প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ ১ মাস সিয়াম সাধনার পর খুশির আমেজ নিয়ে আসে ঈদ। ঈদে সবাই সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য ছুটে চলে দুরদূরান্ত থেকে শিকড়ের টানে নিজ এলাকায়। সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করার উপলব্ধি করা যায় ঈদুল ফিতরে। সবচেয়ে বেশি আমেজ দেখা যায় ছোট ছেলেমেয়ে, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে। সবার নতুন জামা আর হাসিমাখা মুখ যেন জানান দেয় দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঈদ ফিরে আসা।
আমার জন্ম এবং বেড়ে উঠা গ্রামেই। শৈশব এবং কৈশোর গ্রামের বাড়িতেই কাটিয়েছি। আসলে আমি এখনো ঈদ বলতে শৈশবের ঈদকেই বুঝি। তখন ছিলাম মুক্ত স্বাধীন। এখন তো অনেক রকমের দায়িত্ব এসে ভর করছে। ঈদের আগে কয়েকদিন ঈদের জামা-কাপড় নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। ছোটবেলায় প্রতি ঈদে আব্বা আমাদের তিন ভাইয়ের জন্যে একই ডিজাইন, একই কালারের কাপড় দিয়ে সার্ট সেলাই করতে দিতেন এবং একই রকম পেন্ট কিনে দিতেন। সেলাই দোকানের ভিড়ের কারণে হোক অথবা যে কারণেই হোক নতুন জামা-কাপড় কেবল ঈদের আগের দিনই হাতে এসে পৌঁছত। এর আগে দোকানির কাছে গেলে বলতো, আজকে কেবল কাপড়টা কাটলাম; আরেকদিন গেলে বলতো, সেলাই হয়েছে কিন্তু বোতাম এখনো লাগাইনি; অন্যদিন গেলে বলতো, এখনো আয়রন করা বাকি আছে, আগামীকাল এসো। ফলে প্রতিবারই মন খারাপ করে বাড়িতে
চলে আসতাম। নির্দিষ্ট দিনে শার্ট পাওয়ার পর আস্তে করে বাড়িতে চলে আসতাম রুমের দরজা বন্ধ করে ট্রায়াল দিতাম নতুন জামা কেউ দেখে ফেললে পুরান হয়ে যাবে। ট্রায়াল দেয়া শেষ হয়ে গেলে তিন ভাই তিন মেরুতে নিয়া শার্টগুলো রাখতাম। কোনটা কার তা নিয়ে যাতে প্যাঁচ না লাগে। পরে যাতে শার্ট চিনতে সমস্যা না হয় এজন্যে যে যার সার্টের উপর নিজস্ব কিছু চিহ্ন দিয়ে রাখতাম।
চাঁদরাতে চলে যেতাম আমাদের পুরাণ বাড়িতে। ওখানে আমার জেঠাতো বোন ছিল। খুব ভালো মেহেদি দিতে পারতেন হাতে। তার কাছে গিয়ে হাতে মেহেদি লাগাতাম। ঈদের দিন সকালে নতুন জামা পরে বের হয়ে যেতাম। সবাইকে লম্বা সালাম দিতাম। যাতে কিছু সালামি পাই। তবে খুব বেশি পেতাম না। কেউ ১০ টাকা, কেউ ২০ টাকা এ রকম দিতো। বড় সালামিটা আব্বাই দিতেন ১০০ টাকার মতো। পরে আমরা তিন ভাই এবং আব্বাসহ ঈদগাহে যেতাম নামাজ পড়ার জন্য।
চিকিৎসক হওয়ার পর আমার ২০১৮ সালে রমজানের ঈদের কথা স্পেশালি বলতে হয়। আমি তখন ঢাকায় থাকতাম। ঈদে বাড়িতে আসি। হঠাৎ করে আমার এক বন্ধু ফোন দিয়ে বললো, দোস্ত আমি হাসপাতালে জব করি, ওখানে ঈদের সময় ডিউটি করার জন্য চিকিৎসক ম্যানেজ করতে পারিনি। তুমি একটু ডিউটি করতে পারবা কি না? আমার ওই বন্ধুটার বাড়ি অনেক দূর। তাই ওর জন্য মায়া হলো। পরে রাজী হয়ে যাই। ওই ঈদ আমি হাসপাতালেই কাটাই। তবে সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ দিয়েছেন আমার আব্বা। তিনি বাড়ি থেকে রান্না নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে উপস্থিত হন। অনেক আনন্দ লেগেছিলো তখন।
বর্তমানে বাড়িতে আসলে পরিচিত মানুষজন আসলে তাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করি। পরিবারকে সময় দিই। ঈদের পরেরদিন হয়তো স্কুল বন্ধুরা মিলে একটা রিইউনিয়ন করি। তবে আগের মতো অনুভূতিটা আর আসে না।
এবার প্রচণ্ড গরম পড়তেছে। হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে অনেক রোগী ভর্তি হচ্ছে। তাই এবার ঈদে অতিরিক্ত গরমে যেনো অসুস্থ হয়ে না পড়ি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় এ সময় মাথা ব্যথা, বমিভাব, শরীরে অস্বস্তি, ডায়রিয়া, অ্যালার্জি ও হিট স্ট্রোকের মতো রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ঈদে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে তা হলো : প্রখর রোদের মধ্যে বাড়ির বাইরে বের হবেন না। দ্রুত ঈদের নামাজ সেরে বাসায়ই বিশ্রাম নিবেন। বিকেলে রোদের তাপ কমে গেলে বের হতে পারেন। ঘন ঘন পানি খান। কোনোভাবেই শরীর শুকিয়ে যেতে দেবেন না। হালকা সুতির পোশাক পরুন, যাতে ঘাম হলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। ঢাকা জুতোর বদলে খোলা চপ্পল ব্যবহার করতে পারেন। বাইরে বেরোলে রোদচশমা, ছাতা অবশ্যই সঙ্গে নেবেন। সূর্যের আলো সরাসরি গায়ে লাগতে দেবেন না। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সময়ে শরীরচর্চা বা অতিরিক্ত ক্লান্তিকর কোনো কাজ না করাই ভালো। অনেকেই গরমে প্রচুর কোমলপানীয় খেয়ে ফেলেন (কোল্ড ড্রিংকস্), এতে ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। চা বা কফিও খুব বেশি খাবেন না। তার বদলে স্যালাইন, লেবুর পানি, বেলের শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। খেয়াল রাখবেন সারা দিনের খাবারে যেন বেশি প্রোটিন থাকে। বাসি খাবার খাবেন না। শিশু বা পোষ্যদের বন্ধ গাড়িতে রেখে কোথাও যাবেন না। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়বে তারা। খুব বেশিক্ষণ বন্ধ গাড়িতে থাকলে গরমে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। অসুস্থতা অনুভব করলে সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম : সহকারী রেজিস্ট্রার (মেডিসিন), ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল।