণ পরিবেশই ছিলো। সবাই সবাইকে চিনতো, সবার বাসায় আসা-যাওয়া ছিল। ঈদের দিন গুনে গুনে সবার বাসাতেই যেতাম।
আমি খেতে পছন্দ করি বরাবরই। যে বাসায় যেটা দিত খেয়ে ফেলতাম। না করতাম না। একবার এমন হয়েছে, দশ-বারো বাসায় গিয়েছি সব বাসাতেই কিছু না কিছু খাচ্ছি। পেট ফুলে ঢোল, তা-ও খাচ্ছি। পরে খেয়ে বাসায় ফেরার পথে মাঠের ধারে বমি করে শেষ!
গ্রামের বাডির ঈদ অন্যরকম মজা ছিলো। দাদা বাড়ি, নানা বাড়ি, চাচা, মামা, খালা, ভাই-বোন সব মিলিয়ে জমজমাট। ঈদের নামাজ শেষে ঈদগাহের পাশে স্কুল মাঠে মেলা বসতো। সেই মেলায় গিয়ে বেলুন, রঙিন পানি ভরা কাচের টিউব, আর হরেকরকমের খেলনা নিয়ে আসতাম। আর এই বাড়ি ওই বাড়ি ঘুরে সালামি নেওয়া তো ছিলোই।
চট্টগ্রাম থাকতে ঈদের আগে একবার বন্ধু-বান্ধবসহ ইফতার, আর ঈদের পরদিন কোনো বন্ধুর বাসায় সবাই মিলে একসাথ হওয়া। ভালোই কাটতো সময়গুলো।
এখনকার ঈদ অনেকটা ফর্মাল, নির্ভেজাল আনন্দের জায়গায় অনেকটা দায়িত্বও থাকে। সালামি নেয়ার জায়গা থেকে এখন দেয়ার জায়গায়। শৈশবের ঈদের মতো ঈদ আর হয়তো হবে না। তবে বড়বেলার ঈদেরও আলাদা সৌন্দর্য আছে। সরকারি চাকরির সুবাদে ছুটি এখন সোনার হরিণ। চাকুরিস্থলেই থাকি কিংবা দাদার বাড়িতে যাই ঈদ উপলক্ষে, চট্টগ্রাম যাবার সুযোগ পাই না। এখন নিজের সংসার হয়েছে, ঈদে নামাজে যাওয়ার আগে গিন্নির হাতের সেমাই খেয়ে যাই। এটাও আরেক রকমের ভালো লাগা।
পেশায় যেহেতু চিকিৎসক, আর রোগ-শোকের যেহেতু সময়-অসময় নেই, ঈদের সময়টাতেও তাই চিকিৎসার মধ্যেই থাকতে হয়। হাসপাতাল থেকে হয়তো দুই-তিন দিনের ছুটি মেলে। কিন্তু আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের টুকটাক চিকিৎসা চলেই। আর ওদিকে হাসপাতালের চিন্তাও থাকে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কলিগরা টানা ডিউটি করে হাসপাতাল সামাল দেন, তাদের কষ্টের বিনিময়ে আমরা দু-একটা দিন ঈদের আনন্দ উপভোগের সুযোগ পাই।
এবারের ঈদ প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই। তারপরেও ঈদের ঘোরাঘুরি, পাড়া বেড়ানো হবেই। তবে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। প্রচণ্ড গরমে পানিশূন্যতা যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। এক মাস রোজার পর হঠাৎ করে অতিরিক্ত তেল-মসলাদার খাবার খেলে অনেকের সমস্যা হতে পারে। ঈদের দিন তৈরি খাবার ঠিক মতো সংরক্ষণ করা দরকার। গরমে খাবার ঠিক আছে কি না সেটাও খাওয়ার আগে লক্ষ্য করা উচিত। আর বয়স্ক রোগী, ডায়াবেটিস বা হাইপ্রেসার কিংবা অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগীদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নেয়া উচিত।
ডাঃ নেসার আহমেদ : মেডিকেল অফিসার,
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল।